
আগামী জুলাই মাস থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করতে চায় সরকার । কিন্তু এ জন্য যে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে , সেটির কাজ এখনো শেষ হয়নি । এ অবস্থায় বিদ্যমান টার্মিনাল ব্যবহার করে সীমিত পরিসরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার চিন্তা রয়েছে । এ জন্য প্রয়োজনে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট সাময়িক বন্ধ রাখা হবে ।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ( বেবিচক ) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে । কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রায় এক দশক আগে । সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাটি আঞ্চলিক হাবে রূপান্তরের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে জরুরি বিমান চলাচলের পথ প্রস্তুত রাখাও এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য । এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বর্তমানে‘ রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প'সহ নানা উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে । তবে প্রকল্পের কাজ শেষ না হলেও সম্প্রতি সরকার ঘোষণা দিয়েছে আগামী জুলাই মাস থেকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করবে কক্সবাজার বিমানবন্দর ।
এ জন্য গত ২১ এপ্রিল বেবিচক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয় । বৈঠকের কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে , কক্সবাজার বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে । ওই সময়ের মধ্যে যদি নতুন টার্মিনালের কাজ শেষ না হয় , তবে প্রয়োজনে বর্তমান টার্মিনাল ভবন থেকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ রেখে সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে ।
বেবিচক জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে । জুলাই মাসে কক্সবাজার থেকে স্বল্প পাল্লার বিমানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকবে । কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর জন্য এরই মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । পরিকল্পনা অনুযায়ী , আপাতত বৰ্তমান টার্মিনাল ভবন থেকেই আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হবে । নতুন আন্তর্জাতিক টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর এখান থেকে বড় আকারের উড়োজাহাজগুলো দিয়ে ফ্লাইট পরিচালিত হবে । তবে বাস্তবতা হলো, নতুন টার্মিনালের কাজ শেষ হতে অন্তত ৯ মাস লাগবে । এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর জন্য এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার ( আইকাও ) অনুমোদনও নেওয়া হয়নি ।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে , প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জমি অধিগ্রহণ ও স্থানীয় উচ্ছেদ সমস্যা । রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য নির্ধারিত ৪ দশমিক ৫৬ একর জমিতে গণপূর্ত ও সড়ক ও জনপথ ( সওজ ) বিভাগের স্থাপনা রয়েছে , যা এখনো অপসারণ করা সম্ভব হয়নি । ফলে বিমানবন্দরের গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণকাজ , যেমন ফায়ার স্টেশন ভবন , ড্রেনেজ , পেরিফেরিয়াল রোড ও নিরাপত্তাপ্রাচীর নির্মাণ থেমে রয়েছে । অন্যদিকে , বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী ঝিনুক মার্কেট এলাকার ১৪ টি দোকান এবং বস্তির ৪২ টি পরিবার এখনো উচ্ছেদ করা যায়নি । একই সঙ্গে ৬৮২ একর বন্দোবস্তকৃত জমির মধ্যে ৯৭ একর এলাকায় বসবাসরত প্রায় ৩ হাজার ৩০০ পরিবারও বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে । সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও তাদের সরানো সম্ভব হয়নি । এসব সমস্যার কারণে বিমানবন্দরের ৪০ ভাগ কাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে ।
জানা গেছে , জমি অধিগ্রহণের জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো কার্যকর ফল আসেনি । বেবিচক থেকে সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে , যেখানে উচ্ছেদসংক্রান্ত জটিলতা , নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি ও অর্থছাড় নিয়ে সমস্যাগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , বিমানবন্দরের অপারেশনাল এলাকার মধ্যে দাবিকৃত ৬ দশমিক ৫৭ একর জমির মধ্যে ৪ দশমিক ৬৪ একর ভূমিতে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় ফায়ার স্টেশন ড্রেনেজ ব্যবস্থা , পেরিফেরিয়াল রোড এবং সিকিউরিটি বাউন্ডারি ওয়ালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না ।
অন্যদিকে , বিমানবন্দরের অনুকূলে বরাদ্দ ৬৮২ একর জমির মধ্যে ৯৭ একরে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ পরিবার এখনো বসবাস করছে । তাদের উচ্ছেদ করতে না পারাটা প্রকল্প বাস্তবায়নের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে । তবে ইতিমধ্যে সমুদ্র এলাকায় রানওয়ে নির্মাণের কাজ ৯৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে । সমুদ্রবক্ষে বাঁধ নির্মাণকাজ ৯৪ শতাংশ অগ্রসর হয়েছে । ২ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রিসিশন অ্যাপ্রোচ লাইট স্থাপনসহ মূল রক্ষণাবেক্ষণ স্টিল ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৮৩ শতাংশ । এ ছাড়া রানওয়ের চারপাশে নিরাপত্তা সীমানাপ্রাচীর ও নিরাপত্তা টহল রাস্তা নির্মাণের অগ্রগতি ২৬ শতাংশ এবং রানওয়ের চারপাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ শেষ হয়েছে ৫৫ শতাংশ ।
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো . মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সম্প্রতি বলেন , কক্সবাজার বিমানবন্দরের অপারেশনাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে সব স্টেক হোল্ডারকে নিয়ে কাজ চলছে । বিমানবন্দরের টার্মিনাল অবকাঠামো , রানওয়ে , আলোর ব্যবস্থা , সুরক্ষা বাঁধের কাজগুলো ক্রমাগত পরিদর্শন করা হচ্ছে । প্রসঙ্গত , কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়েকে আরও ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারিত করে মোট ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করা হয় । সম্প্রসারিত অংশের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ ফুট সরাসরি সাগরের পানির মধ্যে । এটি দেশের ইতিহাসে প্রথম সমুদ্রের মধ্যে ব্লক তৈরি করে নির্মিত রানওয়ে । প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা , যা পুরোপুরি অর্থায়ন করছে বেবিচক ।