Image description

শেষ পর্যন্ত কি তাহলে বরফ গলতে শুরু করেছে? ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যদিও শনিবার সকালে বিএনপি’র সঙ্গে প্রস্তাবিত বিকালের বৈঠকটি এক অজ্ঞাত কারণে স্থগিত করা হয়েছিল। পরে বিরামহীন প্রচেষ্টার পর বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কালো মেঘ কেটে যায়। তখন বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশে অবস্থানরত একজন বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। পাল্টা যুক্তি ছিল, ওই নেতা বিএনপি বা তারেক রহমানকে প্রতিনিধিত্ব করেন না। শনিবার দিনের শেষে বৈঠক দু’টি হয়। রাতে এনসিপি’র সঙ্গেও আলাদা বৈঠক হয়েছে। 

আলোচিত এসব বৈঠকের পরেই প্রফেসর ইউনূস তার ভবিষ্যৎ নীতিকৌশল ঠিক করবেন এমনটাই বলা হচ্ছে। তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে পারেন। যা কিছু ঘটেছে তা তুলে ধরতে পারেন। তবে নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি এখনো দোটানায়। শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেন তাই দেখার বিষয়। গত ৪৮ ঘণ্টায় ছিল অনেক নাটকীয়তা। যমুনায় আবেগের সুরও ছিল চড়া, কান্নাকাটিও হয়েছে। সংকট মোকাবিলা না করে পদত্যাগের হুমকি ছিল।

সংকট কারা তৈরি করলো? একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে প্রফেসর ইউনূসকে জনবিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেয়। যে কারণে অভ্যুত্থানের মূল শক্তি বিএনপি ও জামায়াতকে দূরে ঠেলে দেয়া হয়। অভ্যুত্থানের আরেক বড় শক্তি সশস্ত্র বাহিনীকেও রাখা হয় অন্ধকারে। অভ্যুত্থানের মূল শক্তি ছাত্রদের মধ্যেও দেখা দেয় অনৈক্য। এর ফলে বাড়তে থাকে দূরত্ব। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি’র মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যে বৈঠকে বিএনপি’র সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টাপাড়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকটি চলে সাড়ে তিন ঘণ্টা। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এই তিনদলই প্রায় কাছাকাছি বক্তব্য রাখে।

ওদিকে হঠাৎ করেই পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নেয়। অস্বস্তিতে পড়ে যায় অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো। এরপর একটা সমঝোতায় আসার চেষ্টা চলে। এরই ধারাবাহিকতায় যমুনায় এখন আর পদত্যাগের প্রস্তুতি নেই। আসলে পদত্যাগের প্রস্তুতি ছিল না। এটা ছিল এক ধরনের আওয়াজ। নতুন করে ঘুঁটি সাজানো হচ্ছে। যেমনটা দাবা খেলায় ঘটে থাকে। রাজা চেকমেট হয়ে গেলে নতুন করে সাজাতে হয়। 

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরিস্থিতি সেরকমই। যারা সরকারের ভেতরে থেকে ভিন্ন মতলবে ঘুঁটি চালাচালি করছিলেন তারা এখন মুখ লুকাচ্ছেন। পরিস্থিতি যে তাদের অনুকূলে নেই- এটা এখন সত্য। অন্তত তিন থেকে চারজনকে বিদায় নিতে হবে, সমঝোতার আলোকে। এটা সত্য, প্রফেসর ইউনূস একজন ভালো ব্যাংকার। একজন সুবক্তা। একজন দক্ষ এনজিও সংগঠক।  কিন্তু একজন ভালো রাজনীতিবিদ নন। রাজনীতির মারপ্যাঁচে নিজেকে জড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কতটা সফল হয়েছেন বা হবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, তিনি যদি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে হয়তো এ সমস্যা হতো না। যে কারণে বারবার সংকট হচ্ছে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে তার সরকার। তাছাড়া পদত্যাগ করতে চাইলেই কি পদত্যাগ করা যায়!  তাই আপাতত পদত্যাগ নয়। সামনের দিনগুলো কেমন হবে তা নিয়েই চিন্তা করছে তার প্রশাসন। নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে এ নিয়ে আপাতত  কোনো সন্দেহ নেই।  আমরা আগেই বলেছি নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে সংকট তত তীব্র হবে। পর্দার আড়ালের শক্তি সুযোগ খুঁজবে। হাতছাড়া হবে নির্বাচন। প্রফেসর ইউনূসের স্বপ্নের নির্বাচনও হারিয়ে যাবে দৃশ্যপট থেকে। 

নির্বাচন নিয়ে অনেক খেলা হয়েছে।  নির্বাচনবিরোধী একটি শক্তি সরকারের ভেতরে তৎপর ছিল। সামপ্রতিক ঘটনাবলি সে শক্তির ভিতকে অনেকটাই নাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার চালাতে হলে প্রফেসর ইউনূসের আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। কে তার বন্ধু, কে তার শত্রু এটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তার বিদেশি বন্ধুরাও সতর্ক করছেন। বলছেন, ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, সরকার হতে হবে বাংলাদেশকেন্দ্রিক। উপদেষ্টামণ্ডলীর মধ্যে মাত্র ছয়জন ঢাকার বাইরে কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। বাকিরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে নীতি-নির্ধারণ করছেন। বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই। প্রফেসর ইউনূস যদি একটি গতিশীল সরকার কায়েম করতে চান তাহলে তার নিজের ঘরকেই আগে ঠিক করতে হবে। সামপ্রতিক ঘটনাবলি তারই ইঙ্গিত দেয়।