Image description

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যে থাকেন। বাংলাদেশে তিনি আয়কর নথিতে মাছের খামার থেকে বার্ষিক ৯ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। এ তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর তার মাছের খামার নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাংলাদেশের কোথায় তিনি মাছ চাষ করেন, তার সন্ধান পায়নি কেউ।

এনবিআর ও দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নে মৎস্য খাত থেকে টিউলিপ আয় দেখান ৯ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর ওই রিটার্ন জমা দেন তিনি। তার আয়কর নথি রয়েছে কর অঞ্চল-৬-এর আওতায় সার্কেল-১২২-এ। কাগজপত্রে তার নাম লেখা আছে রিজওয়ানা টিউলিপ সিদ্দিক এবং ঠিকানা দেওয়া আছে বাড়ি নম্বর-১৩, সড়ক-৭, গুলশান-১, ঢাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন বছর দাখিল করা আয়কর রিটার্নে তিনি অন্তত চারটি ঠিকানা ব্যবহার করেন।

কর নথি অনুযায়ী টিউলিপের মাছের খামারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, অনেকেই কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য অস্তিত্বহীন মাছের খামার থেকে আয় দেখান। টিউলিপও তাই করেছেন। আইন অনুযায়ী মৎস্য খাত থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। এ কারণে কর রেয়াত পাওয়ার জন্য এ অনৈতিক সুবিধা নেন অনেকে। যারা নথিতে এমনটা দেখান, তারা তাদের মাছের খামারের অবস্থান, বর্ণনা, হিসাব-নিকাশ কিছুই উল্লেখ করেন না।

একজন অভিজ্ঞ আয়কর কর্মকর্তা টিউলিপের মাছের খামার ও মাছ ব্যবসার অলীক প্রসঙ্গ নিয়ে বলতে গিয়ে ঘটনাটিকে বাংলার ইতিহাস-সম্পর্কিত ‘মাৎস্যন্যায়’ শব্দটির সঙ্গে তুলনা করেন। মাৎস্যন্যায় শব্দটি রাজা শশাঙ্ক ও পাল রাজবংশের অন্তর্বর্তী অরাজকতার কালকে নির্দেশ করে। এটি হচ্ছে বড় মাছের ইচ্ছামতো ছোট মাছ গিলে ফেলার ন্যায্যতা।

ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনাও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনি হলফনামায় মাছের খামারের আয় দেখিয়েছিলেন। তার আয় টিউলিপের চেয়েও কম ছিল। এ খাতে তিনি আয় দেখিছিলেন সাড়ে চার লাখ টাকা। শেখ হাসিনা মাছের খামার থেকে আয় দেখালেও স্থাবর সম্পত্তিতে মাছের খামার কোথায় অবস্থিত সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য হলফনামায় ছিল না। তবে তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে যে হলফনামা দিয়েছিলেন, সেখানে মৎস্য খাতের কোনো আয় দেখাননি।

‘আমি বাংলাদেশি নই, আমি একজন ব্রিটিশ এমপি’Ñ২০১৭ সালে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ দাবি করেছিলেন টিউলিপ। তবে সরকারি নথি বলছে, তিনি বাংলাদেশি নাগরিক। তার বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), পাসপোর্ট এবং কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) রয়েছে। তবে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা, টিউলিপসহ তাদের পরিবারের ১০ জনের এনআইডি সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন লক করে দেয়। বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে অস্বীকৃতি জানানো টিউলিপ বিভিন্ন করবর্ষে বাংলাদেশে আয়কর রিটার্নও দাখিল করেন।

এদিকে আয়কর নথিতে টিউলিপ গুলশানের একটি বাসার ঠিকানা দিলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে খালা শেখ হাসিনার ধানমন্ডির বাসা ‘সুধা সদন’-এর ঠিকানা উল্লেখ করেন।

টিউলিপকে আবার তলব করল দুদক

দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগে টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার তলব করেছে দুদক। গতকাল রোববার এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। অবৈধভাবে ফ্ল্যাট নেওয়ার মামলায় ঢাকার পাঁচ ঠিকানায় এ চিঠি পাঠানো হয়। এর আগে টিউলিপ সিদ্দিককে গত ১৪ মে তলব করেছিল দুদক। তখন তিনি হাজির হননি। তাকে আবার তলব করা হয়েছে। চিঠিতে টিউলিপকে আগামী ২২ জুন দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে।

রাজধানীর গুলশান-২-এর ১১ নম্বর সড়কে অবৈধভাবে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে ফ্ল্যাট নেওয়ার মামলায় গত মে মাসে টিউলিপকে তলব করে চিঠি দেয় দুদক। সংস্থাটির দাবি, টিউলিপ সিদ্দিক চিঠি পাচ্ছেন না বলে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ করছেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু টিউলিপ চিঠি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন, সেহেতু আগে যেসব ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়েছিল সেগুলোসহ নতুন করে আরো দুই ঠিকানায় (মোট পাঁচ ঠিকানা) চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীতে টিউলিপের পাঁচটি ঠিকানায় ২২ জুন তলব করে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। সংশ্লিষ্ট থানা, রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এবং সরাসরি দুদক কর্মকর্তারা এসব ঠিকানায় চিঠি প্রকাশ্য স্থানে রাখবেন।

দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক অসদাচরণ ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে টিউলিপের বিরুদ্ধে। অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো টাকা পরিশোধ না করেই অবৈধ পারিতোষিক হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে রেজিস্ট্রিমূলে দুটি ফ্ল্যাট দখল করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।