Image description

ইরানে কর্মরত বাংলাদেশিরা মোটামুটি নিরাপদ। তবে ইসরাইলি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু তথা টার্গেটের মধ্যে পড়ে গেছে তেহরানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের চ্যান্সারি কমপ্লেক্স। অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনায় পাঠানো দূতাবাসের একটি রিপোর্ট হাতে পেয়েছে মানবজমিন। রিপোর্টে বলা হয়- বাংলাদেশ মিশন বিল্ডিংয়ের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইরানের একটি পরমাণু কেন্দ্রসহ কমপক্ষে দু’টি সংবেদশনশীল স্থাপনা রয়েছে, যাতে হামলার ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে ইসরাইল। ফলে বাংলাদেশ মিশন, আশপাশে বসবাসরত কূটনীতিক-স্টাফ এবং তাদের পরিবারের জীবন ও সম্পদ ঝুঁকিতে। তারা এক সেকেন্ডের জন্যও নিরাপদ নয়। সম্ভাব্য হামলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আতঙ্কের মধ্য দিনাতিপাতকারী ওই সব কূটনীতিক ও স্টাফদের পরিবারকে শহরের ৩০-৪০ কিলোমিটার বাইরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই মিশনে কর্মরতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে বলে রাতে ওই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তেহরানের বাইরে উপযুক্ত নিরাপদ আবাসস্থল খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন তেহরানের বাংলাদশ মিশনের পদস্থ এক কর্মকর্তা।

সেগুনবাগিচা এবং তেহরান মিশন জানিয়েছে- দেশটিতে থাকা প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশির প্রায় সকলে এখন পর্যন্ত মোটামুটি নিরাপদে রয়েছেন। কারণ তাদের প্রায় সবাই তেহরানের বাইরে চলে গেছেন। ইসরাইল তেহরানকে টার্গেট করেছে এবং স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোকে নিখুঁত নিশানা করা হয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরাইল সেনাবাহিনী তেহরান খালি করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছে এটাকে তারা বৈরুত বানাবে। তেহরান মিশন বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি একটি ভবনে বাংলাদেশি একজন কর্মকর্তা পরিবার নিয়ে থাকেন। মাল্টিস্টোরেজ ওই বিল্ডিংয়ে ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ২৩টি ফ্ল্যাট এরই মধ্যে খালি হয়ে গেছে। কেবলমাত্র ওই বাংলাদেশির পরিবার এখনো রয়েছেন বলে জানান ওই বাংলাদেশি কূটনীতিক। তবে তিনি জানান, যত দ্রুত সম্ভব তাকে পরিবারসহ শহরের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। ইরান পরিস্থিতি সরকার পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে সেগুনবাগিচা বলছে- প্রয়োজনে দূতাবাসের কার্যক্রমও অন্যত্র স্থানান্তর করার চিন্তাভাবনা চলছে। তেহরান মিশনের পাঠানো অপর এক রিপোর্টের বরাতে সেগুনবাগিচার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা মানবজমিনকে বলেন- রিপোর্ট যা পাওয়া যাচ্ছে তাতে চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স মোটেও নিরাপদ নয়। ওই ভবনের এক কিলোমিটারের মধ্যে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের অবস্থান। তাছাড়া সেখানে আরও একটি সংবেদনশীল অবকাঠামো রয়েছে। যা ইসরাইলি হামলার সম্ভাব্য টার্গেট। গত ক’দিনে এসব ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, তেহরানের প্রধান দুটি আইটি সেন্টারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেন্টারটি বাংলাদেশ চ্যান্সেরির খুব কাছাকাছি অবস্থিত। ওই অবকাঠামোতেও যেকোনো সময় হামলার আশঙ্কা রয়েছে। 

তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা: এদিকে ইরানে থাকা  কোনো বাংলাদেশি ঝুঁকিতে পড়লে তাকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এমনটাই জানিয়েছে সেগুনবাগিচা। বলা হয়েছে- ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্রের বড় একটি লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে তেহরান এবং সেখানেই বাংলাদেশ দূতাবাসের অবস্থান। এ ছাড়া কিছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী তেহরানে অবস্থান করছেন। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রদূত, দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাদের পরিবারসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের তেহরানের বাইরে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের তৃতীয় দেশে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে নিরাপত্তা। তেহরানে থাকা বিপজ্জনক হলে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়াই সঙ্গত। তিনি বলেন, তেহরানের অবস্থা বুঝে দূতাবাস এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। উল্লেখ্য, ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দুজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আট জন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন। তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এ ছাড়া ২৮ জন বাংলাদেশির গত ১৩ই জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েছেন। সব মিলিয়ে তেহরানে শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে রিপোর্ট পেয়েছে ঢাকা। ইরানের অন্যান্য জায়গায় প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সে দেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তারা স্থায়ী হয়েছেন। এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন সেক্টরে চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। প্রায় ২০০-এর মতো শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এ ছাড়া মানব পাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সবসময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন সেবা চালু করা হয়েছে। রোববার ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে  বলা হয়, ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস ইমারজেন্সি হটলাইন স্থাপন করেছে। এ ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের + ৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও + ৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫ নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপ সহ) যোগাযোগ করতে পারেন।