Image description

ইরানের রাজধানী তেহরানে থাকা প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। এদের মধ্যে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে শ’খানেক বাংলাদেশিকে স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি দূতাবাসের কূটনীতিকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের কাজ চলছে।

গতকাল সেগুনবাগিচায় ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ভারপ্রাপ্ত পরররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী। সচিবের ভাষ্য মতে, তেহরানে ভীতিকর অবস্থায় রয়েছেন বাংলাদেশিরা। নিরাপদ স্থানে তাদের সরিয়ে নেয়াও চ্যালেঞ্জিং। ইরানে ২ হাজারের বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এদের মধ্যে যারা তেহরানে আছেন তাদের নিয়ে আমরা বেশি উদ্বিগ্ন। এই সংখ্যাটা ৪০০ হবে। তারাই হামলায় সবেচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় আছেন।

সচিব জানান, আতঙ্কগ্রস্ত বাংলাদেশিদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দূতাবাসকে। তেহরান ছাড়াও আশপাশের দেশের শহরগুলোতে খোঁজখবর রাখছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস। সেই সব এলাকায় থাকা বাংলাদেশিদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান, অচিরেই যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের উদ্যোগ চায় বাংলাদেশ। ঢাকায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশিদের জন্য ইরান ত্যাগ করা কঠিন। নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকাও পাঠানো যাচ্ছে না। 

রেডিও ভবনে হামলা, প্রাণে বাঁচলেন ৮ বাংলাদেশি: এদিকে ইরানের রেডিও’র প্রধান দপ্তরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন ৮ বাংলাদেশি। তারা হামলার সময় ওই ভবনেই ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব জানান, ওই হামলায় তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তারা ভালো আছেন। তারা সম্ভবত তেহরান রেডিও’র বাংলা বিভাগে কাজ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দু’জন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আটজন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন। তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এ ছাড়া, ২৮ জন বাংলাদেশির গত ১৩ই জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েছেন। সবমিলিয়ে তেহরানে ৪০০ বাংলাদেশি রয়েছেন। ইরানের অন্যান্য জায়গায় প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সে দেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তারা স্থায়ী। এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন সেক্টরে চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। প্রায় ২০০-এর মতো শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এ ছাড়া, মানব পাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সবসময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়। ইরানে থাকা সব বাংলাদেশির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলো সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দূতাবাসের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের জীবনের ঝুঁকি থাকায় তিনি সোমবার (১৬ই জুন) রাতে নিজের বাসভবন ছেড়ে আরেকটি নিরাপদ জায়গায় ছিলেন। 

সচিব বলেন, সবার নিরাপত্তাই জরুরি। যারা আতঙ্কে আছেন তাদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ জন্য  বাড়তি অর্থের প্রয়োজন। সেই অর্থ পাঠানোর চেষ্টা করছি। দূতাবাসে যে তহবিল আছে, সেটি দিয়ে ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। চ্যান্সারি ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দূতাবাসের কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এখনকার সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তেহরান থেকে যতটুকু দূরত্বে গেলে নিরাপদে থাকা যাবে, তারা যেন ততটুকু দূরত্বে গিয়ে থাকেন। অর্থাৎ নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া। সচিব বলেন,  যেহেতু বিমান চলাচল বন্ধ। তাই এ মুহূর্তে ইরান ত্যাগ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। স্থলপথে হয়তো কষ্ট করে তেহরান ত্যাগ করা সম্ভব। কিন্তু সেটিও নিরাপদ নয়। এ কারণে আমরা তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছি। এই নির্দেশনা কার্যকর করতেও সময় লাগবে। রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, সবাইকে একসঙ্গে রাখার মতো একটি জায়গা পাওয়া সম্ভব নয়। তাদের বিভিন্ন জায়গায় রাখতে হবে। সবাইকে একসঙ্গে সরিয়ে নেয়াও যাবে না। তাছাড়া সব মিলিয়ে সেখানে একটি যুদ্ধাবস্থা বিদ্যমান। ইরানে বেশ কিছু সংখ্যক ভারতীয় নাগরিক আছেন। ভারত তাদের নাগরিকদের তেহরান থেকে সরিয়ে ইরানের ভেতরে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছে। ভারতীয়দের একটি সুবিধা হচ্ছে- তাদের ব্যাংকিং চ্যানেলের অসুবিধা নেই। পাকিস্তানি নাগরিকরা ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে নিজ দেশে যেতে পারবে। ওই সীমান্ত খোলা আছে বলে তিনি জানান।