Image description

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে তার সমর্থক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্মচারীদের একটি অংশ গত ১৫ মে থেকে তালাবদ্ধ করে রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন। ঈদুল আজহার কারণে ঈদের আগের দিন থেকে আন্দোলন শিথিল করলেও নগর ভবনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসককে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন ইশরাক হোসেন। অফিস খোলার সঙ্গে সঙ্গে আবারো জমায়েত হবেন ইশরাকের সমর্থকরা। 

এ অবস্থায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির কার্যক্রম চালিয়ে নিতে ওয়াসা ভবনে জরুরি সভা করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক শাহজাহান মিয়া যদিও ঢাকা দক্ষিণের প্রশাসক। তিনি একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করছেন।

বুধবার রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান, কর্পোরেশন সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সোমবারও (৯ জুন) দক্ষিণ সিটির কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সমাপন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সম্পর্কিত পর্যালোচনা নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করেন দক্ষিণের প্রশাসক।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, “যেভাবে নগর ভবনে তালা দিয়ে সব কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে, এমনটা চলতে থাকলে নগরবাসীর ভোগান্তি সামনে আরও বাড়বে। নগর ভবনে প্রবেশ করতে না পেরে প্রশাসক ওয়াসা ভবনে কিংবা সচিবালয়ে জরুরি মিটিংগুলো সম্পাদন করছেন।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক শাহজাহান মিয়া বলেন, “আমি যেহেতু ওয়াসার এমডি সেহেতু ওয়াসা ভবনেই বসি। নগর ভবন তালাবদ্ধ থাকায় আমাদের কারও পক্ষে সেখানে গিয়ে অফিস করা তো সম্ভব নয়। যেহেতু এখন সংকট চলছে তাই বিকল্প ব্যবস্থায় জরুরি কাজ চালিয়ে নিতে এখানে মিটিং করতে হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “আন্দোলনকারীরা কোরবানির ঈদ উপলক্ষে তাদের আন্দোলন শিথিল করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, যান্ত্রিক বিভাগসহ তিনটি বিভাগ খুলে দিয়েছিল। ফলে কোরবানির সময়ে বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পুরোদমে করা সম্ভব হয়েছিলো। কিন্তু এখন যদি আবার অফিসগুলো বন্ধ করে দেয় তবে আগামীতে জলাবদ্ধতা, মশক নিধনেও ইমপ্যাক্ট পড়বে। অন্যান্য নাগরিক সেবা অধিকাংশই তো বন্ধ রয়েছে। যতদিন এ সংকট চলবে ততদিন বিকল্প উপায়ে সমন্বয় করার চেষ্টা করব।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটির রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, “সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ বন্ধ থাকা মানে সব আয় বন্ধ। আমরা কোনো হোল্ডিং ট্যাক্স, লাইসেন্স নবায়ন কিংবা অর্থ আয়ের কাজ করতে পারছি না। এর প্রভাব সিটি করপোরেশনের বাজেটে গিয়ে পড়বে।”

এদিকে ঈদের আগে ৩ জুন (মঙ্গলবার) আন্দোলন শিথিলের ঘোষণা দিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, “এই নগর ভবনে কোনো বহিরাগত প্রশাসক ও কোনো উপদেষ্টা প্রবেশ করতে পারবেন না। ঈদে নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করা ও জনগণের ভোগান্তি বিবেচনায় নিয়ে আপাতত কর্মসূচি শিথিল করা হয়েছে। সরকার এর মধ্যে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিলে জনগণই তাদের মেয়রকে শপথ পড়িয়ে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবে।”

তখন তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে অবিলম্বে তার শপথ আয়োজনের ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়েই শপথ আয়োজন করা হবে।

নগর ভবনের মূল ফটকে ১৫ মে থেকে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা। এতে কার্যত বন্ধ হয়ে আছে সিটি করপোরেশনের সব ধরনের দৈনন্দিন সেবা কার্যক্রম। বন্ধ হয়ে আছে হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধনসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা। ঈদের ছুটি শেষে আগামী সপ্তাহে অফিস খুললেও নগর ভবন আদৌ খুলবে কিনা এ নিয়ে আছে শঙ্কা।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। তখন নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে মামলা করেন ইশরাক হোসেন।

৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পরে গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ট্রাইব্যুনালের রায় এবং ইসির গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ। শুনানি নিয়ে রিট সরাসরি খারিজ করে ২২ মে আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মেয়র ঘোষণা ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে ২৬ মে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

শীর্ষনিউজ