Image description

‘আল্লাহর দুনিয়ায় কোথাও যানজট না থাকলেও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইলসহ কয়েকটি পয়েন্টে যানজট যেন লেগেই থাকে। সড়কটির মনে হয় কোনো অভিভাবক নেই। যে যেভাবে পারছে সেভাবেই চলছে। কয়েকজন পুলিশ হাত নাড়ানাড়ি ছাড়া তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। আর সড়ক বিভাগের লোকজন যেন সড়ক সংস্কারের নামে নাটকবাজি করেই দায় সারছে।’ এভাবেই ক্ষোভ ঝাড়ছিলেন ডিইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ।

তিনি বলেন, খানা-খন্দে ভরা লক্কড় ঝক্কড় সড়ক আর অবৈধ থ্রি হুইলারের দাপট, যত্রতত্র বেপরোয়া পার্কিং যানজটের মূল কারণ। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। সবাই জানে, তবে সরকার কিংবা প্রশাসনের কেউ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর উদ্যোগ নিচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে বাইপাইল থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত সড়কে ডাইভারশনের কারণে সড়ক সরু হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে পুরো সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। যানবাহনের স্বাভাবিক গতি যেন থেমে যায়। এরই মধ্যে অবৈধ থ্রি হুইলারের অবাধ বিচরণ বাড়িয়ে দেয় সড়কের জটলা।

ইমরান হোসেন নামের এক পথচারী বলেন, সড়কে থ্রি-হুইলার যত্রতত্র চালায় চালকরা। তারা কোনো ট্রাফিক আইন মানে না। এসব যানবাহনের কারণে প্রতিদিনই সড়কে যানজট লেগে থাকে। এছাড়া এসব যানবাহন সড়কের উল্টোপথে যাত্রী নিয়ে চলাচল করে বুক ফুলিয়ে। হয় পুলিশ অসহায়, নয়তো মাসোহারার ভিত্তিতে বৈধতা দেওয়া হয় এদের।

আসলেই পুলিশ অসহায় কি না এমন প্রশ্নে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, থ্রি হুইলার মহাসড়ক কাঁপালেও কিছুই করতে পারছি না। কারণ তারা সংবদ্ধ হয়ে হামলা চালায়। তারা এতোটা বেপরোয়া যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, কিছু বললেই নানা নাটক মঞ্চস্থ করে।

তবে বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. রিজওয়ান বলেন, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে এসব থ্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে ব্যবস্থা নিলে, কীভাবে এসব অবৈধ যানবাহন সড়কে থাকে জানতে চাইলে বলেন, কথা শোনে না থ্রি-হুইলার চালকরা।

‘থ্রি হুইলার মহাসড়ক কাঁপালেও কিছুই করতে পারছি না। কারণ তারা সংবদ্ধ হয়ে হামলা চালায়। তারা এতোটা বেপোরোয়া যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, কিছু বললেই নানা নাটক মঞ্চস্থ করে।’

যানজটের আরেক কারণ আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ। টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে চলছে এ প্রকল্পের কাজ। এতে সড়ক দুইটির একাধিক অংশে ব্যারিকেড, ডাইভারশনসহ সড়কের পাশে মাটি, রড ও মেশিন রেখে কাজ চলছে। ফলে যানবাহন চলাচলের জন্য খোলা অংশ হয়ে পড়েছে সংকুচিত।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, যেহেতু সড়কের এই অংশে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে, তাতে সড়কটিতে চলাচল নির্বিঘ্ন করা সম্ভব নয়। তবে ভোগান্তি সহনীয় পর্যায়ে নিতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।

যে কারণে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে এত যানজট

সড়কে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে একাধিক জায়গায় গর্ত হয়ে যায়। এছাড়া সড়কটিতে হাঁটুপানি জমায় সড়কের অবস্থা না বুঝে যানবাহন চালাতে কষ্ট হয় চালকদের। ফলে যান চলাচলে ধীরগতিসহ সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।

‘যেহেতু সড়কের এই অংশে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে, তাতে সড়কটিতে চলাচল নির্বিঘ্ন করা সম্ভব নয়।’

এ ব্যাপারে পলাশ পরিবহনের চালক আলম বলেন, সড়কে অসংখ্য গর্ত হয়েছে। সংস্কারের নাম নেই। মাঝে মধ্যে ৪-৫ জন শ্রমিককে দেখি নামমাত্র কাজ করছে। যা শুধু টাকা মারার ফন্দি।

তবে সড়ক ও জনপথের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (নয়ারহাট) দেবাশীষ সাহা বলেন, টানা বৃষ্টিতে যেসব গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল, সেসব গর্ত ভরাট করে সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। তারপরও আমাদের টিম সড়কে রয়েছে। আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অধীনে সড়কের যে অংশটি রয়েছে সেই অংশটিও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ সংস্কার করছে।