
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানিতে (বাংলাদেশের রপ্তানি) ভারত সরকারের আরোপিত বিধিনিষেধ তিন মাসের জন্য স্থগিত করতে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে চিঠি দিয়েছে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে চলমান রপ্তানি ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধটি স্থগিত করতেও অনুরোধ করেন তিনি। সংগঠনটির একাধিক নেতা বাণিজ্য সচিবকে চিঠি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিকেএমইএ’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) উদ্যোগে ১৮ই মে এবং বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে ২০শে মে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সব অংশীদার ঐকমত্যে পৌঁছান, সেটা হলো বাংলাদেশ সরকারকে সচিব পর্যায়ে ভারতের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে স্থলবন্দরগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ রপ্তানি পণ্য ভারতে প্রবেশ করে, যার মধ্যে বড় একটি অংশ তৈরি পোশাক। গত ১০ মাসে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ১২ হাজার ৮১১ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে গত আট মাসে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
এই বিধিনিষেধের কারণে ইতিমধ্যে রপ্তানি পণ্য সীমান্তে আটকে গেছে, অনেক পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে এবং এলসি’র মাধ্যমে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ক্রেতাদের আস্থা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের সুনাম দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মোহাম্মদ হাতেম সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান, ‘এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রপ্তানিকারকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ভারত সরকারকে অনুরোধ করতে হবে যেন তারা অন্তত তিন মাসের সময় দেয় এবং বর্তমানে প্রক্রিয়ারত রপ্তানি আদেশ এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখে।’
১৭ই মে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। শুধু ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন।
পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাবপত্র রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী শুল্কস্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, এর মধ্যে ৩.৭৫ শতাংশ পণ্য যায় ভারতে। পার্শ্ববর্তী এই দেশ বাংলাদেশের নবম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য। অন্যদিকে, ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট আমদানির ১৪ শতাংশের কিছু বেশি। ভারত থেকে শিল্পের কাঁচামাল বেশি আসে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, ভারতের অষ্টম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশ। বিকেএমইএ’র চিঠির অনুলিপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছেও পাঠানো হয়েছে।