Image description

তেল আবিবে অবস্থিত ইসরাইলি বাহিনীর সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘আমান’ ও সন্ত্রাসী অভিযানের পরিকল্পনাকারী সংস্থা মোসাদের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার এসব কার্যালয়ে বর্তমানে আগুন জ্বলছে। তেহরানভিত্তিক তাসনিম বার্তা সংস্থার বরাতে জানা গেছে, সোমবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে আইআরজিসি বলেছে, তারা ইসরাইলের একটি সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং মোসাদের একটি পরিকল্পনা পরিচালনাকেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

আইআরজিসি’র বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলা ছিল আমাদের শহীদদের রক্তের বদলা ও ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাব। আমরা এমন সব ঘাঁটি লক্ষ করেছি যেখান থেকে ইরানের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর আগে ইসরাইলের নিজস্ব গণমাধ্যমে জানানো হয়, দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর হেরজলিয়ায় একটি ‘সংবেদনশীল স্থান’ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণত ‘সংবেদনশীল স্থান’ বলতে ইসরাইল সরকার সামরিক বা কৌশলগত স্থাপনাকে বোঝায়। বর্তমানে ইরান-ইসরাইল সংঘাত দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে এবং দু’টি পক্ষই সরাসরি একে অপরের মূল ঘাঁটিগুলো লক্ষ করে হামলার ঘোষণা দিচ্ছে। এতে করে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে বলে সতর্ক করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে ইরানের মিসাইল হামলায় এখন ঠিক গাজার প্রতিচ্ছবিই দেখা যাচ্ছে ইসরাইলে। রাজধানী তেল আবিবসহ ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে বাট ইয়াম, পেতাহ টিকভা, রামাত গান, হাইফাসহ বড় শহরগুলো। ইরানের মুহুর্মুহু এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৫০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে। আর আহতের সংখ্যা এক হাজারের বেশি বলেও দাবি করা হচ্ছে। তবে নির্ভরযোগ্য কিছু সূত্র বলছে নিহতের এই সংখ্যা কোনোভাবেই ৫০০ এর কম নয়। আর আহতের সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে ৪ হাজারের বেশি।

ইরানের এসব ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাজধানী তেল আবিব, বাট ইয়াম, পেতাহ টিকভা, রামাত গান, হাইফাসহ বড় শহরগুলোতে বহু আবাসন ধ্বংস হয়েছে। আর বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। রীতিমতো এখন হাসপাতালের নিচে গিয়ে ঠাঁই নিতে হচ্ছে ইসরাইলিদের। যা মনে করিয়ে দেয় গাজার সেই অসহায় মুসলমানদের হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়ার কথা। হাসপাতালে ঠাঁই নিয়েও সেদিন ইসরাইলের মিসাইলের আঘাত থেকে বাঁচতে পারেনি ফিলিস্তিনিরা।

হামলাকারী ইসরাইলকেই সমর্থন জি-৭ জোটের : ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাতে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন জি-৭ জোটের নেতারা। তারা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার উৎস হিসেবে ইরানকে দায়ী করেছেন। সোমবার রাতে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে জি-৭ জোটের নেতারা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনারও আহ্বান জানিয়েছেন। জি-৭ সম্মেলন শেষে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আর ইরান হলো সন্ত্রাসবাদের উৎস। ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত নয়। মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতার বিস্তার রোধে সংকট নিরসনের আহ্বানও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

অতিসত্বর তেহরান খালি করতে বললেন ট্রাম্প : ইরানের রাজধানী তেহরানের বাসিন্দাদের হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প এ হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, সবার অতিসত্বর তেহরান ছেড়ে যাওয়া উচিত। তবে কেন সবার তেহরান ত্যাগ করতে হবে- তা নিয়ে স্পট করে কিছু বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। স্থানীয় সময় সোমবার ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে আরও লিখেছেন, ইরানকে যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বলেছিলাম তাতে তাদের স্বাক্ষর করা উচিত ছিল। কি লজ্জা এবং প্রাণের অপচয়! সহজভাবে বলতে গেলে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না। আমি বারবার বলেছি! ট্রাম্প পোস্টে আরও বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে সবাইকে তেহরান খালি করতে হবে।

ইসরাইলের হামলায় ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ চীন : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গতকাল বলেছেন, তিনি ইরানের ওপর ইসরাইলের সামরিক হামলা দেখে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। একই সঙ্গে চীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ উত্তেজনার মধ্যে ‘আগুনে ঘি ঢালার’ অভিযোগ এনেছে।

‘ভয়াবহ পরিণতি’র হুঁশিয়ারি কাতারের : ইরানে ইসরাইলি হামলার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কাতার। চলমান ইরান-ইসরাইল সংঘাতের মধ্যে কাতারের রাজধানী দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই আশঙ্কার কথা বলেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি। এ সময় তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলি হামলার কড়া নিন্দা জানান। পাশাপাশি আঞ্চলিক শান্তি ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে সহিংসতার পথ পরিহারের আহ্বান জানান তিনি।

ইরাকের রাস্তায় ইরানের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল : প্রতিবেশী দেশ ইরাকের রাজধানী বাগদাদের রাস্তায় ইরানের সমর্থনে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজিত হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলের পতাকা পুড়িয়ে ও ইসরাইলি হামলায় নিহত ইরানি সামরিক কমান্ডারদের ছবি প্রদর্শন করে প্রতিবাদ জানায়।

ইরানের পক্ষে ২১ মুসলিম দেশ : ইরানে ইসরাইলি হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এ অবস্থায় ইসরাইলের বিপক্ষে গিয়ে ইরানের পক্ষ নিয়েছে ২১ মুসলিম দেশ। মিসরের নেতৃত্বে এই গ্রুপটি ইসরাইলের ইরানের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে উত্তেজনা হ্রাস ও মধ্যপ্রাচ্যের সবার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণেরও আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো। গ্রুপটিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো- আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রুনাই, চাদ, কোমোরোস, জিবুতি, মিসর, গাম্বিয়া, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, মৌরিতানিয়া, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সউদী আরব, সুদান, সোমালিয়া, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। সূত্র : আল-জাজিরা, ইরনা, রয়টার্স।