Image description

যোগসাজশ করে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে প্রায় ২৫৭ কোটি টাকা আত্মসাতের সঙ্গে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান জড়িত বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, তিনটি কোম্পানির শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগ কার্যক্রমে মার্কেট ম্যানিপুলেট করা হয়েছে। মার্কেট ম্যানিপুলেশনের সঙ্গে সাকিব জড়িত। সাকিবসহ আরও ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সম্পর্কিত প্রচলিত আইন ও বিধান—যেমন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। তারা নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টসমূহে অসাধু, অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে ফাটকা ব্যবসার মত ধারাবাহিক লেনদেন, প্রতারণামূলক সক্রিয় লেনদেন, ফাটকা ও অনুমাননির্ভর লেনদেনের মাধ্যমে বাজারে কারসাজি করত। তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্র গঠন করে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ারে ধারাবাহিকভাবে ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে দাম বৃদ্ধি করে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সেই শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করত। এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন এবং চক্রটি ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকারও বেশি আত্মসাৎ করে, যা অস্বাভাবিক মূলধন লাভ হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে ছিল অপরাধলব্ধ অর্থ।

মহাপরিচালক আরও জানান, মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) শেয়ারবাজার থেকে তোলা অর্থ থেকে ২৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ টাকা তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের সহায়তায় বিভিন্ন খাতে স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেন। হিরুর নামে থাকা ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২টাকার ‘অস্বাভাবিক, অযৌক্তিক এবং সন্দেহজনক’ লেনদেন হয়েছে। হিরুর কারসাজি করা প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এবং সোনালি পেপারস লিমিটেডের শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করেন।

তিনি আরও জানান, এতে তিনি মার্কেট ম্যানিপুলেশনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওই কারসাজিকৃত শেয়ারে বিনিয়োগে প্রতারণার মাধ্যমে প্রলুব্ধ করে তাদের ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অপরাধলব্ধ আয় হিসেবে শেয়ার বাজার হতে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেন। এই প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দরে কারসাজির অভিযোগেই গত সেপ্টেম্বরে সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।সে সময় আবুল খায়ের ওরফে হিরুকে ২৫ লাখ টাকা, ইশাল কমিউনিকেশন লিমিটেডকে ৭৫ লাখ টাকা, মোনার্ক মার্ট লিমিটেডকে এক লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবরকে ১০ লাখ টাকা, লাভা ইলেক্ট্রোড ইন্ডাস্ট্রিজকে এক লাখ টাকা এবং জাহেদ কামালকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছিল বিএসইসি।

এই কারসাজির সঙ্গে কোন রাঘব বোয়াল জড়িত কী-না এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, দুদক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। তদন্ত অব্যাহত আছে। তদন্তে বের হয়ে আসবে আর কারা সব জড়িত এই কেলেঙ্কারিতে।

দুদক জানায়,আরো ১৪ জন আসামিরা হলেন, সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মো. আবুল খায়ের ওরফে হিরু, কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কণিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজি ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, মো. জাহেদ কামাল, মো. হুমায়ুন কবির ও তানভির নিজাম। ইতিমধ্যে দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।