Image description

গাজীপুরের শ্রীপুরে ৮ তলা ভবনের ছাদ থেকে কর্তৃপক্ষের ‘অপমানে’ লাফ দিয়ে মারা যায় এক শ্রমিক। তাঁর মৃত্যুর পর এই ঘটনার বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড নামক একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। সেই আন্দোলনে শ্রমিকদের ওপর লাঠিপেটা ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। অভিযোগ আছে গুলি চালানোরও।

এই ঘটনায় শতাধিক শ্রমিক ও ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা শিল্প পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও লাঠিপেটার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও গুলির বিষয়টি অস্বীকার করেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ধনুয়া গ্রামের নতুন বাজার এলাকার জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড নামক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।

ভবনের ৮ তলা থেকে লাফ দিয়ে মারা যাওয়া মো. জাকির হোসেন (২৫) নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাদেচিরাম গ্রামের মোক্তার উদ্দিনের ছেলে। তিনি শ্রীপুরর জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেডের কারখানায় কাজ করতেন। জাকিরের সহকর্মী রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে আমাদের কারখানার শ্রমিক জাকির হোসেন অসুস্থতার জন্য একদিনের ছুটি নেয়। এরপর ছুটি শেষে কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে সকল শ্রমিকের সামনে কান ধরে ওঠবস করান। এই অপমানে সে কারখানার আটতলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।’

রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘এর প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করলে পুলিশ প্রথমে আমাদের ওপর লাঠিপেটা শুরু করে। এরপর আমাদের লক্ষ্য করে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে গুলি চালায়। এতে আমাদের শতাধিক শ্রমিক আহত হয়। সীমানা প্রাচীর টপকে পালিয়ে যাওয়ার সময় অনেক শ্রমিক আহত হয়।’

গাজীপুরে শ্রীপুর শ্রমিক বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। ছবি: আজকের পত্রিকাগাজীপুরে শ্রীপুর শ্রমিক বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। ছবি: আজকের পত্রিকা

 

কারখানার শ্রমিক রতন মিয়া বলেন, ‘আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। আমাদের অনেক গর্ভবতী নারী শ্রমিক আহত হয়েছে। অনেকেই বিবস্ত্র করে পিটিয়ে আহত করে পুলিশ-সেনাবাহিনী। আশপাশের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া শ্রমিকদের খোঁজে খোঁজে লাঠিপেটা করে আহত করে। কত শ্রমিক আহত হয়েছে তার সংখ্যা বলে শেষ করা যাবে না।’

নারী শ্রমিক লিপি আক্তার বলেন, ‘পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপের পর অনেক শ্রমিক আহত হয়। আহত শ্রমিকদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। অনেক শ্রমিক আশপাশের বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা চালায়। আমাদের অর্ধশতাধিক শ্রমিককে পিটিয়ে আহত করে আটক করে। ওদের নির্যাতনের মাত্রা জংলি জানোয়ারের চেয়ে ভয়াবহ।’

গাজীপুরে শ্রীপুর শ্রমিক বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। ছবি: আজকের পত্রিকাগাজীপুরে শ্রীপুর শ্রমিক বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা জুবায়ের এম বাশার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একজন শ্রমিক আত্মহত্যা করছে এটাই জানি। এর জেরে তারা কারখানা ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করে। খুবই উত্তেজনা চলছে পরে কথা বলব।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকাল থেকেই পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। ১১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তবে কোনো গুলির ঘটনা ঘটেনি। এই মুহূর্তে কতজন শ্রমিক আটক করা হয়েছে তা বলা সম্ভব না। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা শিল্প পুলিশের একটি এপিসি ভাঙচুর করেছে।’