
‘প্রায় ২০০-২৫০ পুলিশ বাহিনীর সদস্য গুলি করতে করতে বের হয় থানা থেকে, দিগ্বিদিক ছুটতে শুরু করে আন্দোলনকারীরা, রাস্তায় নুয়ে পড়তে থাকে একের পর এক ছাত্র-জনতার নিথর দেহ। আমরা রাস্তার পাশে একটি ডাস্টবিনে লুকিয়ে ছিলাম। সেখানেও হামলা করা হয় আমাদের ওপর। বাধ্য করা হয় দৌড়াতে।
এ সময় দৌড়াতে শুরু করলে পেছন দিক থেকে গুলি করা হয়। একটা গুলি আমার রানে আঘাত করে। তখন কিছু টের না পেলেও একটু পর মাটিতে লুটিয়ে পড়ি আমি। কয়েকজন আন্দোলনকারী সহযোদ্ধা আমাকে নিয়ে যায় সলিমুল্লাহ মেডিকেলে।’
এভাবেই ২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানের শেষদিন যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার সেই লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন সেদিনকার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হওয়া চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মো. নাঈম উদ্দিন।
বর্তমানে নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়ে এই জুলাই যোদ্ধা জানান, আন্দোলনের পর থেকে আজ পর্যন্ত বেকার। ঘরে মা, বউ আর ২ বছর বয়সি সন্তান রয়েছে। আগে মাছ ধরার কাজ করতাম। কিছু সময় গ্রামে থাকলেও কিছু সময় ঢাকায় থাকতাম। এখন ভারি কোনো কাজ করার মতো সক্ষমতা নেই আর। নিজের এবং নিজের পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছি।
স্বামীর এমন দুঃসময়ে ছায়া হয়ে তার পাশে আছেন নাঈমের স্ত্রী সায়মা আক্তার পপি। নিজেদের একমাত্র ছেলে আব্দুল্লাহ আল আয়ানকে নিয়ে তাদের ছোট্ট সংসার। আন্দোলনের পর থেকে পুরোটা সময়ে স্বামীকে কাছে পেয়েছে ঠিকই তবে দুশ্চিন্তার চাপ পড়েছে তার চোখেমুখে। তাই নিজের আহত স্বামীর জন্য যোগ্যতার মধ্যে একটি চাকরির আবেদন জানান তিনি।
এদিকে জুলাই আন্দোলনের এসব আহতদের খোঁজখবর রেখে সরকার ঘোষিত বরাদ্দসহ সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের অন্যতম সমন্বয়ক জুবায়ের আলম মানিক।
তিনি বলেন, আহতদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছি। জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকার ঘোষিত যেসব সুযোগ সুবিধা দেওয়া কথা সেগুলোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করছি।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার জানান, আনোয়ারার যারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় জুলাই আন্দোলনে আহত হয়েছেন তাদের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সব সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।