প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার পাশাপাশি লাশ গুম করেও সেই পুলিশ কনস্টেবল এতো সহজে জামিনে বের হয়ে আসবে তারপর পালিয়ে যাবে সেটা কল্পনাতীত। কিন্ত দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত সংবাদ থেকে সেটাই সুস্পষ্ট। তাদের এই সংবাদ পাঠ করার পর যেকোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের স্বাভাবিক থাকার কথা নয়। তারপরেও অপরাধী ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তারা সুকৌশলে জামিন নিয়ে বের হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে সামনের সারির গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে না। এর বিপরীতে বর্তমানে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্ব সবথেকে সামনে আসছে। তাদের দখল আর গীবতের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে মাত্র কয়েকমাস আগে ঘটা ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনাগুলো।
তারা সংবাদে লিখেছে ‘গত ৫ আগস্টের মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক ঘটনা। ৫০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। এই দৃশ্য যে কারও অন্তরে কাঁপন ধরাবে। যেখানে কলেজপড়ুয়া একটি ছেলেকে ধরে আছে কয়েকজন পুলিশ সদস্য। চড়-থাপ্পড়, কিল- ঘুষি মারছে। কেউ কেউ আবার কলার ধরে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। একটু দূর থেকেই দৌড়ে এলো এক পুলিশ সদস্য। কাছে এসেই কলেজ শিক্ষার্থী হৃদয়ের পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে ট্রিগার টেনে দিলো। গুলির বিকট শব্দ। মাত্র ৩ সেকেন্ডেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হৃদয়। ছটফট করে হাত-পা নাড়তে থাকেন। দাঁড়াতে চেষ্টা করেন। তবে পারেননি। একটু পরেই নিথর হয়ে যায় মাটিতে পড়ে থাকা হৃদয়ের দেহ। স্রোতের বেগে রক্ত বের হতে থাকে। অল্প সময়ে রাস্তা লাল হয়ে যায়। পরনের কাপড় ভিজে যায়। গুলি করেই পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে সরে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার তারা হৃদয়ের কাছে ফিরে আসে। এসে নিথর দেহ পা দিয়ে ঠেলে দেখতে থাকে মৃত্যু হয়েছে কি না। পরে ৪ জন পুলিশ সদস্য মিলে হৃদয়ের গুলিবিদ্ধ মরদেহ হাত-পা ধরে টেনে-হিঁচড়ে দূরে কোথায় নিয়ে যান। কোথায় নিয়ে যাওয়া হলো হৃদয়ের মৃতদেহ? কেউ জানে না এখনো।’
ঐ সংবাদে আরও লিখেছে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা উৎপল কুমার সাহার বিশেষ প্রতিবেদন ছিল ভাইরাল ভিডিও সামনে রেখে। ভিডিও পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে পুলিশ কনস্টেবল আকরাম হোসেন তার ব্যবহৃত শটগান দিয়ে হৃদয়কে পেছন দিক থেকে গুলি করছে। সে গুলি করে হৃদয়কে মাটিতে ফেলে দেয়। ভিডিও ফুটেজ থেকে হত্যাকাণ্ডে আকরামের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ নিশ্চিত করা যাচ্ছে। তাই খুনী কনস্টেবল আকরামকে কারাগারে রাখা ও জামিন না দেয়ার জন্য আদালতে অনুরোধ করাও হয়েছিল। কিন্ত এই তদন্ত প্রতিবেদন অগ্রাহ্য করে সবাইকে অবাক করে গত ২৩শে ডিসেম্বর গাজীপুর দায়রা জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক প্রধান অভিযুক্ত আকরামকে জামিন দিয়ে দিয়েছেন। জামিন পাওয়ামাত্র রাতেই কারাগার থেকে বেরিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে পুলিশ কনস্টেবল আকরাম হোসেন। তার গ্রামের বাড়িতেও সে আর বাড়িতে ফেরেনি। গত ২৬শে ডিসেম্বর সে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বলে সাংবাদিকদের ধারণা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ সম্প্রতি ভয়াবহ একটা বিপর্যয়ের সময় পার করছে। আর সরাসরি খুনের অপরাধীদের পলায়ন জনমনে বিভ্রান্তি ও অষন্তোষ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো ভাবান্তর নাই। তারা পরস্পরকে ছিঃ চিৎকার এবং ছোট করে দেখানোর কাজে এতোটাই ব্যস্ত যে এগুলো নিয়ে চিন্তার কোনো অবকাশ নাই তাদের। তারা সবাই এখন যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমতায় যেতে চায়, কিংবা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতাকেন্দ্রের কাছাকাছি থেকে নিজেদের অবস্থান শক্ত পোক্ত করতে চায়।
