Image description
 

চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে ১৯০১ সালে স্থাপিত প্রাচীন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল বর্তমানে এক ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সংকটের মুখোমুখি। করোনা মহামারির সময় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সেবা চালু করে আলোচনায় এলেও, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই আইসিইউ বিভাগ আজ নিজেই ‘আইসিইউ’তে। প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর ও যন্ত্রপাতির অধিকাংশই অচল, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঘাটতি চরমে, এবং ফলস্বরূপ পুরো আইসিইউ ইউনিট কার্যত অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে।

২০২০ সালে হাসপাতালটিতে ১৮ শয্যার আইসিইউ চালু করা হয়। তখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরাদ্দে স্থাপন করা হয়েছিল ২২টি ভেন্টিলেটর। কিন্তু এখন একটিও কার্যকর অবস্থায় নেই। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় যন্ত্রগুলো একে একে বিকল হয়ে পড়ে। এতে করে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

এখানেই শেষ নয়—আইসিইউতে থাকা ৩৩টি বাইপ্যাপ মেশিনের মধ্যে সচল আছে মাত্র ৫টি, আর ৩৯টি হাই-ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলার মধ্যে সচল আছে মাত্র ৩টি। আইসিইউ ইউনিট এখন কার্যত হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেসব রোগীর পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন, তাদের বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে যন্ত্রপাতিগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় এসব মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে যথাযথ নজরদারি বা সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ না করায় পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগ চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সেবার জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ জনবল গঠিত হয়নি। হৃদরোগ, কিডনি রোগ বা ব্রেন স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের সেবায় দরকার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি—কিন্তু এই হাসপাতালে নেই কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি বা নিউরোলজি বিভাগ। ফলে আইসিইউ’র পরিপূর্ণতা কোনোকালেই অর্জিত হয়নি।

বর্তমানে মাত্র ৬ জন অ্যানেস্থেশিয়া কনসালটেন্ট দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে, যাদের ৪ জনই সংযুক্তিভিত্তিক। এই চিকিৎসকদের একদিকে যেমন আইসিইউতে দায়িত্ব পালন করতে হয়, অন্যদিকে অপারেশন থিয়েটারে অ্যানেস্থেশিয়া দেয়ার কাজেও নিযুক্ত থাকতে হয়। তদুপরি, কয়েক মাস আগে হাসপাতাল থেকে ২২ জন চিকিৎসকের সংযুক্তি বাতিল করায় চিকিৎসাসেবা আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে শুধুমাত্র ভেন্টিলেটর থাকলেই যথেষ্ট নয়—আইসিইউ সেবার জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা। কিন্তু এই হাসপাতালটিতে নেই হৃদরোগ, নিউরোলজি কিংবা নেফ্রোলজি বিভাগ। যার ফলে, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত রোগীদের আইসিইউতে রেখে পূর্ণাঙ্গ সেবা দেয়া এক কথায় অসম্ভব।

বর্তমানে হাসপাতালটিতে মাত্র ৬ জন অ্যানেস্থেশিয়া কনসালটেন্ট রয়েছেন, যার মধ্যে ৪ জন আবার সংযুক্তিভিত্তিক কর্মরত। এই চিকিৎসকদেরই একসঙ্গে অপারেশন থিয়েটারে অ্যানেস্থেশিয়া দেয়া এবং আইসিইউ ইউনিট পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে, কয়েক মাস আগে হাসপাতাল থেকে ২২ জন চিকিৎসকের সংযুক্তি বাতিল হওয়ায় সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, “আইসিইউ সেবা পুরোপুরি বন্ধ—এটা বললে কিছুটা অতিরঞ্জিত হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের ভেন্টিলেটর সম্পূর্ণ অচল, ফলে আমরা মুমূর্ষু রোগীদের প্রয়োজনীয় লাইফ সাপোর্ট দিতে পারছি না। আইসিইউ সেবার অন্যতম মূল ভিত্তি ভেন্টিলেশন, আর সেটাই এখন নেই। চিকিৎসক সংকটও রয়েছে, কারণ কিছুদিন আগেই ২২ জন চিকিৎসকের সংযুক্তি বাতিল হয়েছে।”

এমন বাস্তবতায় বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট কার্যত হাই-ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোনো রোগীর পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সাপোর্ট দরকার হলে, তাকে তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং প্রাইভেট হাসপাতালে রেফার করে দেয়া হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মান্নান সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, “আমরা ১০টি আইসিইউ শয্যা পুনরায় সচল করার কাজ শুরু করেছি। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। আমরা আশাবাদী যে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে এবং সেবা পুনরায় চালু করতে পারব।”


তবে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবায় সম্পৃক্ত একাধিক সূত্র বলছে, এই কাজ কেবল আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করতে হবে দ্রুত, নইলে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।