Image description
জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য । সুড়ঙ্গ তৈরি করে নেপালের কারাগার থেকে পালানোর গল্প * সব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে-গোয়েন্দা কর্মকর্তা । 

২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘বড় গেম খেলতে’ ২০২২ সালের এপ্রিলে ভারত থেকে দেশে আনা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে। কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে তাকে রাখা হয় আয়নাঘরে। কিন্তু নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় তৎকালীন সরকারের সেই পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন হয়নি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আয়নাঘর থেকে মুক্তি পান তিনি। মুক্তির পর সব রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গেই তার যোগাযোগ হয়। এরপরও তাকে কেন গ্রেফতার করা হলো তিনি তা বুঝতে পারছেন না। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন সুব্রত বাইন। এছাড়া আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন তিনি। সব তথ্যই যাচাই করা হচ্ছে।

জিজ্ঞাসাবাদে সুব্রত তার সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনিসহ সব ধরনের তথ্যই দিচ্ছেন। বলেছেন, আমি ১৮ বছর বয়সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যোগ দিই। একদিন মগবাজারে ব্যাডমিন্টন খেলছিলাম। তখন আমার মা তুলে গালি দেয় একজন। এর প্রতিশোধ নিতে একজনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করি। ১৯৮৩ সালের ওই ঘটনায় আমাকে জেলে যেতে হয়। প্রায় ১৮ মাস জেল খাটি। জেলে থাকা অবস্থায় পরিচয় হয় ওই সময়কার সন্ত্রাসী-অপরাধীদের সঙ্গে। পরে জেল থেকে বেরিয়ে এসে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যোগ দিই। তিনি বলেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় সংশোধিত না হয়ে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রপ্ত করার ব্যাপক সুযোগ পাই। কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে তা কাজে লাগাই।

একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ২০২৪ সালের নির্বাচনকে ঘিরে ‘বড় গেম খেলার’ পরিকল্পনা ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের। কিন্তু বিএনপি ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় সেই খেলার প্রয়োজন হয়নি। তারপর তাকে রাখা হয় আয়নাঘরে। সুব্রতকে নিয়ে তৎকালীন সরকারের নির্বাচনকেন্দ্রিক কী পরিকল্পনা ছিল জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, সুব্রতকে বলা হয়, নির্বাচনের ডামাডোলের সময় একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মালিককে ফোন করতে হবে। বলতে হবে, আমি দেশে আছি। বিএনপি আমাকে নিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগের অমুক নেতাকে হত্যা করতে হবে। এ সংক্রান্ত বক্তব্যের অডিও ও ভিডিও রেকর্ড করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। পরে তাকে গ্রেফতার করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানো হতো।

নেপালের কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ করে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ইন্টারোগেশন সেলকে সুব্রত বাইন বলেন, ২০০৮ সালের দিকে আমি ভারত থেকে নেপালে পালিয়ে যাই। পরে সেখানে গ্রেফতার হই। নেপালের কারাগারে থাকা অবস্থায় আমি ছিলাম জেলখানার চৌকিদার। নেপালের ওই কারাগারে বেশকিছু বিহারি নাগরিক বন্দি অবস্থায় ছিল। তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। ২০১২ সালে তারা আমাকে একদিন কারাগার থেকে পালানোর প্রস্তাব দেয়। এক্ষেত্রে সুড়ঙ্গ তৈরির কথা বলে। আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। আমি কারাগারের চৌকিদার হওয়ায় বন্দিদের কাছ থেকে অর্থ তুলতাম। সেই টাকার একটি অংশ নেপালের ওই কারাগারের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তাকে দিতাম। এ কারণে আমার প্রতি তাদের আস্থা ছিল। ওই আস্থার সুযোগে সুড়ঙ্গ তৈরির সুযোগ পাই। প্রথমে গোলাকার সুড়ঙ্গ তৈরির চেষ্টা করি। সেটা ভেঙে যায়। পরে ত্রিকোণ আকৃতির ৭০ ফুট সুড়ঙ্গ তৈরি করে বিহারিদের নিয়ে কারাগার থেকে পালিয়ে যাই। এরপর আবার ভারত চলে আসি। পরে আমার স্ত্রী আমাকে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে ভারতে চারটি মামলা ছিল। একটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছিলেন। তিনটি মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ওই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০২২ সালের বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেয় সুব্রতকে। সূত্র আরও জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিষয়ে অনেক তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। এসব তথ্য অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ছদ্মনামে তিনি কীভাবে পাসপোর্ট তৈরি করলেন সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, মোহাম্মদ আলী ছদ্মনামে নেওয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে সুব্রত বাইন ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এর প্রায় তিন মাস পর আবার বাংলাদেশে ফেরত আসে। এভাবে তার ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত চলতেই থাকে।