Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেই না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা, স্মারকলিপি, অনশন ও বিক্ষোভ সত্ত্বেও কার্যত কোনও অগ্রগতি নেই। গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধি সংস্কারের কিছু পরিবর্তন হলেও শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মূল দাবি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং সামনে বড় আন্দোলনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গত বছর ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেছিলেন, ডাকসু নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হতে পারে জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ। কিন্তু তিন মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য তিনটি পৃথক কমিটি গঠিত হয়েছিল। তারা আচরণবিধি ও গঠনতন্ত্র আংশিক সংস্কার করেছে। তবে ১৫ এপ্রিল ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, মে মাসের প্রথমার্ধে ভোটার তালিকা প্রস্তুত, নির্বাচন কমিশন গঠন ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়োগের কথা থাকলেও সেসবের কোনও অগ্রগতি নেই। রোডম্যাপে তফসিল ও নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখও উল্লেখ নেই।

সাম্প্রতিক সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা কিছুটা থমকে গেলেও শিক্ষার্থীরা এখনও ডাকসু নির্বাচন এবং সাম্য হত্যার বিচার– এই দুই দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন, সিন্ডিকেট মিটিং চলাকালে সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান প্রভৃতি কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বারবার প্রশাসনকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। এসব পদক্ষেপে প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনও অগ্রগতি নেই।

ছাত্র সংগঠনগুলোর বক্তব্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘ডাকসুকে কার্যকর ও শিক্ষার্থীবান্ধব করতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও সময়োপযোগী সংস্কার প্রস্তাবনা ছাত্রদলই দিয়েছে। আমরা সবসময় নির্বাচনপন্থি দল। কিন্তু যেই প্রশাসন বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তাদের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। হলে হলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনও সক্রিয়। আমরা চাই প্রশাসনের দায়িত্বরতরা তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগ করুক এবং আওয়ামী সমর্থকদের অপসারণ করে একটি অংশগ্রহণমূলক ও বিতর্কমুক্ত ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করা হোক।’

ঢাবি শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ফেব্রুয়ারি-মার্চেই হওয়ার কথা ছিল। কিছু দল ও শিক্ষক অসহযোগিতা করলেও এটা মূলত প্রশাসনের ব্যর্থতা। প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল নির্বাচন নিশ্চিত করা। যারা ডাকসুর পরিবেশ নষ্ট করতে চায়, তারাও এক প্রকার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।’

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পরে ডাকসু শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি ছিল। কিন্তু নতুন প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এই আকাঙ্ক্ষা গুরুত্ব দেয়নি। প্রশাসনের যে সক্ষমতা থাকার কথা ছিল, তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে দুই ধরনের মনোভাব আছে: একদল ডাকসু নির্বাচন চায়, কিন্তু ক্ষমতা কম; অন্য দল চায় দেরি হোক, তাদের ক্ষমতা বেশি।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তোফাজ্জল থেকে সাম্য হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত একের পর এক ঘটনা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। এই ব্যর্থতা ডাকসু নির্বাচনের পথে বড় বাধা। প্রশাসনকে অবিলম্বে এসব সমস্যা সমাধান করে গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গন নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রশাসনের বক্তব্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘সিন্ডিকেটে গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধি নিয়ে পুনরায় আলোচনা হয়েছে। কিছু প্রস্তাব এসেছে, সেগুলো কমিটির প্রধানরা নোট করেছেন। ভোটার তালিকা ও নির্বাচন কমিশন গঠনের কাজ জুনের ২ তারিখের মধ্যে শেষ করতে উপাচার্য স্যার সময় নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ, ২ তারিখ পর্যন্ত ধৈর্য ধরুন।’

প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মে মাসের প্রথমার্ধে ভোটার তালিকা ও তফসিল ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু সাম্য হত্যাকাণ্ডের কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেছি। তবে খুব বেশি নয়। উপাচার্য যে সময় বেঁধে দিয়েছেন, সেই সময়ের মধ্যেই কমিশন গঠিত হবে।’

তিনি আরও বলেন, “গঠনতন্ত্রে শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবনা আংশিকভাবে নেওয়া হয়েছে। মূল আইন পরিবর্তন করা আমাদের ক্ষমতার বাইরে। তবে উপাচার্যের একক ক্ষমতা কিছুটা কমানো হয়েছে। এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা– দুই দিকেই অগ্রগতি হচ্ছে।”

তবে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। এ অবস্থায় ডাকসু নিয়ে শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা এবং প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা দিন দিন বাড়ছে।