Image description

আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ মাসুদুল আলম। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এই সেতুর পূর্ব প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, দুটি মোটরসাইকেল ও একটি আইসক্রিমবাহী ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে চুরমার করে দেয় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস।

সরেজমিনে আজ বেলা ১১টায় কালুরঘাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে গিয়ে পথচারী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জটলা চোখে পড়ে। সেতুর দুই পাশে লোহার ভাঙা বেষ্টনীগুলো পড়ে ছিল। পড়ে ছিল দুমড়েমুচড়ে যাওয়া দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদুল আলম জানান, সেতুর কাছাকাছি একটি দোকানে বসা ছিলেন তিনি। ট্রেন এসে যানবাহনগুলো ধাক্কা দেওয়ার পর বিকট শব্দ হয়। পরে তাঁরা কয়েকজন দৌড়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে উদ্ধার করা হয়। অটোরিকশা দুটি একেবারে ট্রেনের ইঞ্জিনের নিচে ঢুকে পড়ে। পরবর্তী সময়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে, যা শেষ হয় রাত প্রায় সাড়ে তিনটায়। এরপর পর্যটক এক্সপ্রেস ছেড়ে দেয়।

ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ সাকিব। তাঁর বাড়ি সেতুসংলগ্ন এলাকায়। ঘটনার সময় তিনি ছিলেন পূর্ব প্রান্তে একটি চায়ের দোকানে। সাকিব বলেন, ট্রেনটা দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকে। লাল পতাকা দেখালেও থামেনি। গাড়িগুলো ধাক্কা দিয়ে অন্তত ১০ গজ দূরে টেনে নিয়ে যায় ট্রেনটি।

সাকিব বলেন, ‘কিছু দূর গিয়ে ট্রেনটা থেমে যায়। আমরা দ্রুতগতিতে সেতুর ওপর পৌঁছাই। ইঞ্জিনের নিচে চাপা পড়া অটোরিকশা থেকে বের করে আনা হয় দুজনকে।’

জেলা সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাও প্রথমে তিনজন নিহত হয়েছে বলে শুনেছি। আহত একজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছেন। ওই ব্যক্তির এক পা পুরোপুরি কেটে গেছে। ঘটনার রাতে তিনি মারা গেছেন বলে শোনা গিয়েছিল। পরবর্তীতে অধিকতর যাচাই বাছাই করে দুজন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। আহত মোট ১৬ জন। এর মধ্যে বোয়ালখালীতে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ জন। এ ছাড়া পার্ক ভিউতে ৬ জন ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন চিকিৎসাধীন আছেন।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরা হলেন আরিফ উদ্দিন (৩৪), আসিফ উদ্দিন (৩০), আসমা আহমেদ (২৫), আনজুম আরা বেগম (৫৫) ও মোহাম্মদ তৌহিদ (৩৬)।

দুর্ঘটনার যে কারণ জানা গেল

দুর্ঘটনার বিষয়ে জাহানআলী রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার মো. নেজাম উদ্দিনের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তিনি জানান, পর্যটক এক্সপ্রেস কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসে সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে। রাত ১০টায় কালুরঘাট সেতু এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় সেতুর ওপর কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল ছিল। সেতুর ওপর একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অন্য গাড়িগুলো আটকে ছিল।

ট্রেনচালক সংকেত অমান্য করেছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নেজাম উদ্দিন বলেন, নিয়ম হলো ট্রেন পূর্ব প্রান্তে এসে দাঁড়াবে। চালক ডেড স্টপ বইতে সই করবেন। এরপর লাইনম্যানের সংকেত নিয়ে সেতুতে উঠবে। কিন্তু ট্রেনচালক এ নিয়ম না মেনে দ্রুতগতিতে সেতুতে উঠে যান। আবার উল্টো দিক থেকে গাড়ি আসছিল। এ কারণে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। নেজাম উদ্দিন বলেন, সেতুতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ১০ কিলোমিটার। কিন্তু ট্রেনটি এর চেয়ে বেশি গতিতে এসেছিল। গতি ছিল ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার। ফলে চালক কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। পাশাপাশি এ ঘটনায় চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের দায়িত্ব পালনকারী গার্ড সোহেল রানা, লোকোমাস্টার গোলাম রসুল, সহকারী লোকোমাস্টার আমিন উল্লাহ এবং অস্থায়ী গেটকিপার (টিএলআর) মো. মাহবুব।

জানতে চাইলে বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, নিহত দুজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সড়কে যান চলাচল এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক।