Image description

নির্বাচন কি ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে, নাকি এপ্রিলেই রয়ে গেল—এমন প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। সম্প্রতি এ নিয়ে একটি পর্যালোচনা তুলে ধরেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক বিশ্লেষনে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কি ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে, নাকি এপ্রিলেই রয়ে গেল—এ রকম একটা বিতর্ক দেখছি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষজনই এমন আলাপ তুলছেন।

বিশেষ করে যে জয়েন্ট স্টেটমেন্ট এসেছে সেটা পড়ে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন বিএনপিকে বোকা বানানো হয়েছে। নির্বাচন আদতে ফেব্রুয়ারিতে আসেনি। ওটা এপ্রিলেই রয়ে গেছে বা নির্বাচন আরো পিছিয়ে যায় কি না, সে আশঙ্কা রয়েই গেছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, যৌথ বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে বিএনপি বোকা বনে গেছে, বিএনপিকে ব্লাফ দেওয়া হয়েছে; ফেব্রুয়ারিতে আসলে নির্বাচনের কথা বলা হয়নি।

এটা কতটুকু সঠিক?’ 

তিনি আরো বলেন, যৌথ বিবৃতির একটি অংশে লেখা হয়েছে, ‘এ রকম সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।’ এখানে আরো শর্ত আছে। বলা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। তার মানে ৩টা শর্ত কেউ কেউ দেখতে পাচ্ছেন।

একটা হচ্ছে সব প্রস্তুতি, সংস্কার এবং বিচারের যথেষ্ট অগ্রগতি। এই সব কিছু হলে তারপর রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে নির্বাচন হতে পারে।

জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘তার মানে পরের কথাটা এ রকম যে সরকার একটা পর্যায়ে বলবে, নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি বা বলবে সংস্কার এবং বিচারের শর্ত পরিপূর্ণ হয়নি। তাই আমরা এখন নির্বাচন করতে পারছি না। এবং আগের স্টেটমেন্টকে দেখিয়ে বলবে আমরা তো বলেছিলাম দি কন্ডিশনস।

আমরা সামহাউ কন্ডিশন ফুলফিল করতে পারিনি। তাই আজকে এই অবস্থা হয়েছে। এমনকি খানিক ক্ষেত্রে বিএনপির ওপরও দোষ দিয়ে দেবে। বলবে আপনাদের নানা রকম বাধার কারণে, আপনাদের ঐকমত্যের অভাবের কারণে সংস্কার ঠিকমতো হয়নি। তাই আমাদের দেরি হয়ে গেছে। এসব বলে একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হবে বলে আলাপ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কতটা সঠিক? আমরা যদি টেক্সচুয়ালি জিনিসটা পড়ি এটা ভুল না। সে রকম একটা ইন্টারপ্রিটেশন করা যেতেও পারে। এটা খুব ভুল হবে বা খুব অন্যায় হবে, তা বলছি না। প্রথম কথাটা হচ্ছে শর্তগুলো কেন এলো? আমরা এভাবে যদি প্রাথমিকভাবে বলি একটা দেশের প্রধান উপদেষ্টা একটা নির্বাচনের তারিখ বা মাস ঘোষণা করে ফেলেছেন এপ্রিলের ফার্স্ট হাফ। সেই জায়গা থেকে তিনি যখন সরে আসেন, এটা ইজি। কারণ প্রধান উপদেষ্টা যখন এপ্রিলের কথা বলেন তার মানে তিনি সব না বললেও সেখানেও কিন্তু এই আলাপগুলো এনেছেন সংস্কার-বিচার এগুলো করবেন। তো সেই শর্তের কারণে তিনি এপ্রিলে নির্বাচন নিচ্ছেন বলে বলছেন। তাই তিনি এখন হঠাৎ করে ফেব্রুয়ারিতে করে ফেলব এটা কি তার পক্ষে বলা সম্ভব নাকি তার আগেরটার একটা কন্টিনিউয়েশন রাখা দরকার যে আমরা ওগুলো যদি সিগনিফিকেন্ট হয় খুব স্বাভাবিক সেটাই থাকার কথা।’

‘আরেকটা জিনিস আমরা একটু এভাবে যদি বলি, আমার ইন্টারপ্রেটেশন হচ্ছে সারকামস্ট্যান্সিয়াল এভিডেন্স বলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যাপারে অন্তত প্রধান উপদেষ্টা তারেক রহমানের সাথে একেবারে সরাসরি জেনুইনলি একমত হয়েছেন। কেন বলছি, এটা আমরা খেয়াল করব এপ্রিলে নির্বাচন বিএনপি কোনোভাবেই অ্যাগ্রি করে না। কোনো রকম সংশয় থাকলেই এটা হতো না। সুতরাং বিএনপি যখন প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকের পর সন্তোষ প্রকাশ করে, এই স্টেটমেন্ট যৌথভাবে এগ্রি করে তার মানে দুজনের ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এটা ডিসাইডেড।’

তিনি বলেন, সংস্কার-বিচারকে কতটুকু ভিজিবল করা যাবে। এটা আসলে সম্ভব। সরকার এত দিন ঠিকমতো কাজ করেনি। এগুলো এখন করবে। করেছে কিছুটা। বাকি আছে ছয় মাস। এই ছয় মাস সময়ের মধ্যে অনেক সংস্কার, অনেক বিচার ভিজিবল করা ভেরি মাচ পসিবল।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরকে ঘিরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ প্রধান উপদেষ্টা নিজে বারবার বলেছেন নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে পরের জুনের মধ্যে হবে। ডিসেম্বরের একটা নির্বাচনের প্রবাবিলিটির কথা তো প্রধান উপদেষ্টা স্বয়ং বলেছেন। সুতরাং এই প্রস্তুতিগুলো তাদের থাকারই কথা। তাই সমস্যা হবে না। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে—এমন ঐকমত্য প্রধান উপদেষ্টা এবং তারেক রহমানের মধ্যে হয়েছে।