
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়া। দায়িত্ব পালন করছেন নিরাপত্তা প্রধান হিসেবেও। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা তদারকির পাশাপাশি তার রয়েছে সুদের ব্যবসা। ১০ হাজার টাকা এক সপ্তাহের জন্য নিলে বিনিময়ে সুদ দিতে হয় এক হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাঙ্গনে ডেপুটি রেজিস্ট্রারের সুদের ব্যবসা পরিচালনা ওপেন সিক্রেট হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে নেয়নি কোনো ব্যবস্থা। যার ফলে অপকর্ম ছাড়তে পারেননি তিনি। এবার ঘুষ লেনদেনের ভিডিও প্রকাশ হওয়ায় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মঙ্গলবার (২০শে মে) তাকে এ বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়।
জানা গেছে, সুদের ব্যবসা, দোকানপাট, সবজি ও ফল বিক্রেতাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় তাকে নিরাপত্তা দপ্তরের দায়িত্ব থেকে বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু উপাচার্য পদে প্রফেসর ড. আবু তাহের পদায়ন হওয়ার পরদিন গোলাম কিবরিয়াকে নিরাপত্তা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেন। আবু তাহেরের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাকে এ পদে পদায়ন করা হয়। উপাচার্য আবু তাহেরের প্রশ্রয়ে ক্যাম্পাস জুড়ে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন কিবরিয়া। সুদের ব্যবসা চালু করেন পুনরায়। উপাচার্য আবু তাহেরের বাংলোতে প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার নিজ বাসা থেকে রান্না করে পৌঁছে দিতেন তিনি। তৎকালীন প্রক্টরিয়াল বডিও কয়েক দফা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান উপাচার্য আবু তাহেরকে। কিন্তু আবু তাহেরের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় প্রক্টরিয়াল বডির অভিযোগ ধোপে টিকেনি। প্রক্টরিয়াল বডিকে তার বিষয়ে ‘চুপচাপ’ থাকার নির্দেশনা দিয়েছিলেন উপাচার্য আবু তাহের।
পরবর্তীতে সুদের ব্যবসার প্রকাশ্যে অভিযোগ ওঠায় বিগত প্রশাসন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন সিরাজ উদ দৌলাকে আহ্বায়ক এবং সহকারী প্রক্টর রিফাত রহমান ও সহকারী রেজিস্ট্রার আসাদুল হককে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি করে। কিন্তু এই কমিটিকে রিপোর্ট প্রদান করতে নিষেধ করেন উপাচার্য আবু তাহের।
জানা গেছে, গত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নিরাপত্তা দপ্তরে ডেপুটি রেজিস্ট্রার কিবরিয়া ও ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা দপ্তর ঘিরে সুদের ব্যবসার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি সুদের ব্যবসার চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত বছরের ১৯শে মে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা দপ্তরে বহিরাগত বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদান করতে যায় কিছু শিক্ষার্থী। এ সময় তারা নিরাপত্তা দপ্তরের দ্বিতীয় তলায় ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের টেবিলে বেশ কিছু চেক দেখতে পান। এ ঘটনার পর নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ডেপুটি রেজিস্ট্রারের কিবরিয়ার সুদের ব্যবসা উঠে আসে। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানায়, নিরাপত্তা দপ্তরের ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌস সুদের ব্যবসা পরিচালনা করে। এ কাজে মূল বিনিয়োগ রয়েছে নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কয়েকজন কর্মচারী জানান, ১০ হাজার টাকা এক সপ্তাহের জন্য নিলে বিনিময়ে সুদ দিতে হয় এক হাজার। ১ লাখ টাকায় সপ্তাহ শেষে সুদ দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের কাছ থেকে এই সুদের হারে ঋণ নিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা। ২০ হাজারের উপরে ঋণ নিতে গেলে অনুমোদন লাগে ডেপু রেজিস্ট্রার কিবরিয়ার। ঋণ গ্রহণের সময় নির্দিষ্ট অঙ্কের চেক নিয়ে থাকে ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌস।
সুদের এই ব্যবসা গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে ‘ওপেন সিক্রেট’। মাঝেমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা দপ্তরে সুদ আদায় নিয়ে দ্বন্দ্ব হলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার কিবরিয়ার নেতৃত্বে বসতো বৈঠক। সুদ আদায়ে নিরাপত্তা প্রধান হিসেবে অসহায় কর্মচারীদের ওপর ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপ তৈরি করার অভিযোগও রয়েছে কিবরিয়ার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৯শে মে ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ চেক পাওয়া যায়। এই চেকের সূত্র ধরেই খোঁজ নিতে গেলে বেরিয়ে আসে নিরাপত্তা দপ্তরে কিবরিয়া ও ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের সুদের ব্যবসার আদ্যোপান্ত।