
নগরীর সুবিদবাজারে ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে দু’পক্ষের লড়াই চলছে। হয়েছে একের পর এক মামলাও। আর এই সুযোগে সম্পত্তি দখলে রেখেছেন একজন। তিনি ইশফাক আহমদ। বর্তমানে সম্পত্তি দখলে রেখে ভাড়ার কোটি কোটি টাকা আত্মসাতও করছেন। পিবিআইয়ের তদন্তে আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর তিনি উল্টো স্বজনদের বিরুদ্ধে দিয়েছেন চাঁদাবাজি মামলা। এ নিয়ে উভয়পক্ষের কেয়ারটেকাররাও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে মামলা, পাল্টা মামলা দিচ্ছেন। নগরের সুবিদবাজারে ওই সম্পত্তির ওপর বসতবাড়ি, দোকানকোটা ও একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট রয়েছে। বাড়িটির মূল মালিক ডা. আক্তার উদ্দিন। তার তিন ছেলে- কামাল আহমদ, তৌফিক আহমদ ও শফিক আহমদ। তিন ছেলে ছাড়া চার মেয়েও ওই সম্পত্তির মালিক। ইশরাক আহমদ মৃত শফিক আহমদের ছেলে। মোট সম্পত্তি ১৪৮ শতক। এর মধ্যে জীবদ্দশায় শফিক আহমদ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তার প্রাপ্ত অংশের বেশি সম্পত্তি ৩৪ শতক বিক্রি করে দিয়েছিলেন। হিসেব বলছে, ইশফাক আহমদের পিতা শফিক আহমদ মোট সম্পত্তির ২৯ দশমিক ৬ অংশের মালিক। তিনি আরও ৫ শতক ভূমি অতিরিক্ত বিক্রি করে দেন।
গত ২রা ফেব্রুয়ারি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে কামাল আহমদ ও ২রা জুন সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবর কামাল আহমদের কেয়ারটেকার আনোয়ার হোসেনের দেয়া দু’টি অভিযোগে জানা যায়, প্রবাসী জাহানারা তানভির রশিদ, শাহনেওয়াজ আহমদ, দেশে অবস্থান করা আজগরি জামান, সুফিয়া বেগম, হাসিনা আহমদ, প্রবাসী তানভির আহমদ, ছামরিনা আহমদ, তাহুরা আহমদ ভূমির প্রকৃত মালিক। ভূমির অন্য সব মালিক ঢাকা ও দেশের বাইরে অবস্থান করায় কামাল আহমদকে আমোক্তার প্রদান করেছেন। কামাল আহমদ স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা। বর্তমানে ৮৫ বছর বয়সী বয়োবৃদ্ধ। বসবাস করেন ঢাকায়। কামাল আহমদ তার অভিযোগে উল্লেখ করেন- তার আপন ভাই শফিক আহমদের ছেলে ইশফাক আহমদ বর্তমানে তাদের সব সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। ইশফাকের কেয়ারটেকার মামুনুর রশীদ ও শাহীন আহমদ সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সেখানে মহড়া দিয়ে ওই ভূমি দখলে রেখেছে। তাদের বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এই অবস্থায় তিনি ২০২২ সালে সম্পত্তি থেকে ভাড়া উত্তোলনের প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাতের একটি মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে পিবিআইয়ের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে ইশফাক আহমদ ও সহযোগীরা ওই টাকা আত্মসাৎ করেছে। পরে আদালত ইশফাকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে তিনি জামিন নিয়েছেন। জামিনপ্রাপ্ত হয়ে ইশফাক ওই ভূমি বিক্রির পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন। পরে তিনি এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছিলেন। এসব অভিযোগ দাখিলের পর ইশফাক আহমদ ও তার সহযোগী কেয়ারটেকার শাহীন আহমদ ও মামুনুর রশীদ সন্ত্রাসীদের নিয়ে ভয়ের সৃষ্টি করে। এমনকি তার কেয়ারটেকার আনোয়ার হোসেনকেও হুমকি দেয়। কামাল আহমদ জানান, তাদের পিতা ডা. আক্তার উদ্দিন আহমদ জীবদ্দশায় দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা তার সব সম্পত্তি বাটোয়ারা করে যান। কেবলমাত্র তার সুবিদবাজারের ওই বাড়ি সবার জন্য রেখে যান। তার ভাই শফিক আহমদ জীবিত থাকা অবস্থায় সম্পত্তি নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার ছেলে ইশফাক আহমদ গোটা সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে; ২০০১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত একাই ভূমি দখলে নিয়ে সে ভাড়ার সব টাকা আত্মসাৎ করছে। তিনি জানান, ওই ভূমি দখলে নিতে ইশফাকের তরফ থেকে একটি বাটোয়ারা মামলা করে রেখেছিল। ওই মামলা আদালতে এখনো নিষ্পত্তি না হওয়ায় সে কৌশলে গোটা সম্পত্তি দখলে রেখেছে। বর্তমান বিএস জরিপে ইশফাককে মাত্র ৬ শতকের মালিকানা দিয়েছে। অথচ সে গোটা ১১৪ শতক নিজের দখলে রেখেই ভাড়া তুলে নিচ্ছে। গেল কয়েক বছরে সিলেটের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি সমাধানের জন্য একাধিকবার বৈঠক করলেও নানা টালবাহানায় ইশফাক ওই সব বৈঠক ভণ্ডুুল করে দেয়। এদিকে, সিলেটের ওই ভূমি নিয়ে ইতিমধ্যে আদালতে ও থানায় কমপক্ষে ১০টি মামলা করা হয়েছে। একাধিক অভিযোগ দেয়া হয়েছে বিভিন্ন দপ্তরে। সম্প্রতি পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে অভিযোগ দায়েরের পর ইশফাক আহমদ আদালতে আরেকটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় তিনি অভিযুক্ত করেছেন কামাল আহমদ, নাবিল আহমদ, আনোয়ার হোসেন সহ ১৩ জনকে। মামলার প্রকৃত মালিক ও কেয়ারটেকারের বিরুদ্ধে তিনি ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ তোলেন।
আদালতের নির্দেশে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ওই অভিযোগে ইশফাক আহমদ উল্লেখ করেছেন, গত ২০১৯ সালের ২৮শে জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ১লা মে পর্যন্ত বিভিন্ন সময় বাদীর কেয়ারটেকার মামুনুর রশীদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই অভিযোগে তিনি জানান, অপরাপর ভূমি সহ ওই ভূমিতে সিলেটের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বাটোয়ারা মোকদ্দমা থাকায় স্থিতাবস্থার আদেশ রয়েছে। মামলায় তিনি দাবি করেন, আইনগতভাবে তফশিল বর্ণিত ভূমি বাটোয়ারা না থাকায় নামজারি করার কোনো অবকাশ নেই। এ ব্যাপারে ইশফাক আহমদের সঙ্গে কথা বলতে ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। কামাল আহমদের কেয়ারটেকার আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, কামাল আহমদের পক্ষ থেকে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা দায়ের করা হলে সেটি প্রমাণিত হয়েছে। তদন্তের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন ইশফাক আহমদ নিজেই। এখন যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে তারা হাই প্রোফাইল মানুষ। ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করবেন সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। সুতরাং বাটোয়ারা মামলা এবং পরবর্তীতে একের পর এক মামলা দায়ের করে ইশফাক আহমদ প্রতি মাসে সম্পত্তি থেকে ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত সব টাকা একাই আত্মসাৎ করছেন। আর এই আত্মসাতের ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি বর্তমানে চাঁদাবাজির মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে দাবি করেন তিনি।