Image description

একদিন বাদেই কোরবানির ঈদ। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর পশুর হাটগুলো ক্রেতাশূন্য থাকলেও গতকাল থেকে তা বেড়েছে। ক্রেতারা আসছেন, হাঁটছেন করছেন দরদাম। কেউ কিনছেন। কেউ ঘুরছেন। গরুর দামে খুশি অনেক ক্রেতাই। আবার কেউ কেউ বলছেন বাজেটের নাগালে নেই। সরজমিন গতকাল রাজধানীর নতুন বাজার একশ’ফিট হাট ও গাবতলী হাট ঘুরে এসব চিত্রের দেখা মেলে। সরকারি ও বেসরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় দুপুর থেকেই হাটগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই দিনের তুলনায় বুধবার দিনে পশু বিক্রি বেড়েছে। বড় গরুর তুলনায় ছোট গরুর চাহিদা তুঙ্গে। যদিও দাম এখনও কিছুটা বেশি, তবে শেষ মুহূর্তে ক্রেতারা দরদাম করেই গরু নিচ্ছেন।

রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে এবার চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর ও ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে বিপুল পরিমাণ গরু এসেছে। একশ’ ফিট হাটে সুফিয়ান নামের এক  স্বেচ্ছাসেবক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় পাঁচশ’র বেশি গরু হাটে প্রবেশ করেছে। তবে পশুর আমদানি বেড়েছে বলেই দাম যে কমেছে, এমন নয়। খামারিরা বলছেন, খরচ এত বেড়েছে যে, গরুর দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। নাটোর থেকে আসা গরু ব্যাপারী মো. শাকিল বলেন, প্রতি বছর আমি এই হাটে গরু নিয়ে আসি। এবার ১৩টা গরু এনেছি। তার মধ্যে সাতটাই বিক্রি হয়ে গেছে। দরদাম নিয়ে তিনি বলেন, দাম গতবারের চাইতে বেশি হচ্ছে না। এবার গরু বেশি আসছে। মানুষও দেখতেছে। আমার যে সাতটা বিক্রি হইছে তার মধ্যে চারটাই মাঝারি সাইজ। এই গরুই বেশি চায় মানুষ। পাবনার গরু ব্যাপারী মো. শাহ আলম। এবার হাটে তিনি গরু এনেছেন ১৮টি। তার মধ্যে ছয়টি বিক্রি হয়েছে। যা গতকাল দুপুরের পর থেকে বিক্রি হয়। তিনি বলেন, এই চারদিন কোনো কাস্টমার ছিল না। দুপুরের পর থেকে অনেকে আসছেন। আমি সবই বিক্রি করছি দুপুরের পর থেকে। শাওন নামের এক ক্রেতা বলেন, দাম খুব বেশি না। আবার একেবারে কমও না। আমরা ছোট গরু খুঁজতেছি। কিন্তু এগুলো প্রতিবছর দাম ধরে রাখে।  আমার বাজেট আশি হাজারের মধ্যে। কিন্তু বেপারীরা এক লাখের উপর দাম হাঁকাচ্ছেন।  সোয়া দুই লাখ টাকা দামের একটি বড় গরুর ক্রেতা জাফর আহমেদ বলেন, আমাদের পরিবার বড়। তাই প্রতিবছর বড় সাইজের গরু লাগে। এই সাইজের গরুটিই গত বছর আড়াই লাখ দিয়ে কিনতে হয়েছে। এবার সে তুলনায় কম পেয়েছি। সিরাজগঞ্জ থেকে আসা বেপারী হানিফ বলেন, এই হাটে ৫ বছর ধরে গরু নিয়ে আসি। এবার ১৫টা গরু আনছি। তার মধ্যে আটটা বিক্রি হয়ে গেছে। হাটের ক্রেতারা অনেক কম দাম বলে। এজন্য বাকি গরুগুলো বিক্রি হয়নি। 