বিশেষত, নির্বাচন আগে হবে নাকি পরে। নির্বাচন যদি পরে হলে তার সময়সীমা কী হবে সেটা নিয়ে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বি এন পি বেশ চিন্তিত। ওদিকে আদৌ নির্বাচন কবে হবে নাকি হবেই না এসব তথ্য নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও নাগরিক কমিটি তথা সমন্বয়কদের শীতল সম্পর্ক প্রতিদিন বাড়ছে। আর সেক্ষেত্রে তাদের পরস্পরবিরোধী অবস্থান আর মুখোমুখি আক্রমণাত্মক বক্তব্য ধীরে ধীরে সহ্যের মাত্রা অতিক্রম করে যাচ্ছে। তারা পরস্পর একে অন্যকে যেভাবে দোষারোপ করে চলেছে যার ফলাফল হিসেবে নতুন মন্তব্যের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে মাত্র কয়েকমাস আগের ভয়াবহ গণহত্যার অপরাধ। যে অপরাধের শিকার কমবেশি তারা সবাই ছিল বাস্তবে তার প্রতিবাদ ও শাস্তির সম্মুখীন করার প্রশ্নে তাদের কারও মুখেই কোনো রা নেই।
বাংলাদেশের বিদ্যমান সক্রিয় রাজনৈতিক অংশীজনদের দূরত্ব ও দ্বন্দ্ব দেশকে তুলনামূলকভাবে অধিকতার সামরিক প্রভাব বলয়ের দিকে ট্রেনের বগির মতো টানছে। কেউ অস্বীকার করুক আর স্বীকার করুন যায় আসে না বাংলাদেশের অভ্যন্তরের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জামায়াত যেভাবে গুজব ছড়াচ্ছে তার ধারে কাছে কেউ নাই। ওদিকে তাদের এই গুজবকে গুডজব প্রমাণের সুযোগ করে দিচ্ছে বি এন পির তৃণমূলের এক সময়ের ত্যাগী কিন্ত বাস্তবে অবোধ ও লোভী কিছু নেতাকর্মীরা। তারা বেছে বেছে অপকর্ম করে জামাতের জাতে ওঠার চেষ্টাকে সফল করে চলেছে। ওদিকে সুযোগ বুঝে এই প্রচেষ্টাকে আরও সক্রিয় করে তুলছে আওয়ামী লীগের অন্তরালে থাকা নেতাকর্মীরাও।
অর্থলোভ আর প্রতিপত্তি বিস্তারের প্রচেষ্টায় অন্ধ কিছু বি এন পি কিংবা জামাতের নেতাকর্মী কেন্দ্র থেকে জারিকৃত নির্দেশের তোয়াক্কা করছে না। মুখে সুন্দর গল্প বলতে তাদের জুড়ি নাই। বাস্তবে বিগত ষোল বছরের লুণ্ঠনে অর্জিত আওয়ামী নেতাকর্মীদের অবৈধ টাকার দিকে তাদের কারও লোভ কম নেই। এরাই প্রচলিত গুজবকে গুডজবে পরিণতকরণের সুযোগ সৃষ্টি করছে। মুলত এই কারণেই বিএনপি তাদের দলের মধ্যম ও নিচের স্তরের নেতৃত্বের ওপর সেভাবে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারছে না। অনেকাংশে তাদের উপর কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নাই।
স্থানীয়ভাবে নানা অপকর্মের পাশাপাশি সরাসরি গণহ*ত্যায় অংশ নেওয়া ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে স্থানীয় বি এন পি ও জামাতের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ জঘন্যরকমভাবে সত্যি। সেখানে নাগরিক কমিটি ও শিক্ষার্থীদের ভূমিকাও বেশ প্রশ্নবিদ্ধ ক্ষেত্রবিশেষে। পাশাপাশি এককালের সমন্বয়ক ও পরবর্তীকালের নাগরিক কমিটির সদস্যরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তাদের প্রাপ্ত ভাগ থেকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ। তারা তাদের এই ক্ষমতার ভাগ ছেড়ে দিতে হবে মনে করে আঁৎকে উঠছেন। আর সেক্ষেত্রে তাদের সবথেকে বড় শত্রু মনে হচ্ছে বি এন পিকে। এজন্যই বি এন পি বিরোধী শিবিরের সব অপপ্রচারকে তারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে প্রণোদনা দিচ্ছেন। কিন্ত তাদের এই ক্ষমতার অংশীজন হয়ে সামান্য কিছু হাসিলের প্রচেষ্টা ধীরে ধীরে দেশকে ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে যারা ক্ষমতাকেন্দ্রের সন্নিকটে তারা ক্ষমতার ভাগ দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। সব দলের লোকজন কম বেশি টাকা খেতে মরিয়া। তারা ভেবে চিন্তে দেখছে আওয়ামী লীগের ষোল বছরের লুণ্ঠন থেকে কিছু একটা তাদের পকেটে গেলে ক্ষতি কী? দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে সক্রিয় রাজনৈতিক অংশীজন মতান্তরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিবাদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কে প্রথম সামরিক শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করতে পারবে? তারা সফল হলে কী ঘটবে? তাদের ব্যর্থতার পর অন্যরা সেটাতে কীভাবে রেসপন্স করবে সেগুলো নিয়ে তুলনামূলক রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বর্তমান ডিসকোর্সে প্রায় অনুপস্থিত। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বুটের নিচে মুখ লুকানোর ক্ষেত্রে তুলনামূলক ছোটদলগুলোকে বেশি আগ্রহী হতে দেখা যায়। রাজনৈতিক দিক থেকে বিশেষ সুবিধা করতে না পারা এই দলগুলো এই সুযোগে তাদের আখের গুছিয়ে নিতে পারে সহজেই।
আমাদের অস্বীকার করার সুযোগ নাই যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অবস্থান থেকে যাই করুক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত বেশ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। তবে তাদের মধ্যে থাকা অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার আচরণ সন্দেহজনক এবং তাদের কর্মভূমিকায় সেনাবাহিনীর কিছু সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে সীমাবদ্ধতার জন্ম দিয়েছে। তবে তার অর্থে এই না যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বিনোদনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সংকটের জন্ম দেবে আর সেগুলো গায়ে পড়ে সমাধানের সব দায় নিয়ে সেনাবাহিনী বসে আছে।
বাংলাদেশের চলমান সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে আমলাতন্ত্রের সাথে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা। এই যুদ্ধের ফলাফল কী হবে তা সহজেই অনুমেয়। তবে এটুকু বলে রাখা ভালো যে আমলাতন্ত্র বনাম রাজনৈতিক অংশীজনের সংঘাত যদি কোনো যৌক্তিক মীমাংসায় না যায় তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে অনিশ্চিত এবং অতল অন্ধকারের দিকেই এগিয়ে যাবে।
মিসরের মানুষও মোহাম্মদ মোরসিকে নির্বাচিত করেছিল। মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের উত্থান ও পতন কীভাবে হয়েছিল সেটা আপনাদের ভুলে গেলে চলবে না। মুসলিম ব্রাদারহুডের এই নেতা ছিলেন মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। 'আরব বসন্ত' নামে বিশ্বখ্যাত বিক্ষোভের পর ২০১২ সালের নির্বাচনে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তবে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই তাকে মিসরের সেনাবাহিনী উৎখাত করে।
ক্ষমতা হারানোর আগে নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে জিতে ২০১২ সালের জুনে মাত্র এক বছরের জন্য ক্ষমতায় গিয়েছিলেন মোহাম্মদ মোরসি। তিনি মিশরীয় প্রতিটি মানুষের রাষ্ট্রপ্রধান হবার প্রতিশ্রুতি দিলেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইসলামপন্থীদের একচ্ছত্র আধিপত্যের প্রচেষ্টা তার দুর্দিন এবং পতন ডেকে আনে। মুসলিম ব্রাদারহুড নেতৃবৃন্দের অতি বাড়াবাড়ি দেশটির অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয়। অপরাধীদের বিচার করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন পাশাপাশি বেকারত্ব চরমে ওঠে। অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে কায়রোতে বিক্ষোভের সময় নিহত হন শত শত মানুষ।
ক্ষমতায় গিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হওয়া মুরসি তার পুরাতন শত্রুদের ভয়াবহ আক্রমণ থেকে রক্ষা পাননি। সেখানে যুক্ত হয় বহিঃশত্রুরা। জুলাই উত্তরকালের বাংলাদেশের মতো মিসরেও একটি ক্ষমতালোভী দল নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরিতে নাচানাচি শুরু করেছিল। তারা ক্ষমতা সুদূরপ্রসারী করার চেষ্টায় মোরসিকে একটি ডিক্রি জারি করতে বাধ্য করে। বিশেষত, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে নতুন সংবিধানের উপর একটি গণভোট অনুষ্ঠানের কথা ছিল।
ঠিক তার আগে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচনী এলাকা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে চূড়ান্ত ক্ষমতা দিয়ে মোরসি আরেকটি ডিক্রি জারি করে নিজের কবর নিজেই খুঁড়েছিলেন। এরপর ওই ডিক্রি দেশটিতে সামরিক আইন জারি করার যে সুযোগ তৈরি করেছিল তা লুফে নিয়েছিলেন জেনারেল সিসি। এরপর দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রধান আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি নতুন প্রেসিডেন্ট মোরসিকে গ্রেপ্তারের আদেশ দিলে দেশটির সদ্য বিকাশমান গণতন্ত্র ওখানেই থমকে যায়।
বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেষ্টা করছে। রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি অদূরদর্শী এসব ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর কায়েমি স্বার্থ বাংলাদশকে পুরোপুরি অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পারে। ছাত্রদের পক্ষ থেকে গঠন হতে যাওয়া ভবিষ্যত রাজনৈতিক দল কিংবা মাঠে বিশেষ করে অনলাইন ময়দানে বেশি সক্রিয় জামাত তাদের জন্য বিএনপিকে বড় চ্যালেঞ্জ ভাবতে শুরু করেছে। ওদিকে বাংলাদেশের সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ হলেও বি এনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে অনেক দূরে। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের তরফ থেকে জারিকৃত নির্দেশ তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বিবিধ সমস্যা অস্বীকারের সুযোগ নেই। বিশেষ করে পদপদবী আর দখল বাণিজ্য দিয়ে অন্তর্ঘাত তাদের দুর্বল করে তুলছে।
শুনতে লজ্জাজনক হলেও সত্য যে পলাতক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনে লুন্ঠিত সীমাহীন অর্থসম্পদের দিকে চোখ দিয়েছে বি এন পি কিংবা জামাতের তৃণমূলের কর্মীরাও। এতে করে কিছু না হোক রাজনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য বি এন পির পাশাপাশি দেশে সক্রিয় অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে । দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবৈধ আয় বাড়িয়ে স্ব স্ব আখের গোছাতে গিয়ে নিজ দলের ভুলত্রুটি শুধরে না নিয়ে অন্যকে দোষারোপ করতে থাকলে সেই সুযোগ মাথাচাড়া দিতে উঠবে পরাজিত শক্তি। তারা সামনে বাংলাদেশকে একটা দীর্ঘস্থায়ী সংকটের দিকে ঠেলে দেবে।
তখন নতুন সংকট সৃষ্টির জন্য বি এন পি, জামাত, জাতীয় নাগরিক কমিটি কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ কেউই তাদের দায় এড়াতে পারবে না। তাই তাদের প্রত্যেকের উচিৎ পরস্পর কাদা ছোঁড়াছুড়ি বন্ধ করে গণহত্যার বিচারকে ত্বরান্বিত করা। পাশাপাশি জুলাই আগস্ট বিপ্লবে আহতদের সুচিকিৎসার দিকে নজর দেওয়া। অন্যদিকে শহীদ পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে আরও দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে তাদের সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার বিকল্প নাই। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য আপাত দৃষ্টিতে এটাই হতে পারে প্রাথমিক পদক্ষেপ। এর বাইরে যা ঘটছে কিংবা ঘটানোর চেষ্টা চলছে সেই হঠকারী পদক্ষেপগুলো আখেরে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশর ভবিষ্যতকে।