Image description

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চাকরিচ্যুত মো. শরীফ উদ্দিন চাকরি পুনর্বহাল চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করেছেন। সম্প্রতি তিনি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি লিখিত চিঠি পাঠান।

বুধবার ঢাকা টাইমস তার চিঠির কপি হাতে পেয়েছে। এর আগে গেল আগস্টে দুর্নীতি দমন কমিশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডুসা) সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বরাবর চাকরি ফেরত চেয়ে আবেদন করেন শরীফ উদ্দিন।

প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো আবেদন তিনি লিখেছেন, আমি দুদকের উপসহকারী পরিচালক হিসেবে ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাতবছর ৪ মাস ন্যায় নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। দুদকের একজন নবীন কর্মকর্তা হয়েও বিভিন্ন দুর্নীতি বিষয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা ও ২০টির বেশি সিএস (চার্জশীট) দাখিল করেছি। কর্মকালীন সময়ে দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অনেক বিষয় যেমন কক্সবাজার এল এ শাখার সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতিতে প্রায় ৬০০ পাতার ১৫৫ জনকে চার্জশিটভুক্ত করে আসামির সুপারিশ করেছিলাম। এছাড়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট জালিয়াতির বিষয়ে দলগতভাবে সিরিজ আকারে ২০টি মামলায় আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য মামলা করায় তাদের সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের নিকট হয়রানির শিকার হচ্ছি। পেট্রোবাংলার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (কেজিডিসিএল) এর বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি, পদোন্নতি, নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান ও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে পুনঃগ্যাস সংযোগ প্রদান সংক্রান্ত অবৈধ কার্যকলাপের বিভিন্ন বিষয়ে মামলায় দায়ের সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট কমিশনে দাখিল করি। যার কারণে আমার নিজ ভাড়া বাসায় এসে হুমকির শিকার হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করলেও তার কোনো প্রতিকার পাইনি। চট্টগ্রামে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দুর্নীতিতে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সাহেবের ছেলে মুজিবুর রহমান, যিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাকে আইনের আওতায় আনায় তাদের মালিকানাধীন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় আমার বিরুদ্ধে মানহানিকর সংবাদ প্রচার ও বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। এমনকি দুদক কর্তৃক আলোচিত উক্ত মামলাটি এফআরটি (ফাইনাল রিপোর্ট ট্র) দিলেও মহামান্য কোর্ট তা বাতিলপূর্বক আমার এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) টি কগনিজেন্স আকারে গ্রহণ করেন।

 
 

আবেদনে শরীফ আরও উল্লেখ করেন, চট্টগ্রামে ডাক্তারদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদক ও স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৮২ পাতার পাঁচটি মামলার সুপারিশ করায় জানমালের অনেক হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু আমার সুপারিশকৃত মামলার বিষয়সমূহ বিবেচনায় না এনে দুদক এ বর্ণিত অভিযুক্তদের মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কূট-কৌশলের আশ্রয়ে এবং সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিনের চাপে নূন্যতম আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনোরূপ সুযোগ না দিয়ে অর্থাৎ কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ ব্যতিরেখেই দুর্নীতি দমন কমিশন চাকুরি বিধিমালা-২০০৮ এর ৫৪(২) মোতাবেক ২০২২ সালের ১৬ ফ্রেব্রুয়ারিতে আমাকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অমানবিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়।

‘আমাকে অন্যায়ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি দেশ-বিদেশের সব মিডিয়া ও গণমাধ্যমে আলোচিত হওয়ায় গুম হওয়ার আতংকে থাকা সত্ত্বেও সে যাত্রায় গুমের শিকার হতে বেঁচে যাই। চাকরিকালীন ও চাকরি অপসারণের পর মুহূর্ত থেকে অদ্যাবধি দেশের প্রথম শ্রেণীর প্রায় প্রত্যেকটি মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার প্রতি অন্যায়ের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে, সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয়সহ। টিআইবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এমনকি সংসদেও আমার প্রতি বৈষম্যের বিষয়টি বিবৃতিকারে ও পয়েন্ট অব অর্ডারে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এমনকি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।’

ওই আবেদনে শরীফ উল্লেখ করেছেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দুদক চাকরি বিধিমালা ২০০৮ এর ৫৪(২) বহাল রাখলেও ১২ টি পূর্ব শর্তের কথা রায়ে উল্লেখ করলেও তার একটি শর্তও আমার ক্ষেত্রে মানা হয়নি। গত ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট পিটিশন নম্বর- ৩৬৯৭/২০২২ শুনানি করলে হাইকোর্ট দুদকের বিরুদ্ধে ২ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দেওয়ার নিমিত্তে রুল জারি করেন এই মর্মে যে, শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশ কেন অবৈধ, বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং সেই সঙ্গে সকল সুযোগ সুবিধাসহ কেন তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হবে না। কমিশন ওই রুলের জবাব না দিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নম্বর-৯৬৬/২০২৪ রুজু করেন। যদিও ৩ সেপ্টেম্বর রিট পিটিশন নং-৩৬৯৭/২০২২ হতে উদ্ধৃত সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং-৯৬৬/২০২৪ এর প্রত্যাহার করার কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে চেম্বার জজ আদালত ৯ সেপ্টেম্বর শুনানিঅন্তে দুদক কর্তৃক দাখিলকৃত সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিলটি প্রত্যাহার করার আবেদনটি গ্রহণ করেন। আর সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিলটি খারিজ মর্মে আদেশ প্রদান করে। পরবর্তীতে ১২ নভেম্বর রিট পিটিশন নম্বর ৩৬৯৭/২০২২ দুই পক্ষের শুনানিঅন্তে মৌখিকভাবে বলেন যে, দুর্নীতি দমন কমিশন পিটিশনারকে তার চাকরিতে পুনর্বহাল করতে পারে এই শর্তে যে, পিটিশনার কর্তৃক রুজুকৃত মামলাটি প্রত্যাহার সাপেক্ষে, যা দুদকের পিপি আসিফ হাসান ২৬ নভেম্বর ডিজিকে (লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন) লিখিতকারে জানান। অন্যদিকে দুদকে চাকরি পুনর্বহাল চেয়ে আবেদন করলেও তার কোন সুরাহা হয়নি। চিঠিতে তিনি আওয়ামী সরকারের সময় সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করার সুযোগ চেয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক ছিলেন শরীফ উদ্দিন। দীর্ঘ সময় তিনি চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। তিনি কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, কিছু রোহিঙ্গার এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মামলা করেন। ২০২২ সালের ১৬ জুন শরীফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। এরপর ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুতির কোনো কারণ উল্লেখ করেনি কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই আদেশ প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করেন তিনি। তবে তার আবেদন কমিশনের কাছে বিবেচিত হয়নি। বর্তমানে একটি ওষুধ কোম্পানিতে হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং হিসেবে চাকরি করছেন তিনি।

author

Ari budin

#

Programmer, Father, Husband, I design and develop Bootstrap template, founder