এদিকে গাবতলী পশুর হাটেও ছোট ও মাঝারি গরু ক্রেতা চাহিদার শীর্ষে। সাধারণত ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার গরুগুলো বেশি কিনছে মানুষ। লাখে ৩৫শ’ অর্থাৎ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হারে হাসিল আদায় করা হচ্ছে এই হাটের ক্রেতাদের কাছ থেকে। সারি সারি দেশি-বিদেশি গরু-ছাগল সাজিয়ে রাখা পুরো হাট চষে বেড়াচ্ছেন কয়েকশ’ ভলান্টিয়ার। নিরাপত্তার কাজে তৎপর পুলিশ-র?্যাব’র সদস্যরাও। কোরবানির পশু পরিবহনে রয়েছে ছোট বড় পিকআপ আর ট্রাক। বিভিন্ন দামের ভিন্ন ভিন্ন সাইজের পশু কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। মো. আনিস নামে মিরপুর থেকে আসা এক ক্রেতা বলেন, হাটে অনেক গরু এসেছে। ১২ লাখ, ১৪ লাখ, ১৬ লাখ টাকার গরু যেমন রয়েছে তেমনই মধ্যবিত্তদের চাহিদানুযায়ী ৮০-৯০ হাজার টাকার গরুও রয়েছে। আমার এই গরুটি নাটোরের এক পার্টির কাছ থেকে নিয়েছি। দাম চেয়েছিল ২ লাখ ৪০ হাজার আমি দেড় লাখ বলি। পরে দামাদামি করে ১ লাখ ৬০ হাজারে দিয়েছে। তিনি বলেন, অনেকেই দাম বাড়িয়ে চাচ্ছে। একটু দরাদরি করে কিনতে হবে। আশরাফুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা বলেন, হাটে ভালোই গরু এসেছে। গরু পছন্দও হচ্ছে। কিন্তু দামে হচ্ছে না। সব মিলে গেলেই কিনবো একটা গরু। মো. নাজমুল নামে এক ব্যাপারী বলেন, পাবনা থেকে ১০টি গরু নিয়ে এসেছি। আমার সব গরুই মাঝারি সাইজের। আজ সকালে ২টা বিক্রি হয়েছে। আশা করি ইদের আগের দিনের মধ্যে সব বিক্রি করতে পারবো। তবে অন্য বছরের তুলনায় ক্রেতারা দাম কমই বলছে বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে গাবতলী পশুর হাটে প্রতিবারই বিভিন্ন বাহারি নামে বিশাল বিশাল গরু চোখে পড়ে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। এবার খুলনা থেকে গত রোববার গাবতলীর হাটে ‘মালিঙ্গা’ নামের ফ্রিজিয়ান ফ্ল্যাগ-বি জাতের এক গরু আনা হয়েছে। বিশাল বড় দানবাকৃতির এই গরুর ওজন আনুমানিক ৩৫ মণের মতো। গরুটির মালিক মোহাম্মদ মিন্টু বলেন, মালিঙ্গা কোরবানির জন্য প্রস্তুত। গরুটির ১৪ থেকে সাড়ে ১৪ লাখ দাম চাচ্ছি। অনেকেই দামাদামি করে, ছবি তোলে কিন্তু কেউ কেনে না। মিন্টু বলেন, আমার গরুটি ৪ বছরের মতো বয়স হবে। গত দুই বছর ব্যাপক শ্রম দিয়ে এবারের ঈদের জন্য প্রস্তুত করেছি। কয়েকজন ক্রেতা ইতিমধ্যে দামাদামি করে গেছেন। আট-নয় লাখ পর্যন্ত দাম উঠেছে। ইচ্ছা আছে ১২ লাখের মধ্যে এলেই ছেড়ে দেবো। এদিকে পাকিস্তানের সিন্ধু অঞ্চল থেকে গাবতলী হাটে ‘শাহজাহান’- নামে ধবল বর্ণের ৮ ফুট উচ্চতার এক  বিশালাকৃতির  উট আনা হয়েছে। আনুমানিক এক টন ওজনের এই উটের দাম চাওয়া হচ্ছে ৩০ লাখ টাকা। হাটের অন্যান্য পশুর চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রমী হওয়ায় শাহজাহানকে ঘিরে সবসময়ই ভিড় লেগে আছে। উটটির মালিক কামরুর বলেন, আমরা অনেক যত্ন করে শাহজাহানকে লালন-পালন করেছি। শুধু দাম নয়, এর সৌন্দর্য আর স্বাস্থ্যই একে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। তিনি বলেন, এটা কেবল পশু না, এটা আমাদের পরিবারের এক সদস্যের মতো। তাই এর জন্য যোগ্য ক্রেতা প্রয়োজন।