
সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যায় বহুল আলোচিত ওসি প্রদীপ আর পরিদর্শক লিয়াকত মিলে রাজ করেছেন কক্সবাজারের টেকনাফ। দুজনের বোঝাপড়ায় হত্যাসহ নানা অপকর্ম করে গেছেন অবলীলায়। সেই হরিহর আত্মা এখন আর নেই তাদের। মামলায় ফেঁসে যাওয়ার পর থেকেই পরস্পর চক্ষুশূল তারা। সেটির জের চলছে কারাগারেও।
আদালতের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলী আছেন কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারের ছোট কক্ষে। কিন্তু তাদের দ্বন্দ্ব এমনই যে, দুজনকে রাখা হয়েছে দুই ভবনে। কারাগারে তারা পরস্পরকে আঘাতের চেষ্টা করেছেন একাধিকবার- এমনই তথ্য জানা গেছে কারাগার সূত্রে।
কারা কর্তৃপক্ষ মনে করে, প্রদীপ ও লিয়াকতের আচরণ আর বিতণ্ডায় মনে হয়েছে সিনহা হত্যার পরই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু। আদালতের রায়ের পর বিবাদ বেড়েছে আরও। মেজর সিনহা হত্যা মামলা চলাকালে কারাগারে ডিভিশন পেয়েছিলেন ওসি প্রদীপ। তবে রায়ের পর বিশেষ নিরাপত্তায় একটি নির্জন কক্ষে জায়গা হয় একসময়ের দাপুটে কর্মকর্তাটির। সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার আওতায় সেলটি থেকে দিনে দুবার এক ঘণ্টার জন্য বাইরে আসার সুযোগ পান তিনি। সপ্তাহে দশ মিনিট কথা বলতে পারেন ফোনে। মাসে একবার স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ থাকলেও কাউকে প্রদীপের কাছে আসতে দেখা যায়নি- বলছিলেন কারা সূত্র।
সিনহা হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার দায়ে প্রদীপ কুমার ছাড়াও বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলীকেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
মামলায় লিয়াকত আলীর জবানবন্দি মতে, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে মেজর সিনহাকে প্রথমে গুলি করেন লিয়াকত আলী। পরে ওসি প্রদীপ এসে আহত সিনহাকে দুই রাউন্ড গুলি করে নিশ্চিত করেন মৃত্যু। মূলত এই জবানবন্দির কারণেই তিনি ফেঁসে গেছেন বলে ওসি প্রদীপের বিশ্বাস।
এই দুই সাবেক পুলিশ সদস্য সম্পর্কে একজন কারা কর্মকর্তা বলেন, প্রদীপ-লিয়াকতের মনোমালিন্য আর দ্বন্দ্ব কারাগারের ভেতরে প্রকাশ্য। কোনো ধরনের সংঘর্ষে যাতে জড়িয়ে না যায়, সে জন্য আলাদা ভবনে রাখা হয় দুজনকে। দেশজুড়ে আলোচিত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের সুবাদেই প্রদীপের ওপর বিশেষ নজরদারি জারি রাখছে কারা কর্তৃপক্ষ। প্রদীপের ভবনে আটক আছেন অনেক রাজনীতিবিদ। তল্লাশি ছাড়া কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। সাধারণ বন্দিরা যেতে পারেন না প্রদীপের কক্ষের আশপাশে।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারে এক হাজার সিঙ্গেল সেল রয়েছে। সেখানে কনডেম সেল বলতে আলাদা কিছু নেই। ক্ষেত্রবিশেষ সেলগুলোতে এক বা একাধিক আসামি রাখা হয়। আমাসির ধরন বুঝে এগুলো ঠিক করা হয়। বর্তমানে কারাগারটিতে ২ হাজার ৩০০ বন্দি রয়েছেন।
ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত গ্রেপ্তারের পর কারাগারে ডিভিশন সুবিধা পেয়েছিলেন। তবে আদালত থেকে সাজা হওয়ার পর তা বাতিল হয়ে যায়। কারাগারে প্রদীপ কোনোভাবে অনৈতিক সুবিধা নিতে না পারেন একারণে সার্বক্ষণিক তাকে সিসিটিভির আওতায় রাখা হয়েছে। অন্যদিকে পরিদর্শক লিয়াকতকে অন্য একটি সেলে রাখা হয়েছে। যেখানে আরও দুইজন আসামি রয়েছেন। সর্বত্র লিয়াকতকেও নজরদারিতে রাখা হয়; তবে ওসি প্রদীপের ক্ষেত্রে সতর্কতা বেশি রয়েছে।
জানা গেছে, জেল কোড অনুযায়ী ডিভিশন পাওয়া আসামিরা কারাগারে একটি বেড, চেয়ার-টেবিল, পত্রিকা, ফ্যান পেয়ে থাকেন। নিজে থেকে টাকা দিলে টিভি সুবিধা (বিটিভি দেখার সুযোগ) পান। পাশাপাশি খাবারের মেন্যুটা আলাদা থাকে। আর যারা ডিভিশন সুবিধার বাইরে তাদের সবাইকে ফ্লোরে বিছানা করে দেওয়া হয়।