
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নাজনীন নাহার মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য আবেদন করায় শিক্ষাকর্মকর্তার হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু আবেদন মঞ্জুর না করাই নয়, ছুটি ও বেতন সংক্রান্ত তথ্য জানতে গেলে শিক্ষিকার স্বামীকে অফিসে গিয়ে অপমানজনক আচরণের মুখোমুখি হতে হয়।
২০১৩ সাল থেকে বিদ্যালয়ে কর্মরত নাজনীন নাহার জানান, ২০২৪ সালের জুনে ভারতের চেন্নাই থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে জানতে পারেন, তিনি যমজ সন্তান গর্ভে ধারণ করেছেন। এরপর গর্ভকালীন জটিলতায় চিকিৎসকের পরামর্শে পূর্ণ বিশ্রামের প্রয়োজন হলে কয়েক দফায় ছুটির আবেদন করেও তা অনুমোদন পাননি। এতে ছুটির কোনো অফিসিয়াল আদেশ না থাকায় কয়েক মাসের বেতন ও অন্যান্য বিলও বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ২৫ নভেম্বর মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করেন তিনি। তবে কিছুদিন পর তাকে জানানো হয়—তার আবেদনপত্র অফিস থেকে হারিয়ে গেছে। এ অবস্থায় তার স্বামী চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের প্রভাষক মো. রায়হান উদ্দীন ছুটি বিষয়ে জানতে অফিসে গেলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ভূঁইয়া তাকে প্রশ্ন করেন, ‘বাচ্চা নিতে হবে কেন?’ এমনকি চাকরি করবেন কি না—তা নিয়েও কটাক্ষ করেন।
রায়হান জানান, তার স্ত্রী উচ্চ রক্তচাপ ও প্রি-এক্লেমশিয়ায় ভুগছিলেন, যার ফলে যমজ সন্তানের জন্মের পর নবজাতকদের ২৮ দিন এনআইসিইউতে এবং স্ত্রীরও হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। এতকিছুর পরও তারা ছুটি বা বেতন-বিল পাননি। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় শিক্ষা কর্মকর্তা তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। যদিও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল্লাহ কাউসার দুঃখ প্রকাশ করেন, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি।
শিক্ষিকা নাজনীন আরও অভিযোগ করেন, বিষয়টি সরকারি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তুলতেই তাকে গ্রুপ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার ভাষায়, ‘একজন মা হয়ে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে আমাকে এত ভোগান্তি পোহাতে হলো, স্বামীকেও অপমান সহ্য করতে হয়েছে। সরকারি চাকরিতে থেকেও আমার ন্যায্য ছুটি ও বেতন পেতে বারবার আবেদন করতে হয়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’
জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি। এতে করে কাজে ফেরার বিষয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন নাজনীন।
এ বিষয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ভূঁইয়া ফোন রিসিভ করেননি। জানা গেছে, তিনি সাধারণত সাংবাদিকদের ফোন ধরেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার জানান, বিষয়টি আমার জানা আছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কেন ছুটি অনুমোদন হয়নি, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আবদুর রব বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা উপজেলা অফিসকে ছুটি মঞ্জুরের নির্দেশনা দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আর কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি।