Image description

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় (এনএসআই) ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচিত ৩৫ জনকে যুগ্ম পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য তোড়জোড় চলছে। গত সরকারের আমলে শুধু দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি হয়েছে। পেশাদার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পদোন্নতি পাননি। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটিতে সেই ছাত্রলীগ করা কর্মকর্তাদেরই পদোন্নতি হচ্ছে বলে খবরে পেশাদার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ আমলে ২০১১ সালে এনএসআইয়ের উপসহকারী পরিচালকের (ডিএডি) ৩৬টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু প্রথম শ্রেণির পদে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ২০১২ সালে সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত ও দলীয় বিবেচনায় মেধাহীন ১৪২ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রায় চারগুণ বেশি সংখ্যক ডিএডি নিয়োগ দেওয়া হয়। তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের পুনর্বাসনে প্রয়োজন ছাড়াই এনএসআইয়ে নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। এই ১৪২ জনের প্রায় সবাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের পদধারী নেতা ছিলেন। এনএসআই সূত্রে জানা গেছে, সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি এত বড় অনিয়ম করে কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

এর আগে আওয়ামী লীগের আমলে ২০০১ সালে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাসহ আওয়ামী ঘরানার লোককে এনএসআইয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অদক্ষতা প্রমাণিত হওয়ায় ২০০১ সালের পর তাদের ১৭ জনের চাকরি চলে যায়। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ওই সময় তারা আদালতের দ্বারস্থ হন। তবে আদালত চাকরিচ্যুতির বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষেই রায় দিয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম আদালতের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাহী আদেশে চাকরিচ্যুতদের মধ্য থেকে ১৩ জনকে পুনর্বহাল করেন।

২০১২ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত এনএসআইয়ের এসব কর্মকর্তার মধ্য থেকে ২০২৪ সালে ৩৩ জনকে যুগ্ম পরিচালক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। বাকিদের মধ্য থেকে আরো ৩৫ জনকে যুগ্ম পরিচালক পদে পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের এনএসআইয়ের ওই ১৫৫ কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী বলায় গড়ে ওঠে। এই বলয় ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার পক্ষে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে। এসব কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনা তিনটি নির্বাচনি বৈতরণি নির্বিঘ্নে পার হয়ে যান। এসব আওয়ামী কর্মকর্তা জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধ্য করা, প্রার্থীদের হুমকি-ধামকি, চাপপ্রয়োগ করে প্রার্থী হতে বাধ্য করা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রার্থিতা প্রত্যাহারসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিল। অভিযোগ রয়েছে, এনএসআইয়ের তৎকালীন ডিজি ও বর্তমানে পলাতক মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের এসব কর্মকর্তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হলেও এনএসআইয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর দপ্তর এখনো ছাত্রলীগের কবজায়। তাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বসানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংস্থাটির পেশাদার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।