Image description

জ্বীনের বাদশা, তান্ত্রিক ও ‘জৈনপুরী মা ফাতেমার দরবারের’ নামে হাজারো মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারকচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।

 

তেজগাঁওয়ের গৃহবধূ রহিমা বেগমের করা প্রতারণা মামলার সূত্র ধরে এই চক্রকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. রাকিব (২০), মো. রাকিব মোল্লা (২৯), মো. আলাউদ্দিন (২৬)।

ভুক্তভোগী রহিমা বেগম জানান, তার সৌদি প্রবাসী স্বামী ১৭ জন বাংলাদেশির ভিসার জন্য এক কফিলকে ৩৫ লাখ টাকা দিলেও কোনো ভিসা পাননি এবং অর্থও ফেরত না পেয়ে চরম হতাশায় ভুগছিলেন। ঠিক সেই সময় তিনি ইউটিউব ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ‘জ্বীনের বাদশা, তান্ত্রিক শাস্ত্রিক জৈনপুরী মা ফাতেমা’ নামক দরবারের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখতে পান। সব সমস্যার সমাধানের আশ্বাসে তিনি ওই চক্রের ফাঁদে পড়ে ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা হারান।

২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল এ ঘটনায় তিনি তেজগাঁও থানায় ৪০৬/৪২০/৫০৬/৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১৬)। জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মামলাটি পিবিআই, ঢাকা মেট্রো (উত্তর) অধিগ্রহণ করে তদন্ত শুরু করে।

তদন্তে উঠে আসে, অভিযুক্ত চক্রটি ইউটিউব ও বিভিন্ন মিডিয়ার বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে জ্বীনের বাদশা ও মা ফাতেমার নামে ভয় ও লোভ দেখিয়ে হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। বিজ্ঞাপনগুলোতে দাবি করা হয়, ‘আধ্যাত্মিক ক্ষমতাবলে সুপারন্যাচারাল পাওয়ার’ অর্জন করেছেন মা ফাতেমা, যিনি মুখ দেখেই অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন এবং মানুষকে বিদেশ পাঠানো, লটারি জেতানো, পরকীয়া ফেরানোসহ নানা সমস্যার অলৌকিক সমাধান দেন।

তদন্তে আরও উঠে আসে, প্রতারণার অংশ হিসেবে তারা ‘আগরবাতি’, ‘মোমবাতি’, ‘ভূটানি গরুর দুধ’, ‘রত্নময়ী আংটি’, ‘জ্বীনের জন্য আগুন মোয়া শাড়ি’, এমনকি ‘পাঠা বলি’র মতো বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। এছাড়া যারা সন্দেহ প্রকাশ করত, তাদের সন্তানদের ক্ষতির হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখাত এবং ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করা বিভৎস ছবি পাঠিয়ে মানসিকভাবে জিম্মি করে রাখত।

জানা যায়, চক্রটি নারী কণ্ঠে ভয়েজ পরিবর্তন করে পুরুষ প্রতারকদের দিয়ে কথা বলাত, যেন ‘মা ফাতেমা’ নিজে কথা বলছেন। বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রারকৃত সিমকার্ড ব্যবহার করে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা লেনদেন করত।

পিবিআই জানায়, তদন্তকালে বিকাশের লেনদেন সংক্রান্ত স্টেটমেন্ট জব্দ করা হয়েছে। চক্রটিকে ধরতে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, এবং ভোলা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সর্বশেষ ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ফুলকাটিয়া ও চৌমুহনী বাজার থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

পিবিআই বলছে, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নানা রকম তান্ত্রিক ও ধর্মীয় প্রতারণার কৌশলে সাধারণ মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে আরও মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং অন্যান্য সহযোগীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।