Image description

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতি শুরুতে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল সীমাহীন। দিন যত গড়াচ্ছে মানুষের সেই প্রত্যাশায় ভাটা পড়েছে। বিশেষ করে দল গঠনের পর থেকেই এনসিপির অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা, নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ—এসব নানা কারণে দলটি যেমন ইমেজ সংকটে পড়েছে, তাদের প্রতি সাধারণের আবেদনও দিন দিন কমছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যতটা প্রত্যাশা নিয়ে গঠন করা হয়েছে তরুণদের এ দল, ততটাই হতাশা উপহার দিয়েছে তারা।

একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। পরে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন দলটির নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ এনসিপির জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন ‘চাঁদাবাজ’ নেতাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসে সমালোচনায় বিদ্ধ হন। নিজ দল থেকে শোকজও করা হয় তাকে। এর আগে মোংলা সমুদ্রবন্দর ইস্যুতে জড়িয়ে সমালোচিত হন তিনি।

আত্মপ্রকাশের পর এনসিপির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীর। তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক নিয়োগ ও এনসিটিবির বই ছাপার কাজে ‘কমিশন বাণিজ্য’ ও ‘হস্তক্ষেপ’ করার বড় অভিযোগ রয়েছে। তানভীরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে বেশ আলোচনা চলছিল। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতিও দেওয়া হয়। তাকে এখনো স্থায়ী বহিষ্কার না করায় নানা মহলে এনসিপিকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনসিপির শৃঙ্খলা কমিটি তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। এরই মধ্যে গত বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

নিজ দলের মধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন ছাত্রলীগ ছেড়ে শেখ হাসিনার পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যোগ দিয়ে আলোচিত হওয়া সারজিস আলম। এনসিপির এ মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) ঈদের আগে নিজ এলাকা পঞ্চগড়ে ৪০০ গাড়ির বহর নিয়ে শোডাউন করে সমালোচিত হন। এমন কর্মকাণ্ডে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে ‘আমার দাদা যে সম্পদ রেখে গেছেন, তা দিয়ে নির্বাচনটাও করে ফেলা যায়’ মন্তব্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসির পাত্রও হন তিনি।

আরেক মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সভায় অংশগ্রহণ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সেনা প্রধানসহ স্পর্শকাতর কিছু বিষয় নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচিত হন। এছাড়া হাসনাত ও সারজিস দুদক কার্যালয়ে গিয়ে দল এবং দলের বাইরে সমালোচিত হলেও কেন তারা দুদকে গিয়েছিলেন, সে বিষয়ে আজও মুখ খোলেননি।

অন্যদিকে, রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের (ডিজি) একান্ত সচিবের কক্ষে তদবির করার অভিযোগ ওঠে এনসিপির সংগঠক (হবিগঞ্জ) নাহিদ উদ্দিন তারেকের বিরুদ্ধে। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। ভিডিওতে তারেকের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সিনথিয়া জাহিন আয়েশাকেও দেখা গেছে।

এদিকে স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) ছাত্র প্রতিনিধি তুহিন ফারাবি, বর্তমান ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তারা সরাসরি এনসিপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হলেও এনসিপি সমর্থিত হিসেবে পরিচিত। তাদের এসব অভিযোগও এনসিপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ তিনজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গণমাধ্যমের কাছে তারা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।

এনসিপির পদে না থাকলেও ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে থাকা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স করা নিয়ে বিতর্কিত হন। পরে অবশ্য সমালোচনার মুখে সেই লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এ ছাড়া ভিডিও বার্তায় সেনাপ্রধান এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিতর্কিত প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলেন এ উপদেষ্টা।

আবার মাহফুজ আলম সরকারের অংশ হলেও তাকে এনসিপির প্রতিনিধিত্ব মনে করা হয়। তার বিভিন্ন ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে আবার মুছে ফেলা এবং দুঃখপ্রকাশ করার বিষয়টি নিয়েও নানা সময় বেশ হাস্যরসের জন্ম দেয়।

এর আগে ওয়াসার আউটসোর্সিংয়ের নিয়োগে সুপারিশ নিয়ে সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুমকে নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছিল। সে সময় এটিকে মিডিয়া ট্রায়াল, চরিত্র হননের অপচেষ্টা বলে দাবি করেছিলেন এনসিপি নেতারা।

গত ৪ মে বকেয়া বেতনের দাবিতে জনকণ্ঠ কার্যালয়ে আন্দোলনরত একদল সাংবাদিকের ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ ওঠে এনসিপির সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশিরের বিরুদ্ধে। পরে এ ঘটনায় চিঠি দিয়ে তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে তার দল এনসিপি।

এর আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করে তোপের মুখে পড়েছিলেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এমনকি এ নিয়ে নিজ দলেও ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন তিনি। সেই পোস্টেই এনসিপির দুই শীর্ষ নেতা সারজিস এবং হাসনাত প্রকাশ্যে দ্বিমত পোষণ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। পরে সমালোচনার মুখে অবশ্য পোস্টটি মুছে দেন নাসির। অপর এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন এই এনসিপি নেতা।

পলাতক আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে মামলা করে এরপর অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে বড় অঙ্কের চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মানিকগঞ্জ জেলার যুগ্ম সদস্যসচিব মেহেরাব খান ও আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ এবং ‘মানিকগঞ্জ নিউজ’ নামে একটি ফেক আইডির সঙ্গে তাদের জড়িত থাকায় এই দুই নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল মানিকগঞ্জ সদর থানার পুলিশ।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিরোধ: ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে একই ব্যানারে থাকলেও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে এনসিপির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ সামনে আসে। সর্বশেষ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের শপথ গ্রহণ কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। এনসিপির নেতারা সরাসরি বিএনপিকে ঘিরে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন। ছেড়ে কথা বলেনি বিএনপিও। বিএনপি নেতারাও সরকারে থাকা দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছেন। এনসিপি সম্পর্কে বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের ‘নাবালক’, ‘অর্বাচীন’সহ নানা মন্তব্য করতে শোনা যায়। বিএনপি ইশরাক ইস্যুতে দলীয়ভাবে সমর্থন দিলেও এনসিপি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও স্থানীয় নির্বাচনের দাবিতে পাল্টা মাঠে নামে। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনীতির মাঠে এনসিপি বনাম বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে দেখা যায়।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে বড় ধরনের সমর্থন জানায় জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির। তবে গত ১১ মে রাতে শাহবাগ থেকে ‘গোলাম আযমের বাংলায় আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’ স্লোগান এবং জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেওয়ায় ডানপন্থি দলগুলোর সমালোচনায় সরব হন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে লেখেন, ‘একাত্তরের প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে।’ বক্তব্য জামায়াত ও শিবিরকে উদ্দেশ করেই দেওয়া, তা স্পষ্ট। এরপর এনসিপি বিবৃতি দিয়ে একাত্তরের অবস্থান ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানায়। এ ছাড়া এনসিপি সমর্থিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদও এ ইস্যুতে সরব হয়। এরপর জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক শীতল হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাগযুদ্ধে জড়ায়। বিশেষ করে মাহফুজ আলমকে তার জন্য দায়ী করে তার সমালোচনা করেন তারা। এর আগে দল গঠনের আগেও শিবিরপন্থিদের ‘মাইনাস’ করার অভিযোগ আছে এনসিপির বিরুদ্ধে।

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের একাধিক নেতাকর্মী কালবেলাকে বলেন, সেই জুলাই থেকেই ছাত্র সমন্বয়কদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে আসছে জামায়াত এবং শিবিরের নেতাকর্মীরা। সব বড় জমায়েতে আমাদের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের আন্দোলনের পর তারা আমাদের সরাসরি মাইনাস করে দেয়। এরপর থেকে আমাদের নেতাকর্মীরা আর তাদের কোনো কর্মসূচিতে যেতে রাজি নয়। বিএনপির সঙ্গে তাদের বিরোধ স্পষ্ট হলেও আমরা তাদের ডাকে যেতে এখন দুইবার ভাবব।

শুধু জানায়াত-বিএনপি নয়, এনসিপি নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের মিত্র গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গেও বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। বিএনপি নেতা ইশরাকের আন্দোলনে সমর্থন দেওয়ায় এবং দুই ছাত্র উপদেষ্টা ও এনসিপি সমর্থিত ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক এজাজ আহমেদের পদত্যাগ চাওয়া কেন্দ্র করে এনসিপি নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি হয়। একে অন্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে আসেন তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুপক্ষের কর্মী-সমর্থকরা পরস্পরকে আক্রমণ শুরু করেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কর্মসূচিতে হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গেও এনসিপির বিরোধ দেখা যায়।

এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান কালবেলাকে বলেন, মানুষ এনসিপির প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কারণ, তারা প্রতিটি দলের সঙ্গে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে। যাকে যখন দরকার কাছে টেনেছে, কাজ শেষে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। সবাইকে মাইনাস করে গণঅভ্যুত্থানের একক শক্তি হিসেবে নিজেদের আবির্ভূত করেছে। বিভিন্ন নেতাকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছে। আমাদের দল ভাঙার ষড়যন্ত্রের সঙ্গেও তারা জড়িত।

ইউনাইটেড ইয়াং ফোর্সের আহ্বায়ক মো. শাকিল মিয়া কালবেলাকে বলেন, আত্মপ্রকাশ করার পর থেকেই এনসিপি নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তের নামে সেই পুরোনো ধারায় ফিরে যাচ্ছে। রাজপথের পরীক্ষিত বিপ্লবীরা যেমন হতাশ হয়ে তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তেমনি জনগণ তাদের নিয়ে বিব্রত। যেসব কারণে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, সেই একই বিষয় তাদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। তরুণদের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যেখানে ঐক্য ও সংহতি ধরে রাখা দায়িত্ব সেখানে তারা নিজেরাই নানা ইস্যু তৈরি করে ঐক্য ও সংহতি নষ্ট করছে।

আত্মপক্ষ সমর্থন এনসিপি নেতাদের: এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার কালবেলাকে বলেন, যে মাত্রায় প্রত্যাশা ছিল, সে মাত্রায় আমরা জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। সে চেষ্টা আমরা অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু যেভাবে আমাদের বিরুদ্ধে নানা সময়ে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হয়, যার সঙ্গে এনসিপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, তাকেও এনসিপি হিসেবে দেখানো হয়—এসব ঘটনা আমরা চিহ্নিত করেছি। যেসব সমালোচনা আছে, সেসব আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।

যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা বড় ধরনের বিতর্কে জড়িয়েছেন, এ সংখ্যাটা খুব কম। কিছুটা ঘটেছে তা স্বীকার করেই বলছি, দেশপ্রেমিক এবং আগ্রাসনবিরোধী শক্তি হিসেবে এনসিপিকে বিতর্কিত করার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠী বারবার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া যেসব ঘটনা ঘটছে, এনসিপি ব্যবস্থা নিচ্ছে, নিরুৎসাহিত করছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ হান্নান মাসউদ। দলীয় শৃঙ্খলা ও বিতর্ক তৈরি না করতে কঠোর হচ্ছে আমাদের দল।

মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করার নানা কার্যক্রমও চলমান। এ চক্রান্ত কয়েকটি দিক থেকে পরিচালিত হচ্ছে। তারপর আমরা যেন নিজেরাই বিভাজনের পথ বেছে নিয়ে অন্য কাউকে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুযোগ না দিই, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

বিশেষজ্ঞ মত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. স ম আলী রেজা কালবেলাকে বলেন, যেহেতু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল, সেহেতু তাদের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন শক্তি হিসেবে অনেকে বিবেচনা করেছে এনসিপিকে। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে তড়িঘড়ি করে দুই মাস আগে দলটা গঠিত হয়েছিল, সে রকম দ্রুতই দলটা সম্পর্কে নানা আলোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক, দুর্নীতির খবর চাউর হয়েছে। এর সবকিছু যেমন সত্য নয়, সবকিছু উড়িয়েও দেওয়া যাবে না। ফলে এ দল সম্পর্কে মানুষের আবেদনও কমে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গড় বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার চেয়ে বেশি বয়সী অনেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দিচ্ছেন। দলকে সাসটেইনেবল করার জন্য কাঠামো তারা তৈরি করতে পারেনি এনসিপি। এটা বয়সের জন্য হতে পারে, অভিজ্ঞতার জন্য হতে পারে। এ ছাড়া এ দলটা আবার কিংস পার্টি হতে যাচ্ছে না তো, এ ধরনের ধারণাও আছে মানুষের মাঝে। সবমিলিয়ে মানুষের মনে জায়গা তৈরি করে নেওয়া তাদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।