
"যেভাবে বেহাত নগদের শতকোটি টাকা" শিরোনামে মানবজমিনের রিপোর্টার শরিফ রুবেল এর একটি ''অনুসন্ধানী'' রিপোর্ট নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে।
আমি আগেই ডিসক্লেইমার দিচ্ছি যে, এই রিপোর্টে দেয়া তথ্যগুলো সত্য নাকি অসত্য তা আমি যাচাই করিনি, এবং অল্প সময়ে এত তথ্য যাচাই সম্ভবও নয়। আমার এই লেখাটি কোন 'ফ্যাক্ট চেক' নয়।
প্রাসঙ্গিক হওয়ায় আমি এও বলে নিচ্ছি যে, এই রিপোর্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আতিক মোর্শেদ অন্তত একটি ঘটনায় দুর্নীতির টাকার পরিমাণ নিয়ে বারগেইনিংয়ে জড়িত ছিলেন বলে ক্রেডিবল তথ্য আমার কাছে গত মাসে এসেছে। কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এ বিষয়টি কাউকে শেয়ার করিনি বা এখনও রিপোর্টও করিনি। এবং ইতোমধ্যে আতিকের স্ত্রীর নগদের বড় পদে নিয়োগ সংক্রান্ত এবং সেটির সাথে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে। ফলে আমার অনুমান, মানবজমিনের রিপোর্টে তার বিষয়ে থাকা তথ্যগুলো সব অসত্য হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এসব ডিসক্লেইমার দিয়েই বলছি যে, মানবজমিনের এই রিপোর্টটি মানবজমিনের অনুসন্ধান নয়, বরং এটি গোয়েন্দা সংস্থার সরবরাহ করা একটি রেডিমেইড রিপোর্ট।
আমি নিচে কয়েকটি স্ক্রিনশট কম্পারিজন যুক্ত করছি, যা মানবজমিনের রিপোর্ট এবং গত ২২ মে একটি গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রাজনৈতিক বিটের সিনিয়র রিপোর্টারের কাছে পাঠানো একটি 'চোথা'।
আমি একটি বড় পত্রিকার একজন স্বনামধন্য রাজনৈতিক রিপোর্টারের কাছ থেকে গোয়েন্দা সংস্থা সরবরাহকৃত 'চোথা'টি সংগ্রহ করেছি।
আপনারা মানবজমিনের 'অনুসন্ধান' বলে চালিয়ে দেয়া রিপোর্ট এবং গোয়েন্দা সংস্থার পাঠানো পিডিএফ ডকুমেন্টের টেক্সট যে কিভাবে প্যারার পর প্যারা মিলে যায় তা দেখতে পারেন। আমি লাল বক্স করে প্রতিটি স্ক্রিনশটে দিয়েছি। প্রতিটি ছবিতে বামের স্ক্রিনশটটি 'মানবজমিন' এর রিপোর্ট এবং ডানেরটি সংস্থার পাঠানো 'চোথা'।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক-- যিনি আমাদের মতো জুনিয়রদের জন্য শিক্ষকতুল্য-- জনাব মতিউর রহমান চৌধুরীর পত্রিকা এভাবে গোয়েন্দা সংস্থার রেডিমেড রিপোর্ট উনার পত্রিকার অনুসন্ধানী রিপোর্ট আকারে প্রকাশ করলেন। এই বিষয়টি সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতায় কতটা সঠিক বা অসঠিক কাজ সেইটা নীতিবিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন।
কিন্তু পাঠক হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, আমরা প্রতারিত হয়েছি। এটা এইজন্য নয় যে, এই রিপোর্টের সব তথ্য অসত্য, বরং এটা এই জন্য যে, আমাদেরকে 'সংবাদ প্রতিবেদন' হিসেবে 'গোয়েন্দা প্রতিবেদন' খাওয়ানো হয়েছে।