
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সচল করতে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যে কোনো সময় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ শুরু হবে। এই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে গতকাল রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শুরু হয়েছে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক। বৈঠকে ছয় বছরব্যাপী কর্মী নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে মালয়েশিয়া। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার বন্ধেও হস্তক্ষেপ চেয়েছেন দেশটির প্রতিনিধিরা। দুই দিনব্যাপী সভা শেষে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সরকারের মধ্যে শ্রমিক নেওয়া সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে।
শ্রমবাজার নিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি। কমিটির সভায় অংশ নিতে মঙ্গলবার মালয়েশিয়া সরকারের ১৪ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছে। মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ড. ম. শাহরিন বিন উমর। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া। বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সকালে উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। কোনো অনিয়ম ও বৈষম্যের সুযোগ রাখা হবে না। তিনি বলেন, গত বছর শ্রমবাজারটি বন্ধ হওয়ার কারণে সব প্রক্রিয়া শেষ করেও যেতে না পারা প্রায় ৮ হাজার কর্মী প্রথম ধাপে যাবেন। তাঁদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় বোয়েসেলের মাধ্যমে দ্রুত পাঠানো হবে। বাংলাদেশে অধিকসংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি থাকায় মালয়েশিয়া সরকার সীমিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিতে আগ্রহী। তাই এই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রয়োজনে সমঝোতা স্মারক সংশোধন করার আলোচনা হবে। শ্রমবাজার ইস্যুতে মালয়েশিয়া কোনো শর্ত দেয়নি জানিয়ে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, অতীতে যারা সিন্ডিকেট করেছে, তাদের মামলা প্রত্যাহারসহ মালয়েশিয়া সরকার কোনো শর্ত দেয়নি। বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল অ্যান্ট্রি ভিসা দেওয়ার বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকার আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক করছে। কর্মী নেওয়ার বিষয়টি মালয়েশিয়া সরকার খুবই আন্তরিকভাবে দেখছে। দুই পক্ষই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে চায়। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রথম দিনে দুই দেশের প্রতিনিধিদের আলোচনা সফল হয়েছে। যে কোনো সময় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো শুরু হবে। আলোচনায় মানব পাচার প্রসঙ্গ এসেছে। কারণ অবৈধ পন্থায় শ্রমিক গেলে তাদের মালয়েশিয়ার বন-জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াতে হয়। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। মামলা হয়, কারাভোগ করে। তাই অবৈধ প্রক্রিয়ায় শ্রমিক না নিয়ে বৈধ প্রক্রিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে দেখছে।