
মো. আব্দুর রহমান। বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের ক্যাশিয়ার হিসাবেই এলাকায় বেশি পরিচিত। ’৯০ দশকে তার পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা ছিল। আর বর্তমানে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। আব্দুর রহমানের বাবা জসিমউদ্দীন বোদা সরকারি খাদ্য গুদামের মাস্টাররোলে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসাবে কাজ করতেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক সময় বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ আসা চাল-গমের ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) কিনে নিতেন। প্রায় অর্ধেক মূল্যে প্রকল্পের চাল-গম কিনে বেশি দামে বিক্রি করতেন। এই ব্যবসার জন্য তিনি বোদা বাজারের মনবি সিনেমাহল রোডে প্রকাশ্যেই গদিঘর খুলে বসেন।
প্রকল্পের চাল-গম বিক্রির জন্য দাদন হিসাবে বিভিন্ন ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের আগাম টাকা প্রদানও করতেন রহমান। এ জন্য সবাই তাকে ‘ডিও ব্যবসায়ী রহমান’ নামেই ডাকতেন। এই ডিও ব্যবসা করেই আব্দুর রহমান এখন বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক। পঞ্চগড়-২ আসনের সাবেক এমপি নূরুল ইসলাম সুজনের আশীর্বাদ ও ছত্রছায়ায় আব্দুর রহমান ‘ডিও ব্যবসা’ পরিচালনা করতেন। নূরুল ইসলাম সুজন রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর তার ব্যবসায় আয়-উন্নতি দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। এই টাকার জোরে আব্দুর রহমান বিনা ভোটে পরপর দু’বার জেলা পরিষদের কাউন্সিল নির্বাচিত হন। এরপর শুরু করেন নামে-বেনামে ঠিকাদারি ব্যবসা। এভাবে অল্প সময়েই আব্দুর রহমান বনে যায় বিপুল বিত্ত ভৈববের মালিক। জনশ্রুতি রয়েছে, সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের ক্যাশিয়ার হিসাবে তার আর্থিক বিষয়াদি দেখভাল করতেন আব্দুর রহমান। এমনকি অবৈধভাবে সুজনের আয় করা কোটি কোটি টাকাও তার কাছেই রক্ষিত। জুলাই-বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গা-ঢাকা দিলেও আব্দুর রহমান এখনও এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে হেন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি।
জানা গেছে, বিভিন্ন বিভাগের টেন্ডারের কোটি কোটি টাকার কাজের নিয়ন্ত্রণ, ঠিকাদারি ব্যবসা, তদবির বাণিজ্য, রেল বিভাগের কাজের তদবির, হাটের ইজারা নিয়ন্ত্রণ করতেন আব্দুর রহমান। এই অবৈধ আয়ের টাকায় বোদা পৌরসভা সংলগ্ন মহাসড়কের পাশে প্রায় ১৫ কোটি টাকা মূল্যের দুই বিঘা জমি এবং পৌরসভা এলাকার খোকা মাস্টারের বোনের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকায় এক বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। বোদা বাজারে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন মোটরসাইকেলের শো-রুম। এছাড়া বোদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে কিনেছেন প্রায় শতাধিক বিঘা জমি। অথচ তার দৃশ্যমান বা বৈধ কোনো ব্যবসা কখনই ছিল না।
প্রকল্পের চাল-গম কেনাবেচাই ছিল তার একমাত্র পেশা। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ দোসর হয়েও চলতি বছর ৪০ লাখ টাকা খরচ করে বোদা পৌরসভার অন্তর্গত নগর কুমারী হাটের ইজারা বাগিয়ে নিয়েছেন আব্দুর রহমান। বোদা থানার ওসি আজিমউদ্দীন বলেন, আবদুর রহমানের নামে কোনো মামলা নাই। তাছাড়া বর্তমানে তিনি ‘একটিভ’ নন, এ জন্য তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আব্দুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব ভিত্তিহীন ও মিথ্যা প্রচারণা মাত্র।