Image description

ঢাকা মাদ্রাসা ই আলিয়ার একটি ছাত্রাবাস চার দশকেরও বেশি সময় ধরে পাহারা দিচ্ছেন ‘মিঠু ভাই’। তার প্রকৃত নাম স্বপন বেপারী। বরিশালের বানারীপাড়া থানার চাখার গ্রামে বাড়ি তার। ১৯৮৫ সালে যোগ দিয়েছিলেন মাদ্রাসার আল্লামা কাশগরী (রহ.) হলে নৈশপ্রহরী হিসেবে। তখন থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলেছে তার দায়িত্ব পালন।

বয়স বেড়ে গেলেও দায়িত্বের জায়গায় এখনো অবিচল ‘মিঠু ভাই’। স্ত্রী মারা গেছেন বহু বছর আগে। দুই মেয়ের মধ্যে একজনের বিয়ে হয়েছে, আরেকজন অবিবাহিত। তবুও ২০১৯ সাল থেকে ঈদে বাড়ি ফেরা হয়নি তার। এমনকি সেদিনগুলোতেও না, যেদিন মানুষ যতই ব্যস্ত থাকুক, প্রিয়জনে কাছে যেতে ফেরেন বাড়ি।

‘যখন ঈদ আসে, সব ছাত্র ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি যায়। আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকি’, অশ্রসজল চোখে কথাগুলো বলছিলেন মিঠু ভাই। এই ‘নির্জনতা’র মধ্যেও তিনি একা নন। পুরো হলজুড়েই যেন তার ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে। 

পরনে সাধারণ টি-শার্ট, পায়জামা, হাতে একগুচ্ছ চাবি—এই পরিচিত ছবি দিয়েই হলের শিক্ষার্থীরা মিঠু ভাইকে চেনেন। আর তিনি চেনেন প্রতিটি ছাত্রের চেহারা, কণ্ঠস্বর ও হাটা-চলা। তার রাতে নির্ঘুম থেকে নিরাপত্তা দিয়ে যিনি চোখ রাখেন শত শিক্ষার্থীর দিকে, সেই মানুষটিই বছরের পর বছর ঈদের দিনে নিজের ঘরের চৌকাঠ পেরোতে পারেন না। কারণ হল ফাঁকা থাকলেও দায়িত্বটা যে থেকে যায় তার কাঁধে।

কামিল শ্রেণির শিক্ষার্থী শিহাব মাহমুদ বলেন, ‘অত্যন্ত হাসিখুশি আর মিশুক একজন মানুষ আমাদের মিঠু ভাই। রমজানে তিনি আমাদের জন্য যা করেন, তা কেউ ভুলবে না। প্রতি রমজানে  ভোর রাতে ঘুম ভেঙে তিনি প্রতিটি রুমে গিয়ে সেহরির ডাক দেন। যেন তিনি আমাদের অভিভাবক।’

হল-ক্যাম্পাসে ‘মিঠু ভাই’ নামে পরিচিত স্বপন বেপারীর আসল পরিচয় অনেকেই জানেন না। নৈশপ্রহরীর পদে তার আগে ছিলেন মিঠু নামে এক ব্যক্তি। স্বপন বেপারী তার জায়গায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই ছাত্ররা ভালোবেসে তাকেও ‘মিঠু ভাই’ বলে ডাকতে শুরু করেন। সে নামেই তিনি আজ সবার কাছে প্রিয়।