
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে হতাহতদের পরিবারের খোঁজখবর নিতে ‘জুলাই ফান্ড’ গঠনে কমিটি গঠন করেছে পাবনা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশনায় এ তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে স্মারকে উল্লেখ করেছেন কলেজটির অধ্যক্ষ। মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক থেকে শুরু করে আউটসোর্সিং কর্মী—সবার জন্যই নির্ধারণ করা হয়েছে চাঁদা। তবে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৮ মে এক চিঠিতে পাবনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. রুহুল কুদ্দুস উল্লেখ করেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং ২৫ মে ২০২৫ এর একাডেমিক কাউন্সিল সভার সিদ্ধান্তের আলোকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য জুলাই ফান্ড-২০২৪ এর আর্থিক তহবিল সংগ্রহ ও বিতরণে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবু মো. শফিকুল হাসানকে সভাপতি এবং অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সিরাজুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে আট সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য (অর্থ) হিসেবে ডা. এ এম সেরাজুল আলমের নামের পাশে বিকাশ নম্বর দেওয়া হয়েছে (০১৭১১৫৩৮৯৯৫)। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. টিপু সুলতান, ফার্মাকোলজির সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আক্তারুজ্জামান, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নিলুফার ইয়াসমিন, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. মো. মেহেদী ইবনে মোস্তফা এবং ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. মশিউর রহমান।
চিঠিতে জুলাই ফান্ড ২০২৪ এর তহবিল সংগ্রহে চাঁদার হার নির্ধারণ করা আছে। তালিকা অনুসারে অধ্যাপকরা মাসিক ২ হাজার টাকা করে পরবর্তী ১০ মাসের জন্য দেবেন ২০ হাজার টাকা। অনুরূপভাবে সহযোগী অধ্যাপকরা দেবেন ১৮ হাজার টাকা, সহকারী অধ্যাপকরা ১৫ হাজার টাকা এবং প্রভাষকরা ১০ হাজার টাকা দেবেন। অন্যদিকে ১১ থেকে ১৩তম গ্রেডের কর্মচারীরা দেবেন ৪ হাজার টাকা। ১৪ থেকে ১৬ গ্রেডের কর্মচারীরা দেবেন ২ হাজার টাকা, ১৭ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীরা দেবেন ১ হাজার টাকা। এ তালিকায় বাদ যাননি আউটসোর্সিং কর্মীরাও। তাদের জন্য চাঁদা ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা।
চিঠির শেষে লেখা হয়েছে, অফলাইনে অনুদানের অর্থ প্রদানের জন্য মো. জাহিদুল ইসলাম এবং মো. মেহেদীর কাছে প্রদান করুন। অনলাইনে প্রেরণের জন্য খরচসহ সদস্য (অর্থ)-এর বিকাশ নম্বর ব্যবহার করুন।
পাবনা মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসক বলেন, ‘দেশের কোনো সরকারি মেডিকেল কলেজে এ ধরনের ফান্ড গঠন করা হয়নি। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, মন্ত্রণালয় থেকে বা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষের এটা এক ধরনের চাঁদাবাজি। তা ছাড়া আউটসোর্সিং কর্মীদের কাছেও চাঁদা দাবি করা হয়েছে, যা অমানবিক এবং নিন্দনীয়।’
জানতে চাইলে পাবনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. রুহুল কুদ্দুস কালবেলাকে বলেন, ‘জুলাই ফান্ড গঠনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে আন্দোলনে আহতদের খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত আমাদের একাডেমিক কাউন্সিল থেকে নেওয়া হয়েছে। এটা মূলত মানবিক দিকবিবেচনা করে করা হয়েছে। কোনো ফটোসেশন করার জন্য নয়। অর্থাৎ যাদের সহযোগিতা করা হবে তাদের গোপনেই করা হবে।’
কত টাকা ফান্ডে জমা হয়েছে এবং কীভাবে ব্যয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো এটা সম্পন্ন হয়নি। ঈদের পরে ফান্ড সংগ্রহ ও বিতরণ করা হবে।’ ফান্ড সংগ্রহে বিলম্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উল্লিখিত চিঠি পরে সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত চিঠিতে নির্ধারিত চাঁদার হার পরিবর্তন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আমরা হেলথ কার্ড দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে জুলাই আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছেন তারা হাসপাতালে এলে যেন সুবিধাগুলো আগে পান।’
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমিন বলেন, ‘জুলাই ফান্ড নামে তহবিল গঠন ও বিতরণে অধিদপ্তর থেকে কোনো নির্দেশনা কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দিয়েছে বলেও আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও সাড়া মেলেনি।