Image description
 

প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করে থাকেন ট্রেডাররা। এর মধ্যে এমন কিছু পণ্য রয়েছে সেসব পণ্য আমদানিতে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক থাকলেও নেই উৎসে কর বা অগ্রিম আয়কর। আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেটে দেড় শতাধিক পণ্য আমদানিতে উৎসে করারোপ করতে যাচ্ছে সরকার।

 

এতে ট্রেডাররা রিটার্ন দাখিলে উৎসাহিত হবেন এবং করজাল বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে বলে মনে করছেন এনবিআরসংশ্লিষ্টরা। তবে উৎসে করারোপের কারণে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভুটান থেকে ৩৩টি পণ্য আমদানিতে কোনো ধরনের শুল্ক নেই। ২০১৩ সালে দুই দেশের সরকারের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ওই চুক্তির কারণে ভুটান থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর উৎসে আয়কর বসছে না।

বর্তমানে এইচএস কোডের আওতাধীন ১৮৯টি পণ্য আমদানিতে কোনো ধরনের উৎসে কর নেই। আগামী বাজেটে দেড় শতাধিক পণ্যের ওপর ১ থেকে ২ শতাংশ হারে উৎসে করারোপ হতে পারে। আমদানিকারকদের জন্য এটি ন্যূনতম কর হিসেবে বিবেচিত হবে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।

যেসব পণ্য উৎসে করের আওতায় আসবে তার মধ্যে রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি, ময়দা, ছোলা ও ভুট্টার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে- হুইলচেয়ার, এনজিওগ্রাফিক ও গাইড ক্যাথেটার, কৃত্রিম দাঁত, হিয়ারিং এইড ইত্যাদি।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, কম্পিউটারের মনিটর, প্রিন্টারের রিবন, রাউটার, মডেম, টোনার, অপরেটিং সিস্টেমস ইত্যাদি। এ ছাড়া শিল্পখাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক, বিমান, বাস, মাছ ও মাংস উৎসে করের আওতায় আসবে।

পোশাকশিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল তুলা ও মানবসৃষ্ট তন্তুও আসতে পারে উৎসে করের আওতায়।

পণ্য আমদানিতে উৎসে করারোপের বিষয়টি স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, উৎসে কর বা অগ্রিম আয়কর না থাকার কারণে ট্রেডাররা রিটার্ন জমা দেন না এবং অনেক সময় তাদের খোঁজও থাকে না।

এখন উৎসে করারোপ করার কারণে তারা করজালের আওতায় আসবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বাড়বে।

একই বিষয়ে এনবিআরের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত বছর শেষ হওয়ার পর হিসাব শেষ করে রিটার্ন দাখিল করতে দেড় বছর সময় লেগে যায়। এর ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ের একটা দীর্ঘ বিরতি পড়ে যায়। উৎসে আয়কর আরোপ করা হলে সরকার সারা বছরই রাজস্ব পাবে। ফলে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে একটা গতিশীলতা তৈরি হবে।

এনবিআর কর্মকর্তারা আরো বলেন, উৎসে করারোপের কারণে পণ্যের দাম বাড়ার কারণ নেই। কারণ এটি হচ্ছে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয়কর। অগ্রিম আয়করের মাধ্যমে আগেভাগে আদায় করে নেওয়া হয়।

পরে রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় অগ্রিম আয়কর সমন্বয় করে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার আয়কর রিটার্ন দাখিল করবে। এতে করবোঝা লাঘব হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, যদি উৎসে কর ৩ শতাংশ হয়, তাহলে বছর শেষে যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয়কর ১০০ টাকা হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ৯৭ টাকা আয়কর প্রদান করবে।

কোনো কারণে যদি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অগ্রিম আয়করের পরিমাণ তার প্রকৃত আয়করের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে অতিরিক্ত অর্থ সমন্বয় করার কথা। কিন্তু এনবিআর সে অর্থ সমন্বয় করছে না, বরং এ নিয়ে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করে আসছেন।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, অগ্রিম আয়করের কারণে কোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক বা ভ্যাট আরোপ করা হলেই পণ্যের দাম বাড়বে। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা যে কোনো অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় বলে মন্তব্য করেন তারা।

সাধারণত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক দিতে হয়। এসব শুল্কের মধ্যে রয়েছে- আমদানি শুল্ক, রেগুলেটরি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, আবগারী শুল্ক। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট আরোপ করা হয়।

জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও বারভিডার প্রেসিডেন্ট আবদুল হক আমার দেশকে বলেন, বাস্তবে উৎসে কর হচ্ছে পরোক্ষ কর। আর এ পরোক্ষ করের কারণে পণ্য আমদানির মূল্য বেড়ে যাবে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে ট্যাক্স আদায়ের যে দুর্বলতা তা আড়াল করতেই অগ্রিম আয়কর আদায় করা হয়। করদাতারা অগ্রিম আয়কর দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু অগ্রিম আয়করের মাধ্যমে অতিরিক্ত কর আদায় করলে তা সমন্বয় করা হয় না। ব্যবসায় ক্ষতি হলে আয়কর দেওয়ার কথা নয়, কিন্তু অগ্রিম আয়করের মাধ্যমে তা আদায় করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা কর ও শুল্ককে তাদের খরচের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। সে হিসেবে অগ্রিম আয়করকেও তারা খরচ হিসেবে দেখবে, এতে পণ্যের দাম বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে করপোরেট কর হার ২৭ শতাংশ এবং ব্যক্তির ক্ষেত্রে আয়করের সর্বোচ্চ হার ২৫ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে।