দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে এক প্রশ্নে রিজওয়ানা হাসান বলেন, নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহণ করবে আর কোন দল অংশগ্রহণ করবে না, এটাতো আমরা বলে দেব না। যে দল অংশগ্রহণ করতে চায় সে দল করবে। কোন দল কেমন করে অংশগ্রহণ করবে সেটা তো সেই দলকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধা নেই বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বক্তব্যে দিয়েছেন সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, এ সমস্ত কথা আসলে নির্বাচন কমিশন থেকেই আসতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যদি আপনারা কোনো অবস্থান দেখতেন সরকার এই দল নিষিদ্ধ করছে, তখন আপনারা এই প্রশ্নটা সরকারকে করতে পারতেন। তাছাড়া কোন দল নির্বাচন করবে না করবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আসলে নির্বাচন কমিশন দেবে।
তাহলে কি আওয়ামী লীগের নির্বাচনে আসা, না আসা সরকারের ওপর নির্ভর করছে না? জানতে চাইলে পানি সম্পদ উপদেষ্টার রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখনো পর্যন্ত সরকার এই বিষয়ে কোনো মতামত জানায়নি, কোনো অবস্থান নেয়নি যে আওয়ামী লীগকে আমরা নিষিদ্ধ করব। এ রকমতো কোনো অবস্থান নেয়নি। আমরা যেটি দেখেছি যে হাইকোর্টে এ রকম একটি বা দুটি পিটিশন হয়েছিল, সেগুলোর একটি প্রত্যাহার করা হয়েছে, আরেকটি হাইকোর্ট রিজেক্ট করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে এক প্রশ্নে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাকে ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। ভারতের সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি আছে সেটিও আমরা বলেছি, সেখানে একটি ব্যতিক্রম আছে সেটিও আমরা বলেছি।
তিনি বলেন, ভারত কি অবস্থান নেবে, একটি অবস্থান প্রাথমিকভাবে নেওয়া যায়, আবার চূড়ান্ত একটি অবস্থানের দিকেও দেশগুলো যেতে পারে।সেগুলো ভবিষ্যতের জন্যই আমাদের ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু আমাদের অবস্থান হচ্ছে আমরা চাইবো শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিচার করতে। যদি উপস্থিতিতে বিচার না হয় তাহলে যেভাবে বিচার প্রক্রিয়া করতে হয় সেভাবেই করবো।
নতুন বছরে সরকারের অগ্রাধিকার কাজ
নতুন বছরে সরকার কোন কাজগুলোতে অগ্রাধিকার দেবে? জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, নতুন বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার হবে তিনটি। প্রথমত জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড ও বর্বরতার বিচার নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, যে সমস্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো আসবে সেগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে সেগুলো সংস্কার করা, আরেকটি হচ্ছে নির্বাচনের একটা পরিষ্কার রোডম্যাপ ডেভেলপ করা।
তিনি বলেন, এর পাশাপাশি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জীবনে সব সময় যে চ্যালেঞ্জগুলো থাকে, সেগুলো থাকবে। এর মধ্যে দুটো যেটি অন্তর্বর্তী সরকার মনে করে প্রাধান্য দিচ্ছে- একটি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা, আরেকটি হচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা।
অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র: খসড়া করার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে
অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র করার বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ান আহসান বলেন, শিক্ষার্থীরা যে গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারির কথা বলছে, এর সঙ্গে সরকারের দ্বিমত নেই। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে চেয়েছি এটা বাংলাদেশের জনগণের একটা ঘোষণাপত্র হোক। সেটা করার একটা উপায় হচ্ছে, যারা এই আন্দোলন করেছেন তাদের সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে একটা ঘোষণাপত্র করা। সে প্রক্রিয়াটা শুরু (শিক্ষার্থীরা) করার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে একটা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সবার সঙ্গে কথা বলার প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে। এখন আমরা খসড়া তৈরির প্রক্রিয়ায় যাবো।
শিক্ষার্থীরা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়েছেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, এই ১৪ দিনের মধ্যে আমরা বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখব। এটা অসম্ভব কোনো কিছু না।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বিএনপি আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বলেছেন সংস্কারের প্রয়োজন আছে। তারা বলেননি যে সংস্কারের প্রয়োজন নেই। রাজনীতিবিদরাও চাচ্ছেন সংস্কারটা হোক। আমাদের তালিকায় নির্বাচনও প্রাধান্য, সংস্কারও প্রাধান্য।