
স্থানীয় সরকার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমার দেড় মাস পার হলেও তার বাস্তবায়ন শুরু না হওয়ায় খেদ প্রকাশ করেছেন কমিশন প্রধান তোফায়েল আহমেদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ইনসাইড আউটে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, তাদের সুপারিশ যে সামনে বাস্তবায়ন হবে তার কোনো লক্ষণও তিনি দেখতে পাচ্ছেন না।
“আমরা রিপোর্ট দিলাম এপ্রিলের ২০ তারিখ।… কোনো আলোচনা তো হয়নি। আর সামনে যে হবে তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, এটার একটা আর্কাইভাল ভ্যালু হবে; এটাই মনে হচ্ছে আরকি।”
স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনেরও সদস্য। তিনি ২০০৬-২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠিত 'স্থানীয় সরকার কমিশনের' সদস্য ছিলেন।
ইনসাইড আউটে তিনি বিদ্যমান স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার দুর্বলতা, প্রস্তাবিত কাঠামো ও ভোটের ধরন পরিবর্তন, নারী নেতৃত্ব বিকাশের বিকল্প পথ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।
কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন ঝুলে থাকা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, “হিমাগারে বলব না। আর্কাইভাল ভ্যালু হচ্ছে- এটা ছাপা হবে, ছাপা হওয়ার পরে আপনি পড়তে পারবেন। বলা হবে একদা কোনো একটা কমিশন ছিল, তারা একটা রিপোর্ট দিয়েছিল। রিপোর্টে এই কথাগুলো বলা ছিল।
“এটার এই সমালোচনা ছিল, এই ভালো দিক ছিল। ইতিহাসে একটা আর্কাইভাল ভ্যালু থাকবে।”
সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সহযোগিতা দরকার বলে মনে করেন তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, “এটা তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। (অন্তর্বর্তী সরকার) শুরু করেছিলেন ভালো কমিশন করে, রিপোর্ট নিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবায়নের জন্য যেই অবস্থাটা সে অবস্থাটা, তেমন সংস্কারবান্ধব বা সংস্কারমুখী একটা সহযোগিতা রাজনৈতিক দিক থেকে আসেনি।”
ভারতের উদাহরণ টেনে অধ্যাপক তোফায়েল বলেন, “সেখানে রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে যেসব জায়গায় সংস্কারের প্রস্তাব এসেছে, সেখানে সাকসেসফুল। কিন্তু এখানে রাজনীতিক এবং লোকাল গভর্মেন্ট যারা লিডারস, যারা কাউন্সিলরস অ্যান্ড মেম্বারস, তাদের মধ্যে কিন্তু কোনো সংস্কার চেতনা নাই। কারণ, আমরা এগুলো নষ্ট করে ফেলেছি।”
স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে গত ১৮ নভেম্বর স্থানীয় সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।
এই অধ্যাপকের নেতৃত্বে কাজ করেন সাত সদস্য। গত ২০ এপ্রিল তারা দুই খণ্ডের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেন।
এ প্রতিবেদনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংসদীয় পদ্ধতির আদলে পুনর্বিন্যস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন পৃথক আইনের বদলে একটি আইনের অধীনে আনতে বলা হয়েছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের ভোট এক তফসিলে একসঙ্গে করার সুপারিশ করা হয়েছে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্থানীয় সরকারের যুতসই ব্যবস্থা দেশে গড়ে ওঠেনি।
“আমাদের স্থানীয় সরকার সমস্যাটা সবাই বুঝতে চাচ্ছেন না। একেকজন একেকভাবে দেখছেন। অন্ধের হাতি দেখার মত। কারণ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বলে কোনো জিনিস এদেশে ডেভেলপ করেনি। কতগুলো প্রতিষ্ঠান ডেভেলপ করেছে বিভিন্ন সময়ে, একটা থেকে আরেকটার অনেক ব্যবধান, সময়ের ব্যবধান।”
বিদ্যমান ব্যবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদে রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ঘটছে, অন্যদিকে জেলা পরিষদ ভোটে জনসাধারণের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
অধ্যাপক তোফায়েল বলেন, “এখন স্থানীয় সরকারের কিন্তু কোনো স্তরেই সত্যিকার অর্থে পরিষদ সিস্টেম কাজ করছে না। মেয়র এবং চেয়ারম্যানের ইচ্ছা মত এটা চলে।”
স্থানীয় সরকারের জন্য অভিন্ন কাঠামো আনার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
তোফায়েল বলেন, “সব বিষয় মাথায় রেখে আমরা চেষ্টা করেছি একটা অভিন্ন কাঠামো দাঁড় করাতে। এটা বহু বছর ধরে আলোচনা হচ্ছিল- বিভিন্ন জায়গায়, ‘সমজাতীয় কাঠামো সব জায়গায় থাকুক’।
“সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে সমজাতীয় কাঠামো এবং সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভাকেও একইরকম কাঠামোর মধ্যে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।”