Image description

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবে প্রায় সব দল একমত হওয়ার পরও কমিশন কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা কেন করা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ফ্যাসিবাদ, গণ-অভ্যুত্থান, বিপ্লব ও সংবিধান বিতর্ক’— শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। বইটি লিখেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের উদ্দেশে মান্না বলেন, ‘এই যে এত দিন ধরে কথা বললেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। কী দাঁড়াল? ন্যূনতম ঐকমত্য পাওয়া গেছে? ১৬৬টা প্রস্তাব করেছিলেন, ১৪৬টাতে সবগুলো দল একমত হয়েছে। তাহলে বেশির ভাগই তো একমত হয়ে গেছে। তারপরও নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে পারছেন না কেন?’

‘রাজনৈতিক দলগুলো মৌলিক বিষয়ে নিজেরা আলোচনা করে সমাধান করবে’—আলী রিয়াজের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মান্না বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যদি আলোচনা করে সমাধান করতেই পারত, তাহলে আপনাদের তো আসার প্রশ্ন আসত না।’

মান্না আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ হলো নির্বাচন, সংস্কারের ব্যবস্থা করা। কিন্তু একটা সংস্কারও এই সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। এত দিন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কী ফল দাঁড়াল?’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘বিদেশি পাসপোর্টধারীরা এখন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছে, তা হিসাব করে পাওয়া মুশকিল। পুরো দেশের মধ্যে একটি সংশয়, অবিশ্বাস তৈরি হয়ে যাচ্ছে।’ স্টারলিংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাইবার সিস্টেমের কর্তৃত্ব বিদেশিদের কাছে চলে যাচ্ছে কি না—অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক অন্তর্বর্তী সরকার তার অ্যাজেন্ডার বাইরে গিয়ে অনেক কাজ করছে বলে অভিযোগ করে বলেন, ‘চট্টগ্রামে উচ্চ আদালতের রায়ে একজন মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। একই উচ্চ আদালতের রায়ে বিএনপির ইশরাক মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। কিন্তু সেটি নিয়ে কয়েক দিন ধরে ঢাকা শহরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রিট করা হয়েছে। তার মানে আইন কি একেক শহর বা ব্যক্তির জন্য একেক রকম?’

সাইফুল হক আরও বলেন, ‘একটা মব সন্ত্রাস করে, ভায়োলেন্স করে গোটা জায়গাকে পরিবর্তন করে ফেলা হচ্ছে। আগে সামাজিক নৈরাজ্যের জায়গায় এখন রাজনৈতিক নৈরাজ্যের মদদ জোগানো হচ্ছে। এই নৈরাজ্য যদি সরকার চলতে দেয়, কোথায় তারা শেষ করবে আমি জানি না। আমি ১০ মাস পর বলতে পারছি না, বিচার কখন দৃশ্যমান হবে, সংস্কার কবে হবে সরকারও পরিষ্কার করে বলতে পারছে না, রাজনৈতিক দলও বলতে পারছে না।’

মিয়ানমারে করিডর বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও জনগণের সঙ্গে সরকারের খোলাখুলি কথা বলা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এটি নিরাপত্তাব্যবস্থাকে কতটা সাহায্য বা বিপজ্জনক করে তুলবে, সেটির বাস্তব বিশ্লেষণ হওয়া উচিত। দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়, এমন কিছু দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশরেকা অদিতি হক, লেখক অনিন্দ্য আরিফ, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, কবি মোহন রায়হান ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুন নুর প্রমুখ।