Image description

সংসারের চাকায় গতি আনতে বিদেশ গিয়েছিলেন মাষহারুল ইসলাম মাসরুর। সেখানে মন টেকাতে না পেরে দুই বছরের মাথায় ফেরেন গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের পাটোয়ারী হাটের বোয়ালীয়া এলাকায়।

জীবন সংগ্রাম জারি রাখতে শুরু করেন পোলট্রি খামার। এতেও লোকসান হয়। অবশেষে কাজ নেন গাজীপুরে শ্বশুরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। সেখানে থাকাবস্থায় শুরু হয় ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী আন্দোলন। ঝাঁপিয়ে পড়েন রাজপথে। সামনের সারিতে থেকে লড়তে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি।

জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যখন দেশ অগ্নিগর্ভে রূপ নেয়, তখনো গাজীপুরের বাসন এলাকায় রাজপথে ছিলেন মাসরুর। একপর্যায়ে ৫ আগস্ট তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ২৯ বছর বয়সের এ যুবকের শরীরে ‍দুটি গুলি বিদ্ধ হয়। তাকে উদ্ধার করে সহযোদ্ধারা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, মাসরুর যখন শহীদ হন, তখন তার স্ত্রী বিবি ছালমা সাড়ে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। দেড় মাস পর ছেলে সালমান বিন মাসরুরের জন্ম হয়। এর সাড়ে চার বছর আগে তাদের সংসারে নাজিয়া আক্তার তানিশা নামে একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করে।

মাসরুরের স্ত্রী ছালমা বলেন, ফুটফুটে শিশু সন্তানকে দেখে যেতে পারেননি মাসরুর। পরিবারে তিনি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। একজনের আয়েই বাবা-মাসহ পাঁচজনের সংসার চলত। তার মৃত্যুর পর অন্ধকারে ডুবে গেছি। এখন দুমুঠো আহার জোটানোই কষ্টকর। ‍দুই শিশু সন্তানের লালন-পালন ও পড়ালেখা কীভাবে হবে, তা ভাবতে গেলেই চিন্তায় মাথা ঘোরে।

তিনি বলেন, মিছিলে যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন মাসরুর। তিনি বলেছিলেন, প্রতিদিন অনেক মানুষ পুলিশের গুলিতে মারা যাচ্ছিল। তিনি নিজেও শহীদ হওয়ার নেশায় আন্দোলনে যেতেন এবং আমাকেও ডাকতেন। বলতেন, মিছিলে নামো, মারা গেলে শহীদের মর্যাদা পাবা। মানুষ আমাদের সন্তানদের শহীদের সন্তান বলবে।

মাসরুরের বাবা আবদুল খালেক মিজি বলেন, তার বয়স ৮৩ বছর। তিনি ভালো করে চোখে দেখেন না, কানেও শোনেন না। তার সন্তানদের মধ্যে মাসরুরই তাদের খোঁজখবর রাখতেন। ওষুধপথ্য কিনে দিতেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সংসারটি কানা হয়ে গেছে। সরকার যেন এই পরিবারের দিকে নজর দেয়। তাছাড়া মাসরুরের স্ত্রী-সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।