মিরপুরের পল্লবী আলুন্দি ঝিলপাড়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বস্তিতে অবাধে চলছে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা। জাতীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ করা জায়গা দখল করে অবৈধভাবে বস্তি গড়ে তোলেন এলাকার গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত সাবেক এমপি ইলিয়াস মোল্লা। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের পর ইলিয়াস মোল্লা গা ঢাকা দিলেও ওই বস্তি এখনো তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাজধানীর পল্লবীর আলুন্দি ঝিলপাড়ের বস্তি এলাকা ঘুরে ও বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে তিনশ সাংবাদিক পরিবারের আবাসন গড়ে তুলতে ঢাকা সাংবাদিক সমবায় সমিতিকে রাজধানীর পল্লবীর ঝিলপাড় মসজিদের পাশে সাত একর জমি বরাদ্দ দেয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে এই বিশাল জমি জোর করে অবৈধভাবে দখলে নেয় ঢাকা-১৬ আসনের দলীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লা। একাংশে বস্তি বানিয়ে ভাড়া দেয় আর অন্য অংশে গড়ে তুলে গরুর খামার।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইলিয়াস মোল্লা সাংবাদিকদের জাগায় অবৈধভাবে বস্তি, দোকান ও অস্থায়ী মার্কেট করার পর সেখানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসার পানির সংযোগের ব্যবস্থা করে ইলিয়াস মোল্লা।এখনো নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে প্রতি মাসে ভাড়া তুলেছেন।
কিন্তু এ বস্তিতে তার নিয়ন্ত্রণ অটুট রয়েছে। মাদকের ব্যবসাও থেমে নেই। বরং ইলিয়াস মোল্লার আত্মীয় এবং দলীয় লোকের মাধ্যমে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাংবাদিকদের জায়গার কিছু অংশে ইলিয়াস মোল্লা নিজেই অবৈধভাবে গরুর খামার গড়ে তুলেছেন।
পরবর্তীতে তার ভাগ্নে সালমান মোল্লা অবৈধভাবে উক্ত এ জায়গায় বস্তি ও দোকানঘর স্থাপন করে ভোগ দখল করে আসছেন। সালমান মোল্লা শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বিল বাবদ বস্তিবাসীর কাছ থেকে প্রতিমাসে চার লাখ টাকা ও বস্তির পূর্ব পাশে অবৈধ স্থাপনা থেকে তিন লাখ টাকা তোলেন। ঝিলের পশ্চিম পাশের বস্তি থেকে ইলিয়াস মোল্লার ছোট ভাই আলী মোল্লা প্রতি মাসে চার লাখ টাকা চাঁদা তোলেন।
বস্তিতে বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানান যায়, আলোকদি এলাকার স্থানীয় সন্ত্রাসী সামছু তার সহযোগী সোহেল, ফারুক আনোয়ার গং মিলিত হয়ে উক্ত এলাকায় ইয়াবা ও গাঁজাসহ মাদকদ্রব্য বিক্রি করে আসছে। মাদক বিক্রির জন্য আনোয়ার, ফারুকের টং দোকান ব্যবহার করে থাকে।
ঝিল পাড় নতুন রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করে সালমান মোল্লার ড্রাইভার ফজলু। মন্দির থেকে মোড় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে আলী মোল্লাহর অফিসের স্টাফ বেলাল ও মাসুদ। জসিম মোল্লার হয়ে বস্তি নিয়ন্ত্রণ করেন তুফান।
ইলিয়াস মোল্লাহর ভাগিনা সালমান মোল্লার হয়ে টাকা উঠান ড্রাইভার ফজলু। এমপি ইলিয়াস মোল্লাহর আপন চাচাতো ভাই জসিম মোল্লার হয়ে টাকা উঠান তুফান ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখানকার বস্তিতে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের হাতে ৫ আগস্ট বিভিন্ন থানা ও নিরাপত্তাবাহিনীর হেফাজত থেকে লুট হওয়া কিছু অস্ত্র এখানে থাকতে পারে। মিরপুর এলাকায় অপরাধ কর্মকাণ্ডে এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
ঢাকা সাংবাদিক সমবায় সমিতির সভাপতি সদরুল হাসান বলেছেন, দখলমুক্ত করতে বহুবার গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছি। এক পর্যায়ে কিছু অংশ বুঝিয়ে দিলে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করি। কিছুদিন পরই ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ লোক পাঠিয়ে ভেঙে দেন। গত ২৮ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছি। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করলে পুলিশ সংকটে উচ্ছেদ করতে পারছেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনী এলাকায় বিগত ১৬ বছর ইলিয়াস মোল্লাহর কথাই ছিল আইন। জমি ছাড়াও বহু দোকান, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড ও ফুটপাত দখলে নিয়েছেন। এসব নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে বাড়ির বৈঠকখানায় সালিশ বসিয়ে আদালতের আদলে বিচার করতেন।
বিচার না মানলে নিজে মারধর করতেন। মামলা দিয়ে পুলিশে দেওয়ার হুমকিও দিতেন। বিচারের রায় পক্ষে দেওয়ার জন্য সহকারীদের মাধ্যমে ঘুষও নিতেন ইলিয়াস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাডার পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের শায়েস্তা এবং মিরপুর এলাকায় আন্দোলনে অতর্কিত হামলার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিষয়ে ইলিয়াস মোল্লার বক্তব্য নেওয়ার জন্য মিরপুরে তার বাড়িতে গিয়ে ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। এলাকাবাসী জানান, গত ৫ আগস্টের পর ইলিয়াস মোল্লা আর এলাকায় আসেননি। তবে তার লোকজন এখনও এলাকায় অবাধে যাতায়াত করছে। তারাই মূলত ওই এলাকার চাঁদা আদায় ও বস্তিগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে।