
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নিয়ে গর্বিত যে শহর, তার নাম ‘কক্সবাজার’। এই নামের পেছনে রয়েছে এক মানবিক ও ইতিহাসসমৃদ্ধ গল্প। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের মানবিক উদ্যোগের ফলেই এ অঞ্চলের নামকরণ হয় ‘কক্সবাজার’।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৭৯৮ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সকে এ অঞ্চলে পাঠানো হয়। তার দায়িত্ব ছিল আরাকান (বর্তমান মিয়ানমার) থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন করা। দীর্ঘ রাজনৈতিক সংঘাত ও যুদ্ধের কারণে হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী হয়ে তৎকালীন বাংলা অঞ্চলে এসে আশ্রয় নিয়েছিল।
এ সংকটময় পরিস্থিতিতে ক্যাপ্টেন কক্স তাদের জন্য খাদ্য, আশ্রয় ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। তার কাজের সুবিধার্থে এখানে একটি স্থায়ী বাজার প্রতিষ্ঠা করেন, যা স্থানীয়দের কাছে পরিচিত হয় ‘কক্সের বাজার’ নামে। পরে সময়ের ব্যবধানে এ নাম রূপান্তরিত হয়ে ‘কক্সবাজার’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
ক্যাপ্টেন কক্সের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং মানবিক অবদানের জন্য আজও কক্সবাজারের ইতিহাসে তার নাম অমর হয়ে আছে। তবে দুঃখজনকভাবে, তার কাজ শেষ হওয়ার আগেই ১৭৯৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্মরণে পরবর্তীতে এলাকাটি সরকারিভাবে ‘কক্সবাজার’ নামে স্বীকৃতি পায়।
বর্তমানে কক্সবাজার শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বিশ্বের পর্যটকদের কাছেও একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। সমুদ্রের নীল জলরাশি, বিস্তীর্ণ বালুর সৈকত, পাহাড়, বন এবং দ্বীপের মায়াজাল নিয়ে গড়ে উঠেছে এক অনন্য স্থান। তবে এ শহরের নামের পেছনে থাকা মানবিক ইতিহাস অনেকেরই অজানা।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ উল্লাহ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কক্সবাজারে ক্যাপ্টেন কক্সের অবদান ছিল ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ১৭৯৯ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে মিয়ানমার থেকে সেনাবাহিনীর দমন পীড়নে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের পূর্ণবাসনের দায়িত্ব দিয়েছিল। তিনি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা ও পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করেন, যা পৃথিবীতে তৎকালীন তৎকালীন সময়ে মানবিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজারের প্রকৃত ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে ঠিকমতো উঠে আসেনি, কারণ সাধারণত জাতীয় ইতিহাসকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। যেমন মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি। এর ফলে আঞ্চলিক ইতিহাস বা স্থানীয় ইতিহাস অনেক সময় গুরুত্ব পায় না।’
মোহাম্মদ উল্লাহ তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্য বলেন, ক্যাপ্টেন কক্সের থেকে মানবিক নেতৃত্ব, আত্মত্যাগের মনোভাব, ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি সহানুভূতি, সমস্যা সমাধানে কৌশলী ও দায়িত্বশীল আচরণ শিক্ষা নেওয়ার আছে। তিনি মনে করেন, বর্তমানে আধুনিক সমাজে সেবামূলক ও ন্যায়ভিত্তিক নেতৃত্ব গঠনে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।