Image description

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর অনুবিভাগের পূর্বনির্ধারিত ভার্চুয়াল রাজস্ব পর্যালোচনা সভা ছিল আজ রোববার। সভা শুরু হয়েছিল নিয়ম মেনেই; সন্ধ্যার আগমুহূর্তে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হন কর কমিশনার, উপকর কমিশনার, ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সবই ঠিক ছিল।

তবে অংশগ্রহণকারীরা ভার্চুয়াল রাজস্ব পর্যালোচনা সভায় উপস্থিতদের তালিকায় একে একে দেখতে পান কিছু অদ্ভুত নাম। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক, তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি, মায়ের দোয়া স্যানিটারি, স্যামসাং মোবাইলের বিভিন্ন মডেল ও নম্বরভিত্তিক ছদ্মনামধারী বহু পরিচয়ও দেখা গেছে। এ সভার স্ক্রিনশট এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা প্রশ্ন তুলেছে এনবিআরের ভার্চুয়াল নিরাপত্তা ও প্রকৃত অংশগ্রহণ নিয়ে।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান ফোন রিসিভ না করায় তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের সদস্য জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা নির্ধারিতদেরই আমন্ত্রণ জানিয়েছি। ট্রাম্প-মাস্কের মতো কারও কাছে তো চিঠি পাঠানো হয়নি। ভার্চুয়ালি কে কী নামে যোগ দিয়েছেন, তা আমাদের জানা ছিল না।’

টানা ঈদের ছুটির পর প্রথম অফিসে রাজস্ব সভা হয়। প্রতি মাসে রাজস্ব আহরণের অগ্রগতি নিয়ে হওয়া এই বৈঠকে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নিয়ে থাকেন। কেউ নামে বা কেউ সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের নাম ব্যবহারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্ত হয়ে থাকেন। কিন্তু এবারই তার ব্যতিক্রম ঘটল; যা এনবিআরের ইতিহাসে আগে কখনো ঘটেনি।

অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের একাংশ জানান, সভায় যোগ দেন চার শতাধিক ব্যক্তি। বেশি অংশগ্রহণ দেখানোর জন্যই এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে। আন্দোলনের রেশ টানতে থাকা কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বিষয়টিকে সচেতন অসহযোগ হিসেবে দেখছেন। গত মে মাস পর্যন্ত এনবিআরের সংস্কার দাবিতে আন্দোলন করছিলেন কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও চেয়ারম্যানের প্রতি অসন্তোষ এখনো বহাল আছে।

 

এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য, চেয়ারম্যানের উপস্থিতির বৈঠকে মাঠপর্যায়ের অনেকে সশরীরে উপস্থিত থাকেন না। তাই ভার্চুয়াল পরিসরে উপস্থিতির সংখ্যা বাড়িয়ে আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার চেষ্টা চলে। রোববারের সভায়ও সেই প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের হিসাব তুলে ধরা হয়। ১১ মাসে এনবিআর মোট আয় করেছে ৩ লাখ ২২ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। অথচ একই সময়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ২২৮ কোটি টাকা, যা সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কম। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ।

এ সময়ে ভ্যাট আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, শুল্ক আদায় ৯২ হাজার ৪৬১ কোটি এবং আয়কর ও ভ্রমণকর আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ জুন মাসে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আরও ১ লাখ ৪১ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা আদায় করতে হবে; যা আদায় প্রবণতা ও বাস্তবতার নিরিখে কার্যত অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সভা ঘিরে এমন ছায়া-অংশগ্রহণ ও বাস্তব রাজস্ব ঘাটতির ব্যবধান আবারও সামনে এনে দিয়েছে এনবিআরের প্রশাসনিক সংকট, অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ এবং মনিটরিং দুর্বলতার চিত্র।