
বুয়েটে ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে নিহত আবরার ফাহাদকে হত্যা করা জায়েজ বা বৈধ ছিল বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতা। এ নিয়ে বুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিবাদ।
জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পাওয়ার পর আবরার ফাহাদের ছোট ভাই ও বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ একটি স্ট্যাটাস দেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘এটিএম আজহারের মুক্তিতে শাহবাগের কণ্ঠে আজ পরাজয়ের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে।’
তার এই স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার ইব্রাহিম লেখেন, ‘জাশির কুত্তা আবরার ফাহাদকে হত্যা কেন জায়েজ ছিল দেখ তোরা।’
শাহরিয়ার ইব্রাহিমের এই মন্তব্য ঘিরে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে ২৮ মে রাতে ছাত্র ইউনিয়ন এ নিয়ে একটি বিবৃতি দেয়।
সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক মেরাজ খান আদরের স্বাক্ষরে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারের মুক্তিকে কেন্দ্র করে আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজের একটি বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে মন্তব্য করা শাহরিয়ার ইব্রাহিম ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ নন, তার বক্তব্যের দায়ভার ছাত্র ইউনিয়নের নয়। আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইব্রাহিমের বক্তব্য ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থন করে না।
শাহরিয়ার ইব্রাহিম একসময় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমানে তিনি জাতীয়তাবাদী যুবদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। বিবৃতিতে এটিএম আজহারের মুক্তিকে কেন্দ্র করে আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজের মন্তব্যকে নিন্দনীয় বলে মন্তব্য করা হয়।
শাহরিয়ার ইব্রাহিমের ফেসবুক পেজে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফেসবুকে তার পরিচয় বিভাগে (এবাউট) তিনি বিভিন্ন সময় ছাত্র ইউনিয়নের যেসব পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
এদিকে শাহরিয়ার ইব্রাহিমের এই মন্তব্যের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বুধবার(২৮ মে) রাতে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী আমলের বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত সচেতন। আমরা লক্ষ্য করেছি, শহীদ আবরার ফাহাদের ছোট ভাই, একই সঙ্গে বুয়েট যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ‘আবরার ফাইয়াজ’ আওয়ামী দুঃশাসনের সময়ে বিচারের নামে প্রহসন সম্পর্কে ফেসবুকে পোস্ট করেন। এ কারণে তাকে ফ্যাসিবাদী কায়দায় ট্যাগিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে এবং একই সঙ্গে শহীদ আবরার ফাহাদের হত্যার বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, নতুন বাংলাদেশে আমরা আর কোনো ট্যাগিং সন্ত্রাস দেখতে চাই না। এভাবেই ফ্যাসিবাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা অসংখ্য বুয়েটিয়ান ভাইকে জামায়াত-শিবির ট্যাগিং দিয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন ও হলছাড়া করা হয়েছে বিগত ফ্যাসিবাদের সময়ে। সারা দেশের সব ক্যাম্পাসে এ ধরনের ট্যাগিংকেন্দ্রিক হয়রানি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। আমরা বর্তমানে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে আর কোনো আবরার ফাহাদকে হারাতে চাই না।
ছাত্র ইউনিয়ন নেতার এই মন্তব্যের পর ফেসবুকে মন্তব্য করেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। তিনি লেখেন, ‘উন্মত্ত দানব শাহবাগের সঙ্গে কেউ একমত না হলে শাহবাগ তাকে হত্যা করতে চায়। বুয়েটের শহীদ আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ এটিএম আজহারের মুক্তিতে শাহবাগের পরাজয় হয়েছে বলার পর ছাত্র ইউনিয়ন নেতার উক্তি ‘জাশির কুত্তা আবরার ফাহাদকে হত্যা কেন জায়েজ ছিল, দেখ তোরা!’ এটাই প্রমাণ করে। শাহবাগের উন্মত্ত মব ছিল ফ্যাসিবাদের বীজ থেকে গজানো বিষাক্ত গাছ, যার প্রভাবে বাংলাদেশ দীর্ঘস্থায়ী জুলুম ও নিপীড়নের মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের এস্টাবলিশমেন্ট এবং একে টিকিয়ে রাখার দায় শাহবাগীদের। এরা নিরপরাধীর ফাঁসি তো চেয়েছিলই, একই সঙ্গে নিরপরাধীর ফাঁসি হওয়ার পরে অমানবিক ও উন্মত্ত রক্তখেকোর মতো উৎসবে মেতে উঠেছিল।
ফলাফলে হাসিনা হয়েছিল হিটলারের মতো উন্মত্ত খুনি আর তার ল্যাসপেন্সার ছিল এরা। হাসিনা ফ্যাসিবাদী এবং কালচারাল ফ্যাসিস্টদের সংগঠনগুলো সেই ফ্যাসিবাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যারা মানুষের রক্তে পুষ্ট হচ্ছিল আওয়ামী শাসনকালের ১৬ বছর।’
শীর্ষনিউজ