
রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনের কাজ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে বিদেশিদের। তারা প্রায় নিয়মিত বৈঠক করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে। খোঁজ নিচ্ছেন সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতির। আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের মাধ্যমেও সংস্কার প্রক্রিয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন তাঁরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের যোগসূত্র রয়েছে কিনা জানতে চাচ্ছেন বেশির ভাগ বিদেশি। এ নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে। এদিকে কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিদেশিরা কমিশনের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করছেন বলে জানানো হচ্ছে। এরই মধ্যে সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়েছে। শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কমিশনের কার্যক্রম শুরু হলেও বিদেশিরা আগ্রহ দেখাতে শুরু করেন এপ্রিল মাস থেকে।
গত দুই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিরা আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এর মধ্যে এপ্রিল মাসেই তিনটি সংস্থার প্রতিনিধিরা সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে মুখোমুখি হন কমিশনের। ১৩ এপ্রিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে সংসদ সচিবালয়ের কমিশন কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি মিচায়েল লাইডোয়ার ও মেট্টি বাক্কেন সাক্ষাৎ করেন। ১৬ এপ্রিল কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (আনফ্রেল) প্রতিনিধিরা। আনফ্রেলের নির্বাহী পরিচালক ব্রিৎজা রোসেলসের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলে প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচিবিষয়ক কনসালট্যান্ট মে বতুই ছাড়াও বৈঠকটিতে আরও অংশ নেন থারিন্ডু অভয়রত্ন, আয়ান রহমান খান এবং আফসানা এমি। ওই বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের কার্য অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
কমিশনের পক্ষে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ে একটা জাতীয় সনদ তৈরি করা যাবে। যা বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে সুষ্ঠু নির্বাচনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। এরপর ২৮ এপ্রিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্সের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলভিত্তিক কর্মসূচির পরিচালক লীনা রিখিলা তামাংয়ের বৈঠক হয়। এ সময় ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএর প্রোগ্রাম ম্যানেজার গ্রেইস প্রিয়েটো উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএর পরিচালক লীনা রিখিলা তামাং কমিশনের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন বলে জানানো হয় কমিশনের পক্ষ থেকে। ১৩ মে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্য কার্টার সেন্টারের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর জনাথন স্টোনস্ট্রিটের বৈঠক হয়।
এ সময় দ্য কার্টার সেন্টারের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর সাইরাহ জাইদি এবং লোকাল অ্যাসিস্ট্যান্ট বিশেষজ্ঞ কাজী শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ ১৪ মে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন আর এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট ক্যারি কেনেডি। এতে আর এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের এশিয়ার স্টাফ অ্যাটর্নি ক্যাথরিন কুপার এবং আন্তর্জাতিক পরামর্শ এবং বিচারিক কার্যক্রমের ভাইস-প্রেসিডেন্ট অ্যাঞ্জেলিটা ব্যায়েন্স উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আলী রীয়াজ বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই কেবল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ জনগণের দোরগোড়ায় সুবিচার ব্যবস্থা পৌঁছে দিতে পারে। আর এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট ক্যারি কেনেডি ঐকমত্য কমিশনের কাজে সন্তোষ এবং কমিশনের সাফল্য কামনা করেন বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। কমিশন সংশ্লিষ্টরা জানান, আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করছেন বিদেশিরা। এর মধ্যে রয়েছেন হিউম্যান রাইটস ও ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধি। এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কমিশনের পাশাপাশি বিদেশিরা বেশির ভাগ বৈঠক করছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে। এসব বৈঠক প্রমাণ করে সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের আগ্রহর বিষয়টা। মূলত কোন কোন ক্ষেত্রে, কী পদ্ধতিতে সংস্কারটা হতে যাচ্ছে এসব বিষয় নিয়ে তারা জানতে চাচ্ছেন। এ ছাড়া সংস্কারের মূল লক্ষ্যটাই বা কী এটাও তাদের আগ্রহের অন্যতম বিষয়।