
দেশে ৭৫ হাজারের বেশি বাস ও ট্রাক মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ১০ হাজার ৫৫৬টি বাস। অর্থনৈতিক আয়ু শেষ হওয়া এসব মোটরযান সড়কে দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ। ‘লক্কড়ঝক্কড়’ যানগুলো পরিবেশদূষণেও রাখছে বড় ভূমিকা। এসব বাসের বিরুদ্ধে সরকার ছয় মাস সময় বেঁধে দিলেও আসেনি ইতিবাচক পরিবর্তন। সড়কে এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ বাসগুলো।
জানা যায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ২০২৩ সালের মে মাসের এক প্রজ্ঞাপনে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকারের ইকোনমিক লাইফ (অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল) নির্ধারণ করা হয়। এতে বলা হয়, বাসের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল হবে ২০ বছর ও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের ২৫ বছর। সে হিসেবে দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের সংখ্যা ৭৫ হাজার ২৪২টি। এর মধ্যে ২০ বছরের অধিক পুরোনো বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ২৮ হাজার ৭৬১। শুধু ঢাকা মহানগরী ও ঢাকা জেলায় রয়েছে ১০ হাজার ৫৫৬টি। আর ঢাকা মহানগরী ছাড়া দেশের অন্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে পুরোনো বাস রয়েছে ১০ হাজার ২০৫টি। এ ছাড়া ২৫ বছরের অধিক পুরোনো ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরিসহ মালবাহী পরিবহনের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৪৮১। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরী ও ঢাকা জেলায় ১৪ হাজার ৬৮৩টি। আর এর বাইরে রয়েছে ৩১ হাজার ৭৯৮টি।
এমন প্রেক্ষাপটে গত বছরের ৬ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পুরোনো বাস ও মালবাহী যানবাহন রাস্তায় না নামাতে বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বায়ুদূষণ কমাতে ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস ও মিনিবাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরোনো ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রাস্তা থেকে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ চিঠি পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে বিআরটিএ। এরপর ১৭ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করে সংস্থাটি। এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার মহানগরী থেকে পুরোনো বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান প্রভৃতি মোটরযান অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে প্রাথমিকভাবে মহানগরী থেকে ২০ বছরের অধিক পুরোনো বাস ও মিনিবাস এবং ২৫ বছরের অধিক পুরোনো ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ মালবাহী মোটরযানগুলো অপসারণের ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। এরই মধ্যে মে শেষ হয়ে জুন চললেও বিআরটিএ’র কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি মাঠে।
ঢাকার রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়, কালো ধোঁয়ায় সড়ক অন্ধকার করে ছুটে চলছে বহু বাস। অনেকটিরই সিগন্যাল লাইট নষ্ট, ভাঙা গ্লাস আর চাকার অবস্থাও নাজুক। মরিচায় আচ্ছাদিত জোড়াতালি দেওয়া বডিও খসে পড়ার উপক্রম। এমন লক্কড়ঝক্কড় পরিবহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজধানীর প্রতিটি সড়কে। যদিও ঈদের আগে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা জানান, ঈদুল আজহায় যাত্রীদের দুর্ভোগ এড়াতে অভিযান সীমিত রাখা হয়েছে। ঈদের পর বড় পরিসরে কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি। জানতে চাইলে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন বলেন, ‘সড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন পরিবহনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটের সংকটের কারণে ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম নই। একই সঙ্গে ডাম্পিং স্টেশনেরও সংকট রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক থেকে মেয়াদোত্তীর্ন পরিবহনগুলো সরাতে মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা সেটা মানছেন না। তাই আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ এদিকে পরিবহনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোনো যান সরাতে হলে বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে ফিটনেস চেক করতে হবে। অন্যথায় জনদুর্ভোগ যেমন বাড়বে, ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়ে ফিটনেসবিহীন যান সড়কে চলবে। এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, ‘আমরাও চাই মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন পরিবহন সড়ক থেকে উঠে যাক। তবে বাস্তবতা হচ্ছে পুরোনো বাস কম, বরং বেশিসংখ্যক মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রাক সড়কে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমনিতেই গণপরিবহনের সংখ্যা কম। তার ওপর যদি কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে গড়পড়তায় বাস অপসারণ করা হয়, তাহলে সংকট আরও বাড়বে।’