শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী না হতেন - তার কমান্ডে কি পুলিশ ও ছাত্রলীগ মিলেমিশে ভায়োলেন্স করতো?

ধরেন যে আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী। আমি অগাস্ট মাসে সুসংগঠিত হয়ে কোপাকুপিতে অংশ নিয়েছি। ইন্ডিভিজুয়াল হিসাবে আমার বিচার হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। আইনের ধারা সুস্পষ্ট। কিন্তু আমার সুসংগঠিত "হওয়ার" বিষয়টি কতোটা দল-কেন্দ্রিক এর কোনো ফ্রেইমওয়ার্ক নাই। আমি নিজেও ঠিক বুঝি না। কারণ যেই কমান্ড রেস্পন্সিবিলিটি - সেই চেইনের উপরে গেলে দেখা যাবে যে, কমান্ড আসলে দলীয় প্রধান থেকে এসেছে নাকি সরকার প্রধানের কাছ থেকে এসেছে - এটা প্রমাণযোগ্য না, আলাদাও করা যায় না। মানে শেখ হাসিনার যে কমান্ডের ওপর ভিত্তি করে ছাত্রলীগ "এক্ট" করেছে - সেই কমান্ডটাতো আসলে প্রধানমন্ত্রীর কমান্ড। শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী না হতেন - তার কমান্ডে কি পুলিস ও ছাত্রলীগ মিলেমিশে ভায়োলেন্স করতো?

 

কিংবা ধরেন যে ওবায়দুল কাদের বললেন যে বিরোধী দলকে রাস্তায় প্রতিহত করার জন্য ছাত্রলীগকে আহবান জানাচ্ছি। অবশ্যই এই আহবানকে ভায়োলেন্সের আহবান হিসাবে পড়ছি না, উচিতও না। কিন্তু তিনি যদি ফোনে ছাত্রলীগ সভাপতিকে বলেন যে বিএনপি কোপাও বা ছাত্র কোপাও - এই নির্দেশকে আপনি কীভাবে পড়বেন। এটা কি তার ব্যক্তিগত আদেশ, না মন্ত্রীর আদেশ না আওয়ামী লীগের জেনরেল সেক্রেটারীর আদেশ? কীভাবে আলাদা করবেন? এখানে ওবায়দুল কাদের ও ছাত্রলীগ সভাপতির ইন্ডিভিজুয়াল দায়ভার সুস্পষ্ট ও বিচার করা খুবই সম্ভব। কিন্তু তাদের যে অপরাধের সক্ষমতা - সেটা কিন্তু ইন্ডিভিজুয়াল না। দলীয়।

 

আবার "দলীয়" অপরাধের কোয়ালিফিকেশান কীভাবে হবে? আপনি কি যেকোনো সংঘবদ্ধ অপরাধে দলকে দায়ী করতে পারেন? মাদারীপুরের ড্রাগ ব্যবসায় বিএনপি, জামাত কিংবা এনসিপির লোকাল নেতারা পুরাপুরি সংঘবদ্ধ হয়ে পার্টিসিপেট করতে পারে কিন্তু সেই অপরাধ কি "দলীয়"? দলের হাই-কমান্ড তো জানেই না হয়তো। অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে অন্তত মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে "দল" কে দায়ী করতে হবে - এই ব্যাপারে হয়তো আমাদের মধ্যে একটা ন্যাচরাল কনসেন্সাস আছে। কিন্তু সেই অপরাধের কোয়ালিফিকেশন কি গুলির সংখ্যা দিয়ে হবে, খুনের সংখ্যা দিয়ে হবে না কমান্ড রেস্পন্সিবিলিটি দিয়ে হবে?

 

খেয়াল করেন যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে "দলীয়" ভাবে কিন্তু কমান্ড জেনারেট হয় "নির্দলীয়" বা "সরকারী" ভাবে। আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে এই জায়গাটি কীভাবে এড্রেস করা হবে - আমি বুঝি না। দলের হাই-কমান্ড তো মিটিং করে কোপাকুপির সিদ্ধান্ত নেয় না কোনোদিন। কিন্তু তাদের তাদের কোপাকুপির যে সক্ষমতা - সেটা পুরোপুরিই "দলীয়" সক্ষমতা।

 

আবার শাস্তি যদি "দল"কে দেয়া হয় - আমরা কি "দল"কে একটা লিগ্যাল ফিকশান হিসাবে পড়বো? কোম্পানির মতো? দলকে যদি শাস্তি দেয়া হয় - অবশ্যই সেই শাস্তির প্রভাব কিছু নিরপরাধ মানুষের ওপর বর্তাবে। হবেই হবে। কোন থ্রেশহোল্ড পেরোলে এই শাস্তি জাস্টিফায়েড? আমরা কি জানি?

কমান্ড রেস্পন্সিবিলিটি কীভাবে ডিফাইন্ড হবে - এর কোনো ফ্রেইমওয়ার্ক আমাদের দেশে জানা নেই। এবং এটা একটা সমস্যা। কারণ এই জায়গাটায় অস্পষ্টতা থাকার কারণেই "দলীয়" বিচার করাটা খুব কঠিন মনে হয়। বিশেষ করে যেখানে মানবতা-বিরোধী অপরাধ হয়েছে। কোনো রেট্রোস্পেক্টিভ বিচারের প্রয়োজন নাই কিন্তু এখানে আদালতের ইন্টারভেনশনের প্রয়োজন আছে যে ভবিষ্যতে যদি কোনো দল মানবতাবিরোধী হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয় - তার দলীয় দায়ভার কীভাবে ন্যস্ত হবে।

 

হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের যথোপযুক্ত শাস্তি যেমন প্রয়োজনীয় - ঠিক তেমনি প্রয়োজন "দলীয়" অপরাধের একটা লিগ্যাল ফ্রেইমওয়ার্ক প্রস্তাব করা। এই জায়গাটায় বাংলাদেশের আদালতের একটা যুগান্তকারী রায়ের প্রয়োজন আছে। প্রধান বিচারপতি এই জায়গাটায় যদি উদ্যোগী হন - দেশের উপকার হবে।