
ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু জবাই ও কাটাকাটির জন্য দিনাজপুর থেকে এবারো প্রায় আড়াই হাজার কসাই ছুটছেন ঢাকায়। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে ৬৫ জনের কসাইয়ের একটি দল ঢাকার উদ্দেশে দিনাজপুর ছাড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে যোগাযোগ করে পেশাদার এবং সিজনাল এসব কসাইরা ঢাকায় যান।
অভিজ্ঞতা না থাকায় কোরবানির পশু জবাই ও কাটাকাটি নিয়ে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। আর এ সংকট সবচেয়ে বেশি রাজধানীতে। কারণ এই সময়টাতে কসাইদের বেশ সংকট থাকে। এ অবস্থায় ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে অনেকেই যখন বাড়ি ফিরছেন, তখন বাড়তি আয়ের আশায় কসাইরা ভিড় করছেন ঢাকায়। বাস-ট্রেনের পাশাপাশি অনেকে বিমানে করেও ঢাকায় যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ঈদের তিন থেকে চার দিন তারা ঢাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার কাজ করবেন।
দিনাজপুরে বিমানের টিকিট বিক্রেতা একাধিক ট্রাভেলসের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন কসাই বিমানের টিকিট নিয়েছেন। তারা শুক্রবার সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে শেষ ফ্লাইটে ঢাকায় যাবেন। কারণ ঈদের আগে ঢাকাগামী এবং ঈদের পরে ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী যাত্রীর চাপ কম থাকায় কম মূল্যে বিমানের টিকিট পাওয়া যায়। আবার যানজোট এড়ানোসহ সময় কম লাগে, তাই তারা বিমানে যাতায়াত করেন। অনেকেই ফিরতি টিকিটও কেটে রেখেছেন।
বেঙ্গল ট্রাভেলসের মালিক তোফায়েল আহম্মেদ জুয়েল বলেন, সৈয়দপুর থেকে বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার ও ইউএস বাংলায় ঢাকায় যেতে ৪৮০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজাহার আলী নামে একজন কসাই তার কাছ থেকে শুক্রবার রাতের ফ্লাইটে ঢাকায় যাওয়ার টিকিট নিয়েছেন। তিনি ফিরতি টিকিটের জন্যও বলে রেখেছেন।
দিনাজপুরের কসাইদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইতোমধ্যে তাদের অনেকেই বিমানে, ট্রেনে ও বাসে করে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনেকে ঢাকায় পৌঁছেও গেছেন। ঢাকায় যাওয়ার আগেই তারা চুক্তি করে যান পশু জবাই ও মাংস কাটার দরদাম নিয়ে। যারা যারা পশু জবাই দেবেন তাদের সঙ্গে আগেই চুক্তিবদ্ধ হন তারা।
স্থানীয় কসাইরা জানান, এবার পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য রেট ধরা হয়েছে পশুর দামের প্রতি হাজারে ২৫০ টাকা। অর্থাৎ ১০ হাজার টাকা দামের পশু হলে কসাইদের জবাই ও মাংস কাটার জন্য দিতে হবে আড়াই হাজার টাকা। আর লাখ টাকার পশুর জন্য কসাইকে দিতে হবে ২৫ হাজার টাকা। পশুর দামের ওপর নির্ধারণ করেই বাড়বে কসাইদের রেট। একইসঙ্গে তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হয় পশু ক্রেতাদেরই।
তারা আরও জানান, এখানকার কসাইদের সুবিধা হচ্ছে ঈদের আগে হওয়ায় ঢাকায় যাওয়ার টিকিটের কোনো চাপ থাকে না। প্রয়োজনের তাগিদে অনেকে বিমানে, ট্রেনে ও বাসে করে ঢাকায় যাচ্ছেন। আবার ঈদের পরে ঢাকা থেকে দিনাজপুরে আসার টিকিটও সহজে পাওয়া যায়, থাকে না ভিড়। ফলে তাদের বাড়তি আয় হয় ঝামেলা ছাড়াই। বিভিন্ন লোক মারফত কিংবা অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে এরইমধ্যে কসাইদের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছেন পশু ক্রেতারা। আর সেই হিসাবে কসাইরাও রওনা হয়েছেন রাজধানীর উদ্দেশে।
কসাই আমিনুল ইসলাম বলেন, তারা বৃহস্পতিবার দুপুরে ৬৫ জনের একটি দল দিনাজপুর স্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। একেক জন ৪০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকায় পর্যন্ত চুক্তি করেছেন।
দিনাজপুর শহরের কসাই রানা বলেন, চার জনের একেকটি গ্রুপ করে আমরা ঢাকায় যাই। একদিনে একেকটি গ্রুপ পাঁচ থেকে ছয়টি পর্যন্ত পশু জবাই ও মাংস কাটতে পারে। ফলে একদিনেই পাওয়া যাবে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার ওপর। আগামী তিন দিনে আয় হবে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা। যাতে খরচ ও যাবতীয় বিষয় বাদ দিলেও ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন হবে।
কসাই আজাহার আলী বলেন, প্রতি বছরই এই সময়ে আমাদের একটি বাড়তি উপার্জন আসে পশু জবাই ও মাংস কাটার কাজ থেকে। এরইমধ্যে ঢাকা থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং অনেকেই রওনাও দিয়েছেন। বিমানে করেও অনেকে যাচ্ছেন। আমি নিজেও শুক্রবার বিমানে ঢাকায় যাবো। আমি এরইমধ্যে ৭০ হাজার টাকার কাজের চুক্তি করেছি। আমি শুধু ৩০টি গরুর চামড়া ছাড়াব। আশা করছি শুক্রবারের মধ্যে আরও ১০-১৫টি গরুর চামড়া ছাড়ানোর কাজ পেয়ে যাবো।
দিনাজপুর কসাই সমিতির সভাপতি ভুট্টো ও সাধারণ সম্পাদক সনু বলেন, দিনাজপুর শহর থেকে কমপক্ষে ৫০০ কসাই ঢাকায় যাবে। এছাড়াও অন্যান্য উপজেলা থেকে কসাইরা প্রতিবার ঢাকায় যান। আবার কিছু সিজনাল কসাই রয়েছেন। সব মিলিয়ে দিনাজপুর থেকে প্রায় আড়াই হাজার কসাই শুক্রবার রাতের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাবে।