Image description
 

দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা আশঙ্কা জানিয়ে বলেছেন, ‘হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে সফল অভ্যুত্থানের পর জনআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে এ সরকার অধিষ্ঠিত হয়েছে। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ সুযোগে ভারতীয় আধিপত্যবাদ আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’

 

 

 

পলিসি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সোসাইটির (পিএমআরএস) উদ্যোগে শনিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এসএম এ ফায়েজ।

প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ। ‘গণতন্ত্র, নির্বাচন ও সংস্কার: আশু করণীয়’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক সচিব ও পিএমআরএস চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল জবিউল্লাহ।

 

সেমিনারে বক্তারা বলেন, সংস্কার, ফ্যাসিস্টদের বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোসহ সব শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের মধ্যে জুলাইয়ে ঐক্য ও সংহতি ধরে রাখতে হবে।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. এসএম এ ফায়েজ বলেন, একটি সফল অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ড. ইউনূসের ওপর আস্থায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছে। তার ওপর আমাদের আস্থা রাখতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারের ভুল-ত্রুটিগুলোও ধরিয়ে দিতে হবে। কোনো বিরোধ থাকলে সেটাও দূর করতে হবে।

 

সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে খ্যাতনামা এ শিক্ষাবিদ আরো বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা মিশন নিয়ে নেমেছে। আশার কথা হলো, তাদের কেউ কেউ ধরাও পড়েছে। এ অবস্থায় অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মাঝে বিরোধ কাম্য নয়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

 

প্রধান বক্তা ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আন্দোলনের সময় কিশোর ও তরুণদের চেহারাগুলো মাঝে মাঝে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। গণতন্ত্রে উত্তোরণ ও একটি বাসযোগ্য সমাজ ব্যবস্থাই তো তাদের আকাঙ্ক্ষায় ছিল। একটি সফল বিপ্লবের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে এ সরকারের বেশ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। শুরু থেকেই সরকার বলে আসছে, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন হচ্ছে এ সরকারের অগ্রাধিকার। এগুলো শেষ করতে একটু সময় প্রয়োজন। তবে সবকিছুর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা প্রকাশ করা প্রয়োজন। সংস্কার ও বিচার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আর নির্বাচনের জন্য একটি সময়সীমার ঘোষণা আসা উচিত।

 

ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, দেশকে একটি সংকটে ফেলতে ‘র’ কাজ করছে। সন্ত্রাসীদের রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছে। কমন শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে চলে যাচ্ছে। আমরা লেন্দুপদর্জী মার্কা গণতন্ত্র চাই না। এতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। এ বিষয়ে আমাদের জাতীয় ঐকমত্য আরো সুদৃঢ় ও মজবুত করতে হবে।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের বীর সন্তানদের সম্মান করতেই হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন আন্দোলনে তারা যেভাবে জীবনকে উৎসর্গ করেছে, বিশ্বে এটি বিরলতম ঘটনা। একটি ভিডিওতে দেখলাম, ৫ আগস্টের আগে পুলিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলছে, ‘স্যার গুলি করলে যেটা মরে সেটাই সরে। বাকিগুলোকে সরানো যায় না।’ একটি পরিবর্তনের বুকভরা আশা নিয়ে দেশের শিশুকিশোররা এভাবেই তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে। তারা সমালোচনা করবে, কিন্তু তাদের কথাগুলো আমাদের শুনতে হবে। অভ্যুত্থান সফল হয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। এখন ছাত্র ও তরুণদের অবজ্ঞা করা কোনোভাবেই উচিত হবে না। তাদের মনের কথা ও ভাষা বিএনপিকেও বুঝতে হবে।

 

পিএমআরএসের ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন সিনিয়র সাংবাদিক এমএ আজিজ, সাবেক সচিব আবদুল খালেক, শিক্ষাবিদ আবদুল লতিফ মাসুম, সাবেক সচিব জাকির হোসেন কামাল, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ড. একেএম শামসুল ইসলাম ও সেমিনার উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক এবিএম আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।