
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নিবন্ধন কার্যক্রমের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। এ নিয়ে কাজ করছে দলটির একাধিক টিম। জেলা-উপজেলা কমিটি গঠন, কার্যালয় স্থাপন, গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, ভোটার তালিকাসহ গুছিয়ে নেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সব প্রস্তুতি। তবে সবার মনোযোগ এনসিপির দলীয় প্রতীকে, কী হতে যাচ্ছে এনসিপির প্রতীক। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতীক হিসেবে ঘুরেফিরে পাঁচটি নামই আসছে আলোচনায়। যার মধ্যে অন্যতম শাপলা। বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলাকেই দলীয় প্রতীক হিসেবে পছন্দের শীর্ষে রেখেছে এনসিপি। এ ছাড়া সাদা ঘোড়া, চা পাতা, বই এবং মুষ্টিবদ্ধ হাত তাদের আলোচনায় রয়েছে।
এনসিপির নেতারা বলেছেন, দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য যেসব প্রতীক আছে, সেগুলো খুব বেশি প্রাসঙ্গিক নয়। তাই বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের সংরক্ষণে থাকা কোনো প্রতীকে তাদের আগ্রহ নেই। শাপলাকে প্রাধান্য দিয়ে এ ৫টি প্রতীকের জন্য আবেদন করতে পারেন তারা। আজ সোমবার এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিবন্ধন সংক্রান্ত একটি সভা রয়েছে বলে জানা গেছে। সেখানেই চূড়ান্ত হতে পারে প্রতীকসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত।
নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা কালবেলাকে বলেন, ‘শাপলাসহ কয়েকটি প্রতীক আমাদের আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। আমরা এর মধ্য থেকেই প্রতীক চাইব। এখন যেসব প্রতীক রয়েছে সেগুলো খুব বেশি রিলেভ্যান্ট (প্রাসঙ্গিক) না। গণঅভ্যুত্থান এবং দেশকে রিপ্রেজেন্ট (প্রতিনিধিত্ব) করে এমন কোনো প্রতীক থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি।’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নিজ দলের প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নিতে হলে ইসির নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০টি। এজন্য দলগুলোর বিপরীতে ৫০টি প্রতীক ছাড়াও ৬৯টি প্রতীক তফসিলভুক্ত আছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এ সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০টি প্রতীক করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি। দলগুলোর প্রতীক নির্ধারণ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। তবে নতুন দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের অধিকাংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে নতুন প্রতীক সংযুক্ত করার নিয়ম রয়েছে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। কমিটি গঠনসহ প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দেব।’
নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন জানান, প্রতীক নিয়ে তারা এখনো আলোচনা-পর্যালোচনা করছেন। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি প্রতীক আমাদের আলোচনায় রয়েছে। নিবন্ধন বিষয়ে আগামীকাল (আজ) আমাদের সভা রয়েছে। সেখানেই এসব বিষয় চূড়ান্ত হতে পারে।’
এদিকে রাজধানী ঢাকায় দলটির বর্তমান অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে রয়েছে বাংলামটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টার। তবে নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য খোঁজা হচ্ছে স্থান। অবশ্য নিবন্ধন আবেদনের জন্য সময় বেশি না থাকায় এবং স্থায়ী কার্যালয় দেখানোর বাধ্যবাধকতা থাকায় বর্তমান কার্যালয়কেই স্থায়ী কার্যালয় হিসেবে দেখাতে পারে দলটি। এ ছাড়া কাটাবন, শাহবাগ, সেগুনবাগিচা কিংবা বাংলামটরের আশপাশে হতে পারে নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
নির্বাচন কমিশন গত ১০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ২০ এপ্রিল। পরে এনসিপিসহ কয়েকটি দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাস সময় বাড়ায় নির্বাচন কমিশন। ইসিতে নিবন্ধনের জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকা, অনূর্ধ্ব এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় জেলা অফিস এবং ন্যূনতম ১০০টি উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় অফিস (যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত হতে হবে) থাকতে হয়। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় নথিপত্র হিসেবে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো এবং পতাকার ছবি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সব সদস্যের পদবিসহ নামের তালিকা, দলের নামে রক্ষিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকের নাম এবং ওই অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ হিসাব ও দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ ইসিতে জমা দিতে হবে।
এনসিপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সারা দেশে দলের ১২০টি উপজেলা এবং ৩০টি জেলা সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। চলতি জুনের শুরুতে ঢাকার দুই মহানগরীতে কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে অঞ্চলভিত্তিক কমিটি দেওয়া শুরু করে এনসিপি। এরপর ঈদের আগে ধাপে ধাপে পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, দেবীগঞ্জ, বোদা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, নড়াইলের লোহাগড়া, কালিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, সরাইল, বাগেরহাটের কচুয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। জেলার মধ্যে টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ঝালকাঠি, মেহেরপুর, বরিশাল, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, লালমনিরহাট, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা ও মুন্সীগঞ্জে কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর ঈদের পর বান্দরবান, বগুড়া, জামালপুর ও টাঙ্গাইলের আরও কয়েকটি উপজেলায় কমিটি দেয় নতুন দলটি।
রংপুরের পীরগাছাসহ বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকটি দলীয় কার্যালয়ও স্থাপন করা হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র, ইশতেহারও প্রস্তুত। কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন, ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ এবং প্রতীক নির্ধারণের কাজ চলছে।
এসব কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের নিবন্ধন কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় শর্তাবলি পূরণের জন্য এরই মধ্যে ১২০টি উপজেলা সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়েছে এবং ৩০টি জেলা সমন্বয় কমিটি হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করব। দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে ভোটার লিস্ট প্রস্তুতকরণ সেটিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।’