
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এ ছাড়াও প্রস্তাবিত ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নিয়ে আরো পর্যালোচনার জন্য চার সদস্যের একটি উপদেষ্টা প্যানেল গঠন করা হয়েছে। এই প্যানেল নতুনভাবে যুক্ত কিছু শৃঙ্খলাবিষয়ক বিধান শিথিল করার বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের ২৯তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ওই বাধ্যতামূলক অবসরের বিধানটি বাতিলের সুপারিশ করেছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এটি দেশের সিভিল সার্ভিস খাতে একটি বড় সংস্কারের সূচনা।
জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে পেশাগত দ্বন্দ্ব, অনুমতি ছাড়াই কিছু কর্মচারীর কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, ডিসি নিয়োগকাণ্ডে হট্টোগল-হাতাহাতি, সচিবের রুম আটকিয়ে আন্দোলনসহ বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। প্রথমে বাতিল হওয়া সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯ কার্যকর করার ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘দেশের বিদ্যমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের মাঝে নানা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে এবং কেউ কেউ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আইনসংগত আদেশ/নির্দেশ পালনে অনীহা প্রকাশ করছেন। এতে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
পরবর্তী সময়ে বাতিল হওয়া সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯-এর সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো বিদ্যমান সরকারি কর্মচারী আইনে সংযোজন করে সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলা আনতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি নতুন আইনের খসড়া তৈরি করে। এই খসড়া অনুযায়ী, যদি কোনো সরকারি কর্মচারী এমন কোনো কাজ করেন, যার কারণে অন্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করার প্রবণতা তৈরি হয়, অফিসের শৃঙ্খলা নষ্ট হয় বা অন্যদের কাজে বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে।
এ ছাড়া যদি কোনো কর্মচারী ছুটি না নিয়ে বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া একা বা দলবদ্ধভাবে নিজের কাজে অনুপস্থিত থাকেন অথবা অন্য কর্মচারীদের কাজে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেন বা তাঁদের অনুপস্থিত থাকতে উসকানি দেন, তবে সেগুলোও অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের অসদাচরণের জন্য দোষী প্রমাণিত হলে কর্মচারীকে নিম্নপদে নামিয়ে দেওয়া, বেতন কমিয়ে দেওয়া, চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া (অপসারণ) অথবা সরাসরি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার মতো শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। এই নিয়মগুলো সরকারি অফিসের কাজে আরো শৃঙ্খলা ও দক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রণীত হচ্ছে।
এ ছাড়া ‘দ্য প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’ ও ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
আর বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস সরকারের মধ্যে নৌ প্রতিরক্ষা সামগ্রীসংক্রান্ত সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।