Image description

শুক্রবার থেকে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ঘাঁটি ও একাধিক পারমাণবিক স্থাপনায় যে আক্রমণ চালিয়েছে, তা আবারও প্রশ্ন তুলেছে—আসলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা কতটা সম্ভব?

লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের মার্চ মাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি মোটেই সহজ কাজ নয়। এর জন্য ব্যাপক মাত্রার অস্ত্রশক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সহায়তা প্রয়োজন হবে। তবু সফলতা নিশ্চিত নয়, বিশেষত যেসব পারমাণবিক স্থাপনা গভীরভাবে মাটির নিচে গড়ে তোলা হয়েছে, সেগুলো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করাটা অত্যন্ত কঠিন।

প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, এমন জটিলতা এবং বিপুল সংঘাতের ঝুঁকির কারণে এই ধরনের হামলা হওয়া উচিত ‘চূড়ান্ত বিকল্প’ হিসেবে।

 

 

নাতানজে আঘাত, কিন্তু কতটা কার্যকর?

ইসরায়েলের হামলায় নাতানজের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাটি আঘাতপ্রাপ্ত হলেও, মাটির গভীরে থাকা প্রকৃত স্থাপনাগুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা জানা যায়নি।

নাতানজের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ যন্ত্রপাতি ঠিক কত গভীরে রয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে জানা না গেলেও অনুমান করা হয়, এটি প্রায় ৮ মিটার (২৬ ফুট) গভীরে।  প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের বিদ্যমান বোমা সাধারণত সর্বোচ্চ ৬ মিটার গভীরতা পর্যন্ত ভেদ করতে পারে—এটি নির্ভর করে মাটির গঠন ও কংক্রিটের শক্ত স্তরের ওপর।

ইরানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ফোর্দো পারমাণবিক প্লান্ট, যা আরো গভীরে অবস্থিত বলে মনে করা হয়।

 
অনুমান অনুযায়ী, এটি ৮০ থেকে ৯০ মিটার (২৬২ থেকে ২৯৫ ফুট) নিচে।

 

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বোম্ব’ (জিবউই-৫৭), যা সর্বোচ্চ ৬০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে–তা দিয়েও ফোর্দো ভাঙা সম্ভব নয়। এই বোমা কেবল মার্কিন বিমানবাহিনীর বি-২ স্টেলথ বোমার ব্যবহারেই ছোড়া সম্ভব—যা ইসরায়েলের নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যদি এই বোমা সরবরাহও করে, ইসরায়েল তা ব্যবহার করতে পারবে না।

 

 

ইরানের বাড়তি সুরক্ষা কৌশল

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইরান তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নকশায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, ‘যদি কোনো স্থাপনাতে একাধিক সরু সুড়ঙ্গ, বিস্ফোরণরোধী দরজা এবং বহুমুখী প্রবেশ ও প্রস্থানপথ থাকে, তাহলে সেটি ধ্বংস করা অত্যন্ত কঠিন হবে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোকে ধ্বংস করা ইসরায়েল কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও সহজ কাজ নয়। প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত প্রতিবন্ধকতার কারণে বিষয়টি এখনো একটি দুরূহ সম্ভাবনা, যা কেবল চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে বিবেচিত হতে পারে। বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের হামলা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে এবং এই প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।