
সিন্ডিকেট তৈরি করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) গাবতলী পশুর হাট দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন একমাত্র স্থায়ী এ পশুর হাটটি সর্বোচ্চ দর ২৫ কোটি টাকার পরিবর্তে ১৫ কোটি ৭১ লাখ টাকায় বাগিয়ে নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
নগর ভবন সূত্র জানায়, গতকাল রোববার হাটের ইজারা বুঝে নিয়েছেন এরফান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ও রাজধানীর দারুস সালাম থানা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক সাজু।
একইভাবে রাজধানীর অন্যান্য পশুর হাটও সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে। বিগত বছরগুলোর মতো চলতি বছরেও পেশিশক্তির কাছে জিম্মি হাটের ইজারা। যে এলাকায় যাদের পেশিশক্তি ও জনবল বেশি রয়েছে, সে এলাকার ইজারা তারাই পেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের দুটি করে মোট চারটি হাটের ইজারা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত না হলেও গরু ঢুকিয়ে দিয়েছেন সম্ভাব্য ইজারাদাররা। ঢাকায় পশু কেনাকাটা আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়ার কথা। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই ট্রাকে ট্রাকে আসছে কোরবানি পশু।
গাবতলীর পশুর হাট ইজারার জন্য সর্বোচ্চ ২৫ কোটি টাকা দর পাওয়া গিয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বানের পর গাবতলী হাটের জন্য সর্বোচ্চ এ দর দিয়েছিল টিএইচ এন্টারপ্রাইজের মালিক আলী হায়দার। কোরবানির হাটসহ আগামী এক বছরের (আগামী বছরের ১৩ এপ্রিল বা বাংলা সনের চৈত্রের শেষ) জন্য এ হাটের ইজারাদার নিয়োগ করা হবে। তবে গতকাল এই হাটের জন্য চূড়ান্ত ইজারাদার নিয়োগ করা হয়েছে।
গাবতলী হাট ইজারার জন্য প্রথম দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল গত ৩ মার্চ। ১৯ মার্চ বিকালে দরপত্র খুলে পাঁচটি দরপত্র পাওয়া গিয়েছিল। সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৩০০ টাকার বিপরীতে তখন সর্বোচ্চ দর পাওয়া গিয়েছিল সোয়া ২২ কোটি টাকা। তবে দরপত্র প্রক্রিয়ায় ভুল থাকার কথা উল্লেখ করে তখন হাটটি ইজারা দেননি ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই হাটে বেশ কিছুদিন পর্যন্ত খাস বা সিটি করপোরেশনের নিজ উদ্যোগে অর্থ আদায় করা হয়েছিল।
দ্বিতীয় দফায় এ হাটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়ে নিয়েছেন এরফান ট্রেডার্স। তারা দর দিয়েছে ১৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মালিক দারুস সালাম থানা বিএনপির আহ্বায়ক এসএ সিদ্দিক (সাজু)।
এ ব্যাপারে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ আমার দেশকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৩০০ টাকার বিপরীতে টিএইচ এন্টারপ্রাইজ ২৫ কোটি টাকা দর দিলেও তারা পরে লোকসান হবে জানিয়ে হাটটি ইজারা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। এজন্য এ হাটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছে এরফান ট্রেডার্স। তারা দর দিয়েছে ১৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
এদিকে বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতাদের কবজায় থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোরবানির পশুর হাটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপির নেতারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আটটি হাটের সবকটির ইজারা বিএনপির নেতারা পেয়েছেন। তবে ইজারা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির পদস্থ নেতাদের মাধ্যমে দরপত্র জমা না দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে বিএনপি–সমর্থিত ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দরপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। পরে স্থানীয় বিএনপি ও দলটির অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিলেমিশে হাট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের খালি জায়গার ইজারা কাগজে–কলমে বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান পেয়েছেন। তবে এর নেপথ্যে রয়েছেন শাহজাহানপুর থানা বিএনপি ও দলটির অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
লালবাগের পোস্তা এলাকায় রহমতগঞ্জ ক্লাবের খালি জায়গায় এবার কোরবানির পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি টিপু সুলতান। তিনি চকবাজার থানা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি।
হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্বপাশের খালি জায়গায় স্থাপিত অস্থায়ী হাটটির ইজারা পেয়েছেন মেসার্স সাফি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নাফিজ কবির। কাগজ–কলমে নাম তার হলেও বাস্তবে হাটটির কর্তৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
রাজধানীর নারিন্দায় সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালে অস্থায়ী হাটের সরকারি মূল্য ছিল ৪ কোটি ৬৪ লাখ ১৫ হাজার ২৮০ টাকা। কিন্তু হাটটি ২ কোটি ২৫ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে।
ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গার সরকারি মূল্য ছিল ৩ কোটি ৭৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা। অথচ এ হাট ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। এ হাটের ইজারা পেয়েছেন মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিএনপি–সমর্থিত সাবেক একজন কাউন্সিলর।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকদের এসব প্রসঙ্গে বলেন, সরকারি মূল্যের চেয়ে কম দর পাওয়া দুটি হাটের অনুমোদন পেতে তারা আইন অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হবে